উত্তেজিত ওজন শোনা গেল দর্শকদের মাঝে।
বেকার বললো, প্রতিটি প্রোগ্রামের শুরুতে পাগল সংঘ ছবির কিছু কিছু অংশ আমরা দেখাবো। মনিটরে আপনারও দেখতে পাবেন। স্টেজের এক কোণে রাখা দর্শকদের দিকে মুখ করে রাখা বড় একটা সিনেমা-পর্দা দেখালো সে। আর প্রতিযোগীরা দেখতে পাবে মাত্র একবার, এই যে এটাতে, আরেকটা পর্দা দেখালো সে। ওটা মুখ করে আছে পাগলরে দিকে।
মনে মনে বেশ উৎফুল হয়ে উঠেহেকিশোর। এইই ভালো হয়েছে। অন্য কোনো বিষয় পছন্দ করতে কলে, পছন্দ করতে গিয়ে বিপদেই পড়ে যেতে সে। কারণ কোনো বিষয়টা যে সে কম জানে নিজেরই জানা নেই। অসাধারণ স্মৃতিশক্তি তার। পর্দায় পাগল সংঘের ছবি দেখলে সব মনে থাকবে, সে নিশ্চিত, ভুল করবে না। একবার কেউ ভুল করলেই হয়, ভাবলো সে, সাথে সাথে সেটার জবাব দিয়ে নম্বরে এগিয়ে যাবে।
পাশে বসা প্রতিযোগীদের দিকে তাকালো সে। শুধুমড়ার খুলির মুখে হাসি।
তাহলে এবার শুরু করা যাক, বেকার বলছে। দেখি পাগলেরা কি করে। ইলেকট্রোনিক স্কোরবোর্ডের নিচের ডেস্কের ওপাশে সীটে গিয়ে বসলো সে।
শুরু হলো ছবি। পর্দার ওপর মনযোগ দিলো কিশোর।
গল্প নেই। টুকরো টুকরো অংশ তুলে এনে জোড়া দেয়া হয়েছে। লাফ দিয়ে একখান থেকে আরেকখানে চলে যাচ্ছে।
দেখা গেল, কেক বানানোর জন্যে ময়দা মাখাচ্ছে নেলি, তাতে বারুদ ঢেলে দিলো মাড়ার খুলি আর শিকারী কুকুর। ভারিপদর সাইকেলের চাকা থেকে বাতাস ছেড়ে দিহে শজারুকাঁটা। পাগলদেরই একজন মাঝবয়েসী লোক সেজে তার গাড়ি পাহারা দেয়ার জন্যে এক ডলার দিচ্ছে পাগলদের, গাড়িটাতে ভর্তি রয়েছে চোরাই রেডিও। মোটুরামকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গিয়ে একটা গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখেছে অন্য পাগলরা, বলছে একবাক্স চকলেট না পেলে ছাড়বে না। কান নাড়াতে নাড়াতে শজারুকাঁটার দিকে ছুটলো মড়ার খুলি। তাকে বাধ্য করলো ঘন হয়ে জন্মে থাকা বিহুটির মাঝখানে মাটি খুঁড়ে গুপ্তধন তুলতে। বিছুটি লেগে শজারুকাঁটার শরীর চুলকানো দেখে অন্য পাগলদের সে-কি হাসি। গাছ থেকে মোটুরামের বাঁধন খুলে তাকে নিয়ে পালালো নেলি…।
দুই মিনিট পরেই শেষ হয়ে গেল ছবি। আবার জ্বলে উঠলো স্টেজ আর অডিয়েন্সের ওপরের আলো। সারাক্ষণ হেসেছে দর্শকেরা, এখন জোর হাততালি দিয়ে ধীরে ধীরে শান্ত হলো। চেয়ারে বসা বেকারের ওপর স্থির হলো ক্যামেরার চোখ।
প্রথম প্রশ্ন করা হলো নেলিকে।
চওড়া হাসি হেসে জিজ্ঞেস করলো বেকার, মোটরবাইকের চাকার বাতাস কে হেড়েছে?
কেউ না, জবাব দিলো নেলি। মোটরবাইক নয়, একটা সাধারণ সাইকেলের চাকা থেকে বাতাস ছেড়েছে শজারুকাঁটা।
হয়েছে। চিৎকার উঠলো দর্শকদের মাঝে।
স্কোরবোর্ডে নেলির নামের পাশে পাঁচ নম্বর লিখলো বেকার।
পরের প্রশ্ন মড়ার খুলিকে। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো সাইকেলের রঙ কি ছিলো।
একমুহূর্ত দ্বিধা করে জবাব দিলো সে, সবুজ।
আবার হাততালি দিলো দর্শকেরা।
এর পর শিকারী কুকুরের পালা। হ্যান্ডেলবারের কোন পাশে থ্রী-স্পীড গীয়ার?
দ্বিধা ভরে জবাব দিলো শিকারী কুকুর, ডান পাশে।
গুঞ্জন করে উঠলো দর্শকেরা। নিরাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়লো কেউ কেউ।
চোখের পলকে হাত উঠে গেল কিশোরের। ভুল জবাব দিয়েছে বলে শিকারী কুকুরের দিকে চেয়ে দুঃখ প্রকাশ করলো বেকার। আরও দুজনে জবাব দিতে চেয়েছে, দুজনের দিকে তাকিয়েই হাসলো সে। কিশোরের দিকে ফিরে মাথা নাড়লো, বলো?
থ্রী-স্পীড গীয়ার ছিলো না ওটার, বোকা গলায় জবাব দিলো কিশোর। বোকার অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছে।
রাইট।
হৈ হৈ করে উঠলো দর্শকেরা। কিশোরের নামের পাশে পাঁচ নম্বর যোগ হলো।
ভারিপদর পালা এলো।
সহজ প্রশ্ন। বটিসুন্দরীর ময়দায় কি ঢেলে দেয়া হয়েছিলো?
বারুদ।
ঠিক।
পাঁচ নম্বর এবং হালকা হাততালি পেলো ভারিপদ।
কিশোরকে চাঁদ দেখালো বেকার। সব চেয়ে কঠিন প্রশ্নটা করলো, গাছ থেকে মোটুরামকে মুক্ত করতে কটা গিট খুলতে হয়েছে বটিসুন্দরীকে?
কিশোর দেখলো, সে জবাব দেয়ার আগেই হাত উঠে গেহে নেলির। একবার ভাবলো, ভুল জবাব দিয়ে দেয় মেয়েটাকে পাঁচ নম্বর পাইয়ে। নাহ, মড়ার খুলি তাহলে পরের বারে তার চেয়ে এগিয়ে যাবে। চারটে গিগি-গিট, এমনভাবে বললো সে, যেন আন্দাজে ঠিক বলে ফেলেছে।
রাইট, বেকার মাথা ঝাঁকালো।
তুমুল হাততালি দিলো দর্শকরা। প্রথম রাউন্ড শেষ হলো। সবাই পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে, তবু ধীরে ধীরে পড়লো বেকার কে কতো নম্বর পেয়েছে। আসলে ক্যামেরায় বেশিক্ষণ চেহারা দেখাতে ভালো লাগছে তার।
দর্শকদের মাথার ওপর দিয়ে পেছনের কন্ট্রোলরুমের দিকে তাকালো কিশোর, যেখানে রয়েছেন রাফায়েল সাইনাস। মনিটরের পর্দার ওপর চোখ। খুব উত্তেজিত দেখাচ্ছে তাকে।
দর্শকদের পঞ্চম সারিতে বসেছে রবিন আর মুসা। পাশে অ্যালউড হোফার। তার কোলের ওপর রাখা একটা ক্লিপবোর্ড, হাতে কলম, কিছু টুকে নিচ্ছে ক্লিপবোর্ডে আটকানো কাগজে।
কিশোরের দিকে হাত নেড়ে তাকে উৎসাহ দিলো মুসা।
রবিনকে বার বার আড়চোখে ক্লিপবোর্ডের দিকে তাকাতে দেখে হেসে কাগজটা তার দিকে তুলে ধ্বলো হোফার। সে লিখেছেঃ
সাধারণ বাইসাইকেল
সবুজ
থ্রী-স্পীড গীয়ার নয়
বারুদ
চার
প্রতিযোগীরা জবাব দেয়ার আগেই আমি আন্দাজ করার চেষ্টা করেছি কি হবে, লেখার কারণ ব্যাখ্যা করলো হোফার। ভালোই পেরেছি দেখা যাচ্ছে। সবই ঠিক। প্রতিটি লেখার পাশে দেয়া টিক চিহ্নগুলো দেখালো সে।