বলো কিশোর, রকিন শুরু করলো, শেষ করলো মুসা, রহস্যটা কি?
রহস্যটা হলো, অনেক দূর থেকে যেন ভেসে এলো কিশোরের কণ্ঠ, পাগল সংঘের ব্যাপারে একজন সাধারণ শোফারের আগ্রহী হওয়ার কারণ কি?
৯
যাদেরকে সন্দেহ করি, কিশোর কললো। এক নম্বর, একটা আঙুল তুললো সে, ভারিপদ।
হেডকোয়ার্টারে আলোচনায় বসেছে তিন গোয়েন্দা। টেলিভিশন স্টেশন থেকে ফিরে সোজা এসে ঢুকেছে এখানে।
ভারিপদ,আবার বললো কিশোর, তার সম্পর্কে কি কি জানি আমরা?
জবাব পেলো না সে। আশাও করেনি পাবে। আসলে মনে মনে না ভেবে জোরে জোরে ভাবছে। ধরে নিতে পারি কাপগুলো সে চুরি করেছিলো। চুরি অবশ্য অন্যেরাও করে থাকতে পারে। টেবিল ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমরা। কিচেন সেটের কাছে অনেক লোক ছিলো, ওয়েইটার, ইলেকট্রিশিয়ান, ক্যামেরাম্যান। যে কেউই রান্নাঘরের পেছন দিয়ে ঘুরে গিয়ে কাপগুলো সরিয়ে থাকতে পারে। দুই-তিন মিনিটের জন্যে আমাদের কেউ ওখান থেকে সরে থাকলেও কারো নজরে পড়ার কথা ছিলো না।
মড়ার খুলি, সামনে ঝুঁকলো রকিং চেয়ারে বসা মুসা। ওই ব্যাটাকেই আমার সন্দেহ।
হাত তুললো কিশোর, বুঝিয়ে দিলো, রাখো, আগে আমার কথা শেষ করি। ভারিপদকে নিয়ে আলোচনা শেষ করি, তারপর অন্যদের কথা। রাফায়েল সাহ সন্দেহ আরিপদকে। রাতের বেলা ওকে নয় নম্বর স্টেজের কাছে ঘুরঘুর করতে দেখেছেন তিনি। তার ধারণা, চোরাই কাপগুলো বের করে নিতে এসেছিল ভারিপদ। তাঁর দেখে সরে পড়েছে। তাঁর অনুমান ছিলো, আবার গিয়ে ওখানে হানা দেবে সে। হয়তো ঠিকই আন্দাজ করেছেন। আজ সকালে, এগারোটা পঁয়তাল্লিশ মিনিটে মোটর সাইকেলে করে স্টুডিওর দিকে রওনা হয়েছিলো সে। আমি তার পিছু নিয়ে তার আগেই ওখানে পৌঁছুলাম। আমাকে স্টেজের ভেতরে ঢুকতে দেখে বোধহয় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলো ভারিপদ, বাইরে থেকে তালা আটকে দিয়েছিলো…
পরিষ্কার হচ্ছে, মাথা দোলালো রবিন।
হয়তো। নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটলো কিশোর। হেঁড়া সূত্রের অনেকগুলো মাথা জোড়া দেয়া বাকি এখনও। কারণ, তার মনে হচ্ছে, যে-ই তাকে স্টেজের ভেতরে আটকেছে, মোটেই আতঙ্কিত হয়ে নয়, অন্য কোনো জোরালো কারণ ছিলো। তাকে কুইজ শো থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্যে হতে পারে। আর কুইজ শোতে জেতার ব্যাপারে ভারিপদর কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। জিততে পারবে একথা নিশ্চয় ভাবেওনি সে।
কাকতালীয় ঘটনা ঘটেছে, এটাও বিশ্বাস করতে পারছে না কিশোর। মোটর সাইকেলে চড়ে ভারিপদর স্টুডিওতে যাবার ব্যাপারটা কাকতালীয় হতে পারে না।
দুই নম্বর সন্দেহ, দুটো আঙুল তুললো কিশোর।
মড়ার খুলি, বলে দিলো মুসা।
হ্যাঁ, মড়ার খুলি। ওই ব্যাটা যথেষ্ট সেয়ানা। লোভী। টাকার জন্যেই এই কুইজ শোর ধারণাটা হারিস বেকারের মাথায় ঢুকিয়েছে কিনা কে জানে? শুধু আলোচনার জন্যেই একশো ডলারের জন্যে কি-রকম চাপাচাপি করছিলো। বাজি জেতার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠছে। আমার অভিনয় বুঝে ফেলেছে সে, আমার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছে।
কি করে জানলে? রকিন জিজ্ঞেস করলো।
শো-এর শেষে আমাকে ধরেছিলো ব্যাটা, অন্যমনস্ক হয়ে গেল কিশোর। কোথায় যেন ছিলাম? ও, হ্যাঁ। সুতরাং মড়ার খুলি যদি আমাকে দেখেই থাকে নয় নম্বর স্টেজের দিকে যেতে, তাহলে কেন একজন বিপজ্জনক প্রতিযোগীকে সরিয়ে রাখার সুযোগটা গ্রহণ করবে না? এবং শেষ মুহূর্তে যখন শো-এর স্টেজে হাজির হয়ে গেলাম, আমাকে দেখে তার চমকে যাওয়াটাও স্বাভাবিক। তাকে দেখে যে অস্বস্তি বোধ করছিলো মড়ার খুলি, সেকথা ভাবলো কিশোর। কিন্তু তখন মুভি স্টুডিওতে কি করছিলো সে ভারিপদর সঙ্গে একই সময়ে?
কোনোভাবে চলে গিয়েছিলো আরকি, রবিন বললো, তাই না?
না, জোরে মাথা নাড়লো কিশোর। কাকতালীয় ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হয় না আমার।
এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে ভালো সে। তারপর তিনটে আঙুল তুললো, সন্দেহ নম্বর তিন, আলউড হোফার।
উঁইঁ, এবার মাথা নাড়লো রবিন, আমার তা মনে হয় না। ওই লোকটার চোরের মতো স্বভাব নয়।
হয়তো। মনে মনে রবিনের সঙ্গে একমত হলেও মুখে বললো, তবে দেখে চোরের মতো না লাগলেও চোর হবে না এমন কোনো কথা নেই। আলোচনা প্রশ্ন আগে তাকে দেখেছি আমি। কাপ আর অব্যবহৃত আর্ক লাইটগুলো যেদিকে ছিলো সেদিকে গিয়েছিলো সে। পাগল সংঘের ব্যাপারে খুব বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে সে। কুইজ শো দেখার জন্যে টিকেট চেয়ে নিয়েছে আমার কাছ থেকে। হাতে ক্লিপবোর্ড নিয়ে এসে বসেছে শো দেখতে, প্রশ্নের জবাব লিখেছে প্রতিযোগীরা জবাব দেয়ার আগেই। মনে থাকার কথা নয় এরকম একজন অভিনেতার নাম মনে রেখেছে। পাগল সংঘের ব্যাপারে এতো আগ্রহ, অথচ এটা আবার বুঝতে দিতে চায় না কাউকে। নয় নম্বর স্টেজ যে চেনে, সেটা জানতে দিতে চায়নি, থেমে গেল কিশোর। তাকালো দুই সহকারীর দিকে। আমার বিশ্বাস অনেক কিছুই জানে সে, যা হয়তো আমরা জানি না।
হঠাৎ ঘড়ির দিকে চোখ পড়তে লাফিয়ে উঠলো মুসা, ওরেব্বাবা, চারটে বেজে গেছে!
টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে অস্বস্তি ফুটলো কিশোরের চোখে। এখন পাগল সংঘ সিরিজের আরেকটা ছবি দেখানোর কথা। মোটুরামের দিকে তাকিয়ে আবার কষ্ট পাওয়ার পালা কিছুক্ষণ। তবে আগামী দিনের কুইজ শোর ব্যাপারে কিছু সাহায্যও করতে পারে ছবিটা। প্রতিযোগী হিসেবে হব্বি প্রতিটি দৃশ্য খুঁটিয়ে দেখা এখন তার হোমওয়ার্ক বলা চলে।