আমরা শুধু আন্দাজ করেছি,মুসা বললো, এখানেই কোথাও আছে।
তারপর কিশোর বুঝে ফেললো, রবিন কললো আবার, ওই রিফ্লেক্টর বক্সে রয়েহে ওগুলো।
আর এখানে সমস্ত স্ট্যান্ডের মধ্যে সব চেয়ে বেশি তুলে রাখা হয়েছে ওই বাটার স্ট্যান্ড, বললো কিশোর, সে-কারণেই অবাক লাগলো। অস্বাভাবিক। ভাকলাম, কেন তুলে রাখা হয়েছে? নিশ্চয় কোনো ব্যাপার আছে।
কিন্তু এতো কথা বলার পরেও বিশ্বাস করার কোনো লক্ষণ দেখা গেল না পরিচালকের মাঝে।
চুপ করে এক মুহূর্ত ভাবলো কিশোর। তারপর জিজ্ঞেস করলো, আপনি নিশ্চয় মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফারের নাম শুনেছেন? চিত্রপরিচালক?
তার নাম কে না শুনেছে, শ্রদ্ধার সঙ্গে বললেন সাইনাস। কেন, তিনি তোমাদের সাফাই দেকেন?
নিশ্চয় দেবেন। আপনি ফোন করেই দেখুন না।
হাসলেন সাইনাস। তোমাদের কপাল খারাপ, তিনি এখন নেই। বাইরে গেছেন একটা শুটিঙের কাজে। বেশ কিছুদিন আসবেন না।
আবার চুপ হয়ে গেল কিশোর। দমে গেছে রবিন আর মুসা। সাইনাসকে বোঝানোর আর কোনো উপায় নেই।
কিন্তু কিশোর দমলো না। আবার জিজ্ঞেস করলো, ভিকটর সাইমনের নাম শুনেছেন? রহস্য কাহিনী লেখক?
একের পর এক বিখ্যাত লোকদের নাম বলে যাচ্ছো। ব্যাপারটা কি? তিনিও কি সাফাই দেবেন নাকি?
কেন দেবেন না? দ্বিধা করলেন সাইনাস। তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়নি। ফোন নম্বর জানি না।
আমি জানি, পরিচালকের হাত থেকে কার্ডটা নিয়ে তার উল্টো পিঠে ফোন নম্বর লিখে দিলো কিশোর।
আরেকবার দ্বিধা এলেন পরিলাচক। তারপর হেঁটে গেলেন স্টেজের দেয়ালে কানো টেলিফোনটার দিকে। তাকে ডায়াল করতে দেখলো তিন গোয়েন্দা। তবে এত দূর থেকে কথা শুনতে পেলো না। অনেক সময় ধরে কথা বললেন। তারপর রিসিভার রেখে দিলেন হাসিমুখে।
ফিরে এসে জানালেন, আমাকে চিনতে পেরেছেন তিনি। আমার নাম জানেন। আশ্চর্যই লেগেছে। তার একটা ছবির শুটিং হয়েছিল, আমাদের এই স্টুডিওতে। তখন নাকি আমার সাথে দেখা হয়েছিলো, অথচ আমি ভুলে বসে আছি। আবার হাসলেন তিনি। কলার সঙ্গে সঙ্গেই নিতে পারলেন।
আমাদের কথা কি বলেছেন? মুসা জিজ্ঞেস করলো।
ও, তোমাদের কথা, জোর করে যেন অতীত থেকে নিজেকে বাস্তবে টেনে আনলেন সাইনাস। যা, তোমাদের কথা বলেছেন। তোমরা চোর নও। তোমরা ইচ্ছে করলে এখন বাড়ি যেতে পারো। কাপগুলো আমি জায়গামতো পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করছি।
তাঁকে ধন্যবাদ দিলো কিশোর।
আশ্চর্য, বিড়বিড় করলেন সাইনাস, কিশোরের কথা যেন শুনতেই পাননি, এই ফিল্ম ব্যবসা! এটা এমন এক জায়গা, এখানে চোখের আড়াল হলেই মানুষ মানুষকে দ্রুত ভুলে যায়। অথচ ভিক্টর সাইমন আমাকে ভোলেননি। আর কাণ্ড দেখো, আমি ভুলে বসে আছি। তিনি বললেন, তার ছবিটা পরিচালনার কথা নাকি প্রথমে আমারই ছিলো। পরে আরেকজনকে নেয়া হয়েছে, আমি সময় দিতে পারিনি বলে। আমার পরিচালিত সমস্ত ভালো হরি নাম মনে আছে তাঁর।
বেরোনোর জন্যে সহকারীদেরকে ইশারা করলো কিশোর। সাইনাসকে তার অতীতের মধ্যেই ডুবে থাকতে দিলো ওরা। এগোলো সাউন্ড স্টেজের প্রজার দিকে।
কি ভাবছো, কিশোর? রাস্তায় পা দিয়েই জিজ্ঞেস করলো মুসা।
জবাব দিলো না গোয়েন্দাপ্রধান। নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে।
কে চুরি করেছে বলে মনে হয় তোমার? রবিনের প্রশ্ন। ওই আর্ক লাইট, ওদের কথা যেন কানেই ঢোকেনি কিশোরের, কেউ জানতো, ওগুলো ব্যবহার করা হবে না। থমকে দাঁড়ালো সে। পেছনে দাঁড়িয়ে গেল রবিন আর মুসা, বিশাল স্টেজ-বাড়িটার হায়ায়। বোধহয় সে-কারণেই সে ক্যামেরাগুলো চাল হওয়াতক অপেক্ষা করেছিলো…, ভ্রূকুটি করলো সে। কি জানি, এখনও শিওর হতে পারছি না।
মড়াটা? মুসা বললো। নাকি ভারিপদ?
শিওর না, একই কথা বললো কিশোর। বেশ কিছু রহস্য জট পাকিয়ে আছে এখনও।
যেমন? রবিন জানতে চাইলো।
এক নম্বর, একটা আঙুল তুললো কিশোর, আমাদের শোফার অ্যালউড হোফার।
তার আবার কি রহস্য? জিজ্ঞেস করলো মুসা।
ওর স্মৃতিশক্তি, বুঝিয়ে দিলো কিশোর, এত কম লে? সকালে স্টুডিওর গেট গার্ড তাকে দেখেই চিনতে পারলো, তারমানে এখানে সে অনেকবার এসেছে। তার পরেও নয় নম্বর স্টেজ কোথায় জানার জন্যে অনন্যকে জিজ্ঞেস করতে হলো কেন?
পথের শেষ মাথায় পার্ক করা লিমুজিনের দিকে হাঁটতে আরম্ভ করলো আবার কিশোর। আমাদের সামনে সাউন্ড স্টেজটা না চেনার ভান করছে সে। কেন?
সে-ই কি কাপগুলো চুরি করেছে ভাবছো? রনি বললো।
আবার কুটি এলো কিশোর। এখনও জানি না। তবে, আমাদের আলোচনা অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার ঠিক আগে রান্নাঘরের পেছন ঘুরে ওকে হেঁটে যেতে দেখেছি আমি।
৬
পরদিন সকালে নাস্তা সেরে মেরিচাচীকে বাসন-পেয়ালা ধুতে সাহায্য করলো কিছুক্ষণ কিশোর। তারপর বেরিয়ে এসে ঢুকলো তার ওয়ার্কশপে। কুইজ শোর অনুষ্ঠান রেকর্ড করতে টেলিভিশন স্টেশনে যাবার কথা দুটোর সময়।
বেশির ভাগ কুইজ শোতেই, জানে সে, যার যার নিজের বিষয় পছন্দ করে নিতে বলা হয়। ওয়ার্কবেঞ্চে বসে বসে ভাবতে লাগলো সে, ওদেরকে কি সেরকম কোনো সুযোগ দেয়া হবে? যদি হয়, তাহলে কোন্ বিষয় পছন্দ করবে সে? বিজ্ঞান। ইস্কুলে তার সব চেয়ে প্রিয় বিষয়।
আগের দিন বেকারকে শো-এর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলো নেলি। জবাব দেয়নি, বিজ্ঞাপন ম্যানেজার। শুধু বলেছে, সারপ্রাইজ দেয়ার জন্যে সেটা গোপন রাখতে হচ্ছে, সরি।