পাস আছে আমাদের বোঝানোর চেষ্টা করছে মুসা, কিন্তু ভুলে বাড়িতে ফেলে এসেছি। আমাদের চিনতে পারছেন না? গতকালও আমরা এসেছিলাম, পাগল সংঘের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্যে। আমাদের বন্ধু কিশোর পাশাকে তুলে নিতে এসেছি।
গম্ভীর মুখে মাথা নাড়লো গার্ড। আমি ওসব শুনতে চাই না। তাছাড়া আজকে বাইরের কারও আসারও কথা নয়, আমাকে ইনফর্ম রা হয়নি। পাস ছাড়া ঢুকতে দেবো না।
কি-কিন্তু, তোতলাতে শুরু করলো রবিন, আমরা…
তার কথা শেষ হওয়ার আগেই দরজা খুলে নেমে পড়লো হোফার। পেছনের রজা খুলে দিয়ে বললো, নামুন আপনারা।
ওরা নামতে আবার গার্ডের দিকে ফিরলো হোফার। এই গাড়িটা মিস্টার হ্যারিস বেকার ভাড়া নিয়েছেন, স্টুড়িওর বিজ্ঞাপন ম্যানেজার। তিনিই এদেরকে অনুমতি দিয়েছেন স্টুডিওটা ঘুরে দেখার জন্যে। আমাকে পাঠিয়েছেন দেখিয়ে নিয়ে যেতে।
কিন্তু মিস্টার বেকার তার অফিসে আছেন বলে তোর মনে হয় না…।
না, তিনি নেই। তাঁর সেক্রেটারি আমাদের কোম্পানিতে ফোন করেছিলো গাড়ি নিয়ে আসার জন্যে। দড়াম করে পেছনের ভোলা দরজাটা লাগিয়ে দিলো হোফার। তিনি কোথায় আছেন? দরজা লাগানোর সময় ফিসফিসিয়ে মুসাকে জিজ্ঞেস করলো সে।
নয় নম্বর। বাইরে তালা, ভেতরে আটকে আছে। দরজার নিচ দিয়ে চাবিটা রে করে দেবে বলেছে।
ফিরে এসে গার্ডের সামনে দাঁড়ালো হোফার। বললো, আমার যেতে তো কোনো বাধা নেই? আমি সেক্রিটারির কাছে যাচ্ছি। বলে আবার উঠে পড়লো গাড়িতে। তাকে আটকালো না গার্ড। হাত নেড়ে যাওয়ার ইশারা করলো।
গাড়িটাকে নয় নম্বর স্টেজের দিকে এগিয়ে যেতে দেখলো রবিন আর মুসা।
কিশোর ঠিকই আন্দাজ করেছে, রবিন ভাবলো, অ্যালউড হোফার লোকটা রহস্যময়।
তখনও দরজার নিচ দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে কিশোর। আলো আসছিলো রজার নিচ দিয়ে, হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল সেটা।
মুসা? ডেকে জিজ্ঞেস করলো সে।
না, আমি অ্যালউড হোফার। চাবিটা দিন। দ্বিধা করলো কিশোর। এতোগুলো কাজ নির্বিঘ্নে সারার পর, এখন তীরে এসে তরী ডোবাতে চায় না ভুল লোকের হাতে চাবি দিয়ে। চাবিটা নিয়ে যে সরে পড়বে না হোর, তাকে সোমবার এখানে আটকে রেখে যাবে না তার বিশ্বাস কি? এমনও হতে পারে হোফারই তার পিছু নিয়ে এখানে এসেছিলো, তাকে আটকে রেখে গিয়েছিলো।
ঘড়ি দেখলো আবার কিশোর। দুটো বাজতে বারো মিনিট আছে আর। দ্বিধা করার সময় এখন নয়। ঝুঁকিটা নিতেই হবে। মনে মনে আশা করলো, হোফার যেন তার শক্ত না হয়।
দরজার নিচ দিয়ে চাবিটা ঠেলে দিলো, কিশোর। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো।
খুলে গেল দরজা।
ফোঁস করে চেপে রাখা নিঃশ্বাস ছেড়ে উজ্জ্বল দিবালোকে বেরিয়ে এলো কিশোর।
বললো, থ্যাংক ইউ, মিস্টার হোফার।
জলদি চলুন, শোফার কললো। আপনার বন্ধুরা গেট দাঁড়িয়ে আছে। আশা করি দুটো নাগাদ পৌঁছে যেতে পারবো।
ঠিক দুটোয় পৌঁছতে পারলো না। এক মিনিট দেরি হয়ে গেল। গাড়ি থেকে নেমে টেলিভিশন নেটওয়ার্ক বিল্ডিংটার দিকে দৌড় দিলো কিশোর। দুর্টে এসে লিফটে উঠলো।
যে রুমে কুইজ শো শুটিঙের ব্যবস্থা হয়েছে, সেটার দরজা খোলা রয়েছে তখনও। একজন ইউনির্ফম পরা অ্যাটেনডেন্টকে বলতেই তাড়াতাড়ি কিশোরকে একটা ঘোরানো গলি পার করে স্টেজে পৌঁছে দিলো।
আদালতে জুরিরা যেরকম জায়গায় বসে, অনেকটা ওরকম একটা লম্বা কাঠের স্ট্যান্ডের কাছের চেয়ারে এনে কিশোরকে বসিয়ে দেয়া হলো। টাইয়ের সঙ্গে মাইক বেঁধে দেয়া হলো। বোকা বোকা ভঙ্গি করে ভারিপদের দিকে তাকালো সে, ওর চোখ দেখে বোঝার চেষ্টা করলো চমকে গেছে কিনা।
এসেছো,ভারিপদ বললো। দেরি করে ফেললে।
ভারিপদর মুখ দেখে কিছু বোঝা গেল না। একটুও অবাক মনে হলো না তাকে। দ্রুত অন্যদের মুখের ওপর চোখ বোলালো কিশোর। নেলিকেও অবাক লাগলো না। বরং কিশোর যে শেষ পর্যন্ত সময় মতো আসতে পেরেছে, তাতে যেন হাঁপ ছেড়েছে। এমনকি তাকে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ হাসিও উপহার দিলো।
শিকারী কুকুরকেও খুশি মনে হলো। খুশি মনে হলো হ্যারিস বেকারকে, যে এই শো- উদ্যোক্তা।
শুধু যে একটিমাত্র লোক তাকে দেখে সন্তুষ্ট হতে পারলো না, চোখাচোখি হতেও চোখ সরিয়ে নিলো আরেক দিকে, তার মাথাভর্তি লম্বা সোনালি চুল নেমে এসেছে করে ওপর।
মড়ার খুলি।
৮
পাগল সংঘের প্রথম কুইজ শো শুরু হলো।
রসিকতা আর কিছু উষ্ণ হাসির মাধ্যমে দর্শকমণ্ডলীকে তাতিয়ে নিয়ে, কুইজের নিয়মকানুন কলতে শুরু করলো বেকার।
এক এক করে প্রশ্নের জবাব দেবে প্রতিযোগীরা। সঠিক জবাব দিতে পারলে পাঁচ নম্বর পাবে, প্রতি প্রশ্নের জন্যে। যদি কেউ কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে না পারে, এবং সেটা অন্য কেউ পেরে যায়, তাহলে যে দিতে পারবে সে পাবে পাঁচ। কিন্তু যদি অন্যের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে সেটা ভুল করে তাহলে নিজের নম্বর থেকে পাঁচ নম্বর কাটা যাবে।
প্রতিযোগীদের দিকে তাকিয়ে হাসলো বেকার। কাজেই, না জেনে অযথা নম্বর নষ্ট করো না, হুঁশিয়ার করলো সে।
ক্যামেরার দিকে তাকালে একবার বেকার, তারপর আবার ফিরলো স্টুডিওতে উপস্থিত দর্শকদের দিকে। কলতে লাগলো, কিছু কিছু কুইজ শোতে নিয়ম থাকে, প্রতিযোগী তার নিজের সাবজেক্ট পছন্দ করে নিতে পারবে। এই যেমন কোনো একটা নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর জবাব দিতে চায়ঃ ইতিহাস, খেলাধুলা, প্রাণীজগৎ কিংবা অন্য কিছু। কিন্তু এই প্রতিযোগিতায় তেমন কিছু থাকবে না, শুধু একটা বিষয়ের ওপর জবাব দিতে হবে, ঝিক করে উঠলো তার দাঁত। আর সেটা হলো, পাগল সংঘ।