এজন্যেই তোমাকে সময়মতো অজির হতে দেখেও অবাক হয়নি ভারিপদ, মুসা বললো।
হ্যাঁ, মাথা বাঁকালো রবিন। হবে কি? সে তো কিছু জানেই না। মড়ার খুলি জানে বলেই অবাক হয়েছে।
ঠিক,কলে হোফারের দিকে তাকালে কিশোর। এখানেই তোমার সাহায্য আমাদের দরকার।
গোয়েন্দা কাহিনী পড়তে ভালো লাগে আমার, মনে হয় গোয়েন্দাগিরি করতেও ভালোই লাগবে, হোফার কললো। কিন্তু এখনও বলেনি আমাকে কি করতে হবে।
ওদেরকে অনুসরণ করতে চাই, অবশেষে বললো কিশোর। দেখবো, দেখা করে কিনা। আজ আবার সাউন্ড স্টেজে যায় কিনা।
বেশ উঠে দাঁড়ালো হোফার। কোনখান থেকে ওরু করবো?
এটাই হলো আসল কথা, বসে থেকেই হোফারের দিকে তাকালো কিশোর। তোমার সাহায্যটা ওখান থেকেই শুরু মড়ার খুলি আর ভারিপদ কোথায় থাকে জানি না আমরা। ওদের ঠিকানা না পেলে কোনখান থেকে যে শুরু করবো, তা-ও বলতে পারবে না।
আমিও তো জানি না, মাথা নাড়লো হোফার। দুজনের কেউই আমাদের কোম্পানিতে কখনও গাড়ি ভাড়া নিতে আসেনি, কারণ ওদের নিজেদের বাহন আছে। মড়ার ধূলির আছে একটা ব্রিটিশ ঘাতখোলা স্পোর্টস কার। ভারিপদর আছে মোটর সাইকেল।
স্টুডিওর গেটের গার্ড জানতে পারে। মনে করিয়ে দিলো কিশোর, আমার ঠিকানা তো জানে। প্রথম দিন ঢোকার আগে একটা লিস্ট ছিলো ওর হাতে। নিশ্চয় মড়ার খুলি আর ভারিপদরও আছে। তবে মনে হয় জিজ্ঞেস করলেই দিয়ে দেবে।
দেবে কি? আমাকে আর মুসাকে তো ঢুকতেই দিলো না, রবিন কললো। ভীষণ
কড়া।
এক মুহূর্ত ভালো হোফার। চেষ্টা করে দেখতে পারি। গার্ডকে গিয়ে বলবে, আমাকে বলা হয়েছে সমস্ত পাগলকে এখানোতে, একটা বিশেষ মীটিঙের জন্যে। আমাকে চেনে সে।
ক্যাপ তুলে নিয়ে মাথায় দিলে সে। হয়তো কাজ হয়ে যাবে। এসো।
স্টুডিওর গেট থেকে খানিকটা দূরে তিন গোয়েন্দাকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে গেল হোফার। অহেতুক দাঁড়িয়ে না থেকে হালকা নাস্তা করার জন্যে একটা স্ন্যাকবারে ঢুকলো ওরা। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। একটু পরেই হাসিমুখে ফিরে এলো ফোর। কাজ হয়ে গেছে।
একটা কাগজে সমস্ত পাগলদের ঠিকানা লিখে এনেছে সে, তার মধ্যে কিশোরের ঠিকানাও রয়েছে। হ্যামবার্গার চিবাতে চিবাতে ঠিকানাগুলো দেখলো কিশোর। নেলি থাকে সাম্ভ মনিকায়। শিকারী কুকুর থাকে বাবার সঙ্গে বেভারলি হিল-এ। মড়ার খুলি আর ভারিপদর অ্যাপার্টমেন্ট হলিউডে।
মড়ার খুলিকে দিয়েই শুরু করা যাক,কিশোর বলো। দাঁড়াও, বলতে বলতে পেট থেকে আরেকটা হ্যামবার্গার তুলে নিলো মুসা, আগে ডান হাতের কাজটা সেরে নিই।
হোফারও একটা স্যাণ্ডউইচ নিলো। খাওয়া শেষ হলে আবার বেরিয়ে পড়লো ওরা।
হলিউড বুলভার থেকে বেশি দূরে না মড়ার খুলির বাসা। বাড়িটার নাম ম্যাগনোলিয়া আর্মস, লা পামা স্ট্রীটে। মোটেলের মতো দেখতে লাগে অ্যাপার্টমেন্ট হাউসটাকে। খোলা চত্বরে, মুখোমুখি দুই সারি কাঠের কেবিন। এর পরে রয়েছে গাড়ি পাকার হাট জায়গা।
রাস্তায়ই গাড়ি রাখলো হোফার। চত্বরে ঢুকে পড়লো তিন গোয়েন্দা। অন্ধকার। কয়েকটা কেবিনের জানালায় আলো দেখা যাচ্ছে।
মড়ার ধূলির বাসার নম্বর ১০। চত্বরের শেষ ধারে পাওয়া গেল কেবিনটা, পর্দা টানা থাকা সত্ত্বেও ভেতর থেকে হালকা আলো আসতে দেখা গেল। বোধহয় বাড়িতেই রয়েছে মড়ার খুলি।
ঘাসে ঢাকা চত্বরের ওপর দিয়ে সেদিকে এগোলো তিনজনে। দশ নম্বরের দরজাটা মুখ করে রয়েছে বিরাট একটা ম্যাগনোলিয়ার ঝাড়ের দিকে। অন্ধকারে ওটার আড়ালে লুকিয়ে পড়ে দরজার দিকে চোখ রাখলো তিন বন্ধু।
দরজার ওপরের অংশ কাঁচে তৈরি। পর্দা না লাগিয়ে খড়খড়ি লাগানো হয়েছে সেখানটায়। খড়খড়ির কয়েকটা পাত বেঁকে গেছে। কাঁচের গায়ে নাক ঠেকিয়ে ওই ফাঁক দিয়ে ভেতরে দেখা সম্ভব।
মুসা, তোমার কাজ, কিশোর বললো। তুমি বেশি লম্বা।
দীর্ঘশ্বাস ফেললো মুসা। বিপজ্জনক কাজ করার জন্যে এরকম নির্দেশ অনেক পেয়েছে গোয়েন্দাপ্রধানের কাছ থেকে, অন্যান্য কেসে। তবে প্রতিবাদ কিংবা তর্ক করলো না। নিঃশব্দে উঠে পা টিপে টিপে এগিয়ে গেল দরজার দিকে।
ম্যাগনোলিয়ার ঝাড় আর দরজায় মাঝে একচিলতে ঘাসে ঢাকা জমি। কয়েক পা এগিয়েই হুমড়ি খেয়ে ঘাসের ওপর শুয়ে পড়লো মুসা। পারলে ঢুকে যেতে চায় মাটির ভেতরে।
মড়ার খুলির ঘরের দরজা খুলে যাচ্ছে।
ভেতরের আলোর পটভূমিকায় দেখা গেল চামড়ার জ্যাকেট পরা লম্বা শরীরটা।
যে কোনো মুহূর্তে তাকে দেখে ফেলতে পারে, মুসা ভাবলো। মাত্র কয়েক মিটার দূরে শুয়ে আছে সে।
বিকেলে কিভাবে কিশোরের হাত খামচে ধরেছিলো, মনে পড়লো তার। ওদেরকে এখন গোয়েন্দাগিরি করতে দেখলে ভীষণ খেপে যাবে সে। হয়তো বিপজ্জনক হয়ে উঠবে।
পেহনের আলোকিত ঘরের দিকে ফিরে তাকালো মড়ার খুলি। ডাকলো, এই, এসে, লম্বা চুলে চিরুণি চালালো সে। যাবার সময় হয়েছে।
মুঠো শক্ত হয়ে গেছে কিশোরের। একা মড়ার খুলির সঙ্গে লাগতে যাওয়াই বিপজ্জনক, তার ওপর যদি তার সহকারী থেকে থাকে তাহলে তিনজনে মিলেও ওদের সঙ্গে পারবে না।
হোফার সাথে থাকলে ভালো হতো, ভাবলো সে। কিন্তু তাকে দেখাই যাচ্ছে না এখান থেকে। ডাকলেও নেবে না, অনেক দূরে রয়েছে।
নীল জিনস আর ডেনিম শার্ট পরা আরেকজন এসে দাঁড়ালো মড়ার খুরি পাশে। দরজার পাশে হাত বাড়ালো মড়ার খুলি। সুইচ টিপে আলো নিভিয়ে দিলো কেবিনের। বেরিয়ে এসে বন্ধ করে দিলো দরজা। অন্ধকারে হাঁটতে শুরু করলো।