ও-কে, দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো কিশোর, রবিন, টিভিটা ছেড়ে দাও।
বিজ্ঞাপন দেখা গেল পর্দায়। সেটা শেষ হতেই মোটুরাম উদয় হলো, অনুরোধ করলো সে, নিয়ে তলো, প্রীত, নিয়ে তলো আমাকে!
অন্য পাগলরা সবাই মাথা নাড়লো। আইসক্রীম কিনতে শহরে যাচ্ছে ওরা। একটা বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে ওদের নেই।
কিন্তু ওকে এখানে একা ফেলে যাই কি করে, নেলি বললো। বেচারা।
বেশ, তাহলে থাকো তুমি ওর সাথে,মড়ার খুলি বললো।
কিন্তু নেলি থাকতে চায় না। অবশেষে ঠিক হলো ওদের জন্যে অনেক আইসক্রীম নিয়ে আসা হবে।
আত্থা,মোটুরাম বললো, এনো তাহলে। অনেক, অনেক বেতি আইতক্রীম।
মড়ার খুলি আর শজারুকাঁটা রওনা হলো। পথে শজারুকে ফাঁকি দিয়ে আরেক দিকে চলে গেল মড়ার খুলি। কি আর করে বেচারা শজারু, মনের দুঃখে ফিরে এলো আবার।
এই ছবিটাতেই রয়েছে জনাব গণ্ডগোল আর তার গাড়িভর্তি চোরাই রেডিও। গাড়ি পাহারা দিতে রেখে গিয়েছিলো কয়েক পাগলকে। আর বিনিময়ে দিয়েছিলো একটা ডলার। সেই টাকা দিয়েই আইসক্রীম কিনে খাওয়ার কথা। পুরনো পিয়ার্সঅ্যারো কনভার্টিবল গাড়িটা ঘিরে দুষ্টুমি কহে পাহারাদাররা, একে অন্যের পিছে লাগছে, আর জনাব গণ্ডগোল গেছে ফোন করতে, এই সময় এলো পুলিশ। পাহারাদার পাগলদেরকেও থানায় ধরে নিয়ে গেল।
যাই হোক, ফিরে এসে রান্নাঘরে নিজেই আসক্রীম বানাতে কালো শজারুফাটা। তাকে সাহায্য করলো মোটুরাম। তাকে চিনি আনতে বললে আনে নুন, ময়দার কথা বললে আনে সুজি। ভালোই জমিয়েছে।
ওদিকে পুলিশের কাছ থেকে আবার গাড়িটা চুরি করে নিয়ে পালালো জনাব গণ্ডগোল। তাড়া কালো পুলিশ। ওদের গাড়িতে বসে আনন্দে চেঁচাতে লাগলো পাগলেরা।
উঠে গিয়ে টিভি বন্ধ করে দিলো কিশোর।
এতৃহে, এটা কি করলে? প্রতিবাদ জানালো মুসা। জনাব গণ্ডগোলকে ধরতে পারবো কিনা সেটাই দেখতে দিলে না।
ধরতে পারবে না, কিশোর কলো। একই অভিনেতাকে আরেকবার ব্যবহার করতে চেয়েছে পরিচালক। আরেকটা সিরিজে শজারুকাঁটাকে ভাড়া করে জনাব গণ্ডগোল, একটা কুকুর চুরি করার জন্যে। কাজেই কামনা করে তাকে পুলিশের হাত থেকে বাঁচাতেই হয়েছে পরিচালককে।
রিসিভার তুলে একটা নম্বরে ডায়াল করলো সে। হালো, মিস্টার হোফার?…কিশোর পাশা-কাছি। এবার আসতে পারবেনইয়ার্ডে?…হ্যাঁ হ্যাঁ, যতো জলদি পারে।
আবার কোথায় যাচ্ছি? কিশোর রিসিভার রাখলে জিজ্ঞেস করলো রবিন।
কোথাও না, আনমনে বললো কিশোর। কাপওলো কে চুরি করেছে এটা জানতে হলে একজন বন্ধু দরকার আমাদের, যাতে কেউ সন্দেহ করবে না।
আর কোনো প্রশ্ন ব দিলো না সে। হেডকোয়ার্টার থেকে বেরিয়ে এলো ওরা।
গেটের কাছে এসে থামলো লিমুজিন। নিলামে পুরনো মাল কিনতে গেছেন মেচিাচী আর রাশেদ চাচা। হোফারকে ঘরে ডেকে নিয়ে এলো কিশোর।
খোলামেলা সুর রান্নাঘরটায় কালো ওর। চুলায় কফির পানি চাপলো কিশোর। হোফারের জনে। তিন গোয়েন্দর জন্যে বের করলো সোডার বোতল।
কুইজ শো দিয়ে আলোচনা শুরু করলো কিশোর। গাড়িটা কান্ত্র তৈরি সেটা আমাকে বলেনি ওরা, বেঁচেছি। আমি জানি না এর জবাব।
জানেন না? অবাকই মনে হলো যেন হেফারকে। সব প্রশ্নের উত্তরই তো দেখলাম জানা আপনার।
যা, কিশোর কালো। তবে গাড়ির দৃশ্যটায় আমি ছিলাম না। মড়ার খুলি, শিকারী কুকুর আর অন্যেরা ছিলো। আমার মনে হয় গাড়িটা কার তৈরি সেটা মিস্টার সাইনাসকে জিজ্ঞেস করেছিলো মড়ার খুলি, সেজন্যেই বলতে পেরেছে ওটা পিয়ার্সঅ্যারো। কিন্তু ওই গাড়িটা তখন আমি দেখিইনি।
হ্যাঁ, তা ঠিক, শোফার বললো। আপনি ডাকার আগে এই ছবিটাই দেখছিলাম। হাসলো সে। আপনি আর শজারুকাঁটা ঘরে বসে আসক্রীম বানাচ্ছিলেন।
পানি ফুটেছে। কাপে ঢেলে তাতে কফি আর চিনি মিশিয়ে হোফারের দিকে ঠেলে দিলো কিশোর। জিজ্ঞেস করলো, পুরনো এই সিরিজটা বুঝি খুব পছন্দ আপনার?
শ্রাগ করলে হোফর। ঠিক পছন্দ করি বলা যাবে না। বেশি ভাড়ামি। তবে মাঝে মাঝে বেশ হাসায়।
ঠিকই বলেছেন, ভাড়ামি বেশি। তবে পরিচালওে উদ্দেশ্য ছিলো সেটাই, তাই না? আমাদেরকে বেশি বেশি পাগলামি করতে বলেছেন, ছবির নামের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্যে। মড়ার খুলিকে দিয়ে কান নাড়িয়েছে। কুকুরের মতো জিভ বের করে রাখতে বলেছেন শিকারী কুকুরকে। আমাকে বলেছেন জিভে জড়িয়ে কথা ঝলতে। ভারিপদর পায়ের পাতা এমনিতেই বড়, তার ওপর বড়দের জুতো পরিয়েছেন। শজারুকাঁটার চুল খাড়াই, স্পেশাল কিছু করতে হয়নি তার জন্যে। তবে তাকে সুর করে কথা বলতে বলা হয়েছে মামি বোঝানোর জন্যে।
এক মুহূর্ত থামলো কিশোর। তারপর শজারুকাঁটার স্বর অবিকল নকল করে একটা সংলাপ বললো।
হেসে উঠলো হোফর। দারুণ করতে পারেন তো!
টেবিলে দুই রেখে সামনে ঝুঁকলো কিশোর। এখন এসব শুনলে রাগ লাগে, এত্তে ন্যাকামি। তাই না? অন্তত আমার লাগে।
তা কিছু কিছু যে লাগেনা তা নয়,কফির কাপে শেষ চুমুক দিয়ে কাটা নামিয়ে রাখলো থোফর। চলুন, যওয়া যাক। কোথায় কেন?
আপাতত কোথাও নয়। হাত ঝড়িয়ে দিলে কিশোর। নি, হাত মেলান।
হাঁ করে তাকিয়ে রইলো মুসা আর রবিন। কি কলহে কিশোর? কি সুতে চাইছে?
হাতটা বাড়িয়েই রাখলে কিশোর, যতক্ষণ না হোফার তার সঙ্গে হাত মেলালো। তারপর হাসি হাসি গলায় কালো গোয়েন্দাপ্রধান, তোমর সঙ্গে আবার দেখা হওয়ায় খুব খুশি হলাম, শজারু। তুমি করে বললাম, আশা করি কিন্তু মনে করোনি। আগেও তো তুমি করেই বলতাম।
১০
চিনেই ফেললে তাহলে, হেফার কললো। অন্য পাগলদের চেয়ে আমাকে নাকিই বলতে পারো, অন্তত মড়ার খুলির চেয়ে তো বটেই। আমার মা নাম সিনেমায় কক্ষণো ব্যবহার করিনি। তাছাড়া কথা বলতাম সুর করে। অভিনয় ছেড়ে দেয়ার পর চুল লম্বা করে ফেললাম, ফলে কাটার মতো আর দাঁড়িয়ে থাকলো না, অনেক নুয়ে পড়লো। আমার আসল গা এনে শজাগল বলে বুঝতে পারলো না কেউ। চিনতে পারলো না। কাজেই ইস্কুলে কোনো অসুবিধে হয়নি আমার।