দ্বিতীয় দফা প্রশ্ন শুরু হলো। নেলি আর মড়ার খুলির জবাব ঠিক হলো। আবারও ভুল করলো শিকারী কুকুর। কিশোরের আগে হাত তুলে ফেললো মড়ার খুলি, ফলে পাঁচটা নম্বর বাড়তি পেয়ে গেল ঠিক জবাব দিয়ে। ভারিপদও ভুল করলো, তবে এবারে আগে হাত তুলে ফেললো কিশোর। সে পেলো বাড়তি পাঁচ নম্বর।
প্রতি রাউন্ড প্রতিযোগিতার এই সময় নিয়ে নম্বর পড়ছে বেকার। পড়ার সময়ও সারাক্ষণ তাকিয়ে থাকছে ক্যামেরার দিকে, হাসছে, রসিকতা কমছে দর্শকদের সঙ্গে তখনও ক্যামেরার দিকে চোখ।
পঞ্চম এবং শেষ রাউন্ডের শুরুতেও মড়ার খুলির চেয়ে পাঁচ নম্বর এগিয়ে রইলো কিশোর। নেলির চেয়ে দশবেশি। শিকারী কুকুর আর ভারিপদ প্রায় বাতিল হয়ে গেছে।
প্রশ্ন শুরু হলো। নেলিকে জিজ্ঞেস করলো বেকার, আগন্তুকের গাড়ির সন্দেহজনক ব্যাপারটা কি?
গাড়ি বোঝাই চোরাই রেডিও।
ঠিক। বটিসুন্দরী আরও পাঁচ নম্বর পেলো।
দর্শকদের হাততালি।
মড়ার খুলিও পাঁচ নম্বর পেলো।
শিকারী কুকুরকে একটা সহজ প্রশ্ন করা হলো এবারে। গাড়ির ওপর চোখ রাখার জন্যে কয় ডলার দেয়া হয়েছিলো?
এক ডলার।
ঠিক আছে।
মৃদু হাততালি।
এবারে এমনকি ভারিপদও সঠিক জবাব দিয়ে ফেললো। আগন্তুক সেজে আসা লোকটার নাম পাগল সংঘে কি ছিলো, জিজ্ঞেস করা হয়েছে তাকে। বলে দিলো, জনাব গণ্ডগোল।
এরপর কিশোরের পালা। প্রথম কুইজ শোর শেষ প্রশ্ন। জনাব গণ্ডগোল সেজেছিলো যে তার নাম কি?
প্রশ্নটা করা উচিত হয়নি বেকারের। কারণ মনিটরে দেখানো ছবির সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই, ছবিতে কোথাও বলা হয়নি অভিনেতার নাম। বহু বহুর আগে অভিনয় করেহে কিশোর, তখন বয়েসও ছিলো তার খুবই কম, অভিনেতার নাম যদি মনে করতে না পারে তাকে দোষ দেয়া যাবে না, অথচ বেকারের এই ভুলের জন্যে পাঁচটা নম্বর হারাতে হবে তাকে।
জোরে জোরে হাত নাড়ছে নেলি আর মড়ার খুলি।
মাথা চুলকে মনে করার ভান করলো কিশোর। না জানার অভিনয় করে মড়ার খুলিকে বোকা বানাতে চাইছে। একটা মিউজিয়মে ডাকাতির তদন্ত করেছে তিন গোয়েন্দা, তখন পরিচয় হয়ে যায় ওই বয়স্ক অভিনেতার সঙ্গে, যে জনাব গণ্ডগোল সেজেছিলো পাগল সাথে। নামটা পরিষ্কার মনে আছে কিশোরের। কলবে কি বলবেনা ভাবতে ভাবতে বোকার হাসি হেসে বলেই ফেললো, ড্ডি-ড্ডি-ড্ডি-গার হ্যানসন।
রাইট।
উন্মাদ হয়ে গেল যেন দর্শকেরা। তুফুল হাততালি আর হৈ-হট্টগোল।
শো শেষ। মড়ার খুলির চেয়ে পাঁচ নর এগিয়ে রয়েছে কিশোর। সারি দিয়ে বেরিয়ে যেতে লাগলো দর্শকেরা। পরদিন দুপুরে ঠিক দুটোয় আবার এখানে হাজির হওয়ার অনুরোধ জানালো প্রতিযোগীদেরকে বেকার।
নেলির মুখ কালো। বেরিয়ে গেল সে। সেদিকে তাকিয়ে দুঃখই হলো কিশোরের, মেয়েটার জন্যে কিছু করার ইচ্ছে হলো তার। কিন্তু কি করবে? সে হয়েছে তৃতীয়, দ্বিতীয় হলেও নাহয় কিছু করা যেতো। ইচ্ছে করে ভুল করে মড়ার খুলিকে জিতিয়ে দেয়ার কোনো ইচ্ছেই তার নেই। মড়ার খুলিকে হারাতে এখন তাকেই জিততে হবে।
প্রায় শূন্য হয়ে গেল অডিটোরিয়াম। দর্শকরা বেরিয়ে গেছে। দাঁড়িয়ে থাকা দুই সহকারীর দিকে এগোলো কিশোর। স্টেজ পেরোনোর আগেই যেন স্প্রিঙের মতো ঝটকা দিয়ে হুটে এলো একটা হাত। খামছে ধরলো কিশোরের বাহু। কঠিন কণ্ঠে কললো, হুঁশিয়ার থেকো, মোটুরাম। তোমাকে আমি ভালো করেই চিনি। তোমার গোয়েন্দাবাহিনীর খবরও রাখি। বোকার ভান করে আমাকে ফাঁকি দিয়ে বিশ হাজার ডলার ছিনিয়ে নিতে আমি দেবো না তোমাকে কিছুতেই।
ফিরে তাকালে কিশোর। তার বাহুতে আরও শক্ত হলো মড়ার খুলির আঙুল। চিবিয়ে চিবিয়ে বললো, এখনও সময় আছে, কেটে পড়ো। আমার পথে কাঁটা হয়ো না, নইলে,কথাটা শেষ না করেই হঠাৎ হাত ছেড়ে দিয়ে গটমট করে হাঁটতে শুরু করলো সে।
ঘোরানো বারান্দায় কিশোকের জন্যে অপেক্ষা করছে মুসা আর রবিন। হোফার চলে গেছে গাড়ির কাছে।
মড়াটা কি বললো? জানতে চাইলো মুসা।
জবাব দিলো না গোয়েন্দাপ্রধান। রবিনকে কললো, রবিন, তুমি তো হোফারের পাশে বসেছিলে।
হ্যাঁ। তাতে কি?
ক্লিপবোর্ডে কি লিখছিলো?
তেমন কিছুনা। আগেই আন্দাজ করার চেষ্টা করেছে প্রশ্নের জবাব।
জবাবগুলো দেখেছো? ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো কিশোর। তার কণ্ঠস্বরেই বুঝে ফেললো রনি, কোনো একটা সুর পেয়ে গেছে গোয়েন্দাপ্রধান।
নিশ্চয়ই। সে নিজেই দেখিয়েছে। একটা বাদে সবগুলোর জবাব ঠিক হয়েছে।
কোনটা? আগ্রহে সামনে ঝুঁকে পড়লো কিশোর। ডিগার হ্যানসনের নাম? ওটা ভুল করেছে তো?
না, মাথা নাড়লো রবিন। জনাব গণ্ডগোলের গাড়িটা কেমন, সেটা ভুল করেছে। আর ডিগারহ্যানসনের নাম তো তুমি বলার অনেক আগেই লিখে রেখেছিলো।
রবিনের মুখের দিকে দীর্ঘ একমুহূর্ত তাকিয়ে থেকে মাথা ঝাঁকালো কিশোর। রবিন আর মুসা তাকে জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করলো, কিছু বুঝতে পেরেছে কিনা, কিন্তু সুযোগই দিলো না সে। হোফারের লেখার ব্যাপারে কেন আগ্রহী হয়েছে, সে-ব্যাপারে কিছুই বললো না ওদেরকে।
লিস্ট থেকে নেমে লবি পেরিয়ে বাইরে বেরোনোর পর আবার কথা বললো কিশোর। জবাবগুলো ঠিকমতো লিখতে পেরেছে তার কারণ, ছবিগুলো সে দেখেছিলো। বুদ্ধিমান লোক সে। কিন্তু একটা কথা বুঝতে পারছি না, চুপ হয়ে গেল সে।
কী? একইসাথে প্রশ্ন করলো দুই সহকারী।