রকি বীচে ফিরেই সোজা এসে হেডকোয়ার্টারে ঢুকেছে তিন গোয়েন্দা।
রকিং চেয়ারে বসে টেবিলে পা তুলে দিয়েছে মুসা। আমার মনে হয়, কাপগুলো হারানোতেই অনুষ্ঠানটা দেখাচ্ছে না। কি বলো, কিশোর?
কিশোর জবাব দিলো না। ডেস্কের ওপাশের চেয়ারে হেলান দিয়ে আনমনে চিমটি কাটছে নিচের ঠোঁটে। গভীর চিন্তায় ডুবে আছে।
টেলিভিশন অফ করে দিলো রবিন। পর্দা থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল কালো হ্যাট পরা দুজন কাউবয়।
এখনও ওখানেই রয়েছে, চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো কিশোর।
কারা? টুলে বসে দেয়ালে পিঠ দিয়ে আরাম করে বসলো রবিন।
কারা নয়, কি, শুধরে দিলো কিশোর। ওই কাপগুলো। এখনও ওখানেই আছে।
কোথায়? জিজ্ঞেস করলো মুসা।
স্টেজ নাইন থেকে আমরা চলে আসার আগে আমাদের সবার দেহতল্লাশি করেছে ওরা, কিশোর কললো। তারপর গেটের কাছে আরেকবার খুঁজেছে গাড়ির ভেতর। পায়নি। যারাই চুরি করে থাকুক কাপগুলো, স্টুডিও থেকে সরাতে পারেনি। তারমানে এখনও ওখানেই আছে, সাউন্ড স্টেজের কোথাও, লুকানো।
এই সাউন্ড স্টেজটা আসলে কি জিনিস? জানতে চাইলো মুসা। ওরকম নাম কেন?
কারণ, বুঝিয়ে দিলো কিশোর, বহুদিন আগে যখন কথা বলা সিসটেম চালু হলো সিনেমায়, তখন তাদের সেটকে সাউন্ডপ্রুফ করার প্রয়োজন হতো পরিচালকদের। সাউন্ড স্টেজটা সে-কারণেই দরকার।
ও। তা কাপগুলোর কথা ঠিকই বলেছে। কিন্তু থাকলে আমাদের কি? তোমারটা নিশ্চয় পেতে চাও না? রূপার একটা কাপ দিয়ে কি আর হবে?
তাছাড়া ওটাতে যে নাম লেখা আছে, সেটা তুমি শোনা তো দূরের কথা, মুচকি হেসে বললো রবিন, দেখতেও চাও না।…কিশোর, সত্যিই তুমি ভালো অভিনেতা।
আজ বিকেলে বোকার অভিনয় যা করলে না! হ্যারিস বেকারকে বুদ্ধ বানিয়ে ছেড়ে। দিয়েছে।
ওকে হেনস্তা করার কোনো ইচ্ছেই আমার ছিলো না। আসলে মড়ার খুলি আর শিকারী কুকুরকে বেকুব বানালাম।
কিভাবে? বুঝতে পারলো না মুসা।
তলোয়ার খেলার মতো। প্রতিপক্ষ যদি বোঝে তোমার তলোয়ারটা ভোতা, সামনে এগোতে আর দ্বিধা করবে না। তখন তার পেটে সহজেই তলোয়ার ঢোকাতে পারবে তুমি।
আরে বাবা একটু সহজ করে বলো না। দুই হাত তুলে নাচালো মুসা।
সহজ করেই তো বললাম। আমার শত্রুরা যদি ভেবে বসে আমি এতোই বোকা, নিজের নাম মনে রাখতে পারি না, তাহলে আমাকে পরাজিত করার জন্যে বেশি চেষ্টা করবে না। তখন ওদেরকে হারানো আমার জন্যে সহজ হয়ে যাবে।
বুঝলাম।
মাথ ঝাঁকালো রবিন। সে-ও এখন বুঝতে পেরেছে কিশোরের তখনকার ওই অত আচরণের কারণ।
যাই হোক, আগের কথার খেই ধরলো কিশোর, এই কাপ চুরির ব্যাপারটা পরিস্থিতি পালটে দিয়েছে অনেকখানি।
তারমানে, বলতে চাইছে, রবিন বললো, তদন্ত করার মতো একটা কেস পেয়ে গেছে?
কিন্তু বুঝতে পেরেছো? মুসা জিজ্ঞেস করলো।
কারও কথারই জবাব দিলো না কিশোর। নীরবে হাত বাড়ালো টেলিফোনের দিকে। একটা কার্ড দেখে নম্বর ডায়াল করলো। ওপাশ থেকে সাডা এলে বললো, হলো, ইজি রাইড লিমে? আমি কিশোর পাশা বলছি। আপনাদের একজন ড্রাইভার, অ্যালউড হোপার, তার সঙ্গে কথা বলতে চাই।
কিছুক্ষণ নীরবতার প্র লাইনে এলো হোফার।
হ্যালো, মিস্টার হোফার, কিশোর কললো, আবার রিক্ত করছি। এই মাত্র স্টুডিও থেকে খবর দিলো, আবার যেতে হবে আমাদেরকে। হা হা, এক্ষুণি। যদি চলে আসেনহ্যাঁ, গেটের কাছেই থাকবো।…থ্যাংক ইউ।
আবার যাচ্ছি? উঠে দাঁড়ালো মুসা। কিশোরের ডেস্কে দুহাত রেখে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, কিন্তু ঢুকবোকিভাবে? ওরা তো তোমাকে ডাকেনি।
না, ডাকেনি, বলতে বলতে পকেট থেকে একটা কাগজ বের করলো কিশোর। কিন্তু আমাকে ঢুকতে দেবে ওরা, কারণ স্টুডিও পাস আছে। লিমুজিনের জানালা থেকে খুলে রেখে দিয়েছিলাম, আমাদেরকে যখন নামিয়ে দিয়ে গেল। তখন অবশ্য ভাবিনি আমাদেরকে আবার ঢুকতে হবে। হোফার আবার ঢুকতে পারে এই ভয়ে খুলে রেখেছিলাম।
আবার কেন যাচ্ছে, জিজ্ঞেস করেও জবাব পেলো না রবিন। চুপ করে থাকাই শ্রেয় মনে করলো। ইচ্ছে করে কিছু না বললে হাজার জিজ্ঞেস করেও কিশোরের কাছ থেকে জবাব পাওয়া যাবে না।
স্টুডিওর গেটে এসে পাস দেখাতেই কোনো প্রশ্ন না করে ওদেরকে ছেড়ে দিলো গার্ড। নয় নম্বর স্টুডিওর সামনে এসে থামলো গাড়ি নেই।
বড় জোর আধ ঘণ্টা লাগবে আমাদের, শোফারকে বললো কিশোর।
আচ্ছা, ঘাড় কাত করলো হোফার।
ছোট দরজাটার সামনে এসে দাঁড়ালো কিশোর। তালা লাগানো নেই। সব সময়ই খোলা থাকে এই স্টেজ, জানা আছে তার। কাজ করার জন্যে আবার সন্ধ্যা আটটার
সময় আসবে এখানে নাইট শিফটের কর্মীরা।
মস্ত ঘরটা এখন অন্ধকার। অনেক ওপরে রয়েছে ধাতব ব্যালকনি। ওখানে, গ্যানট্রিতে কয়েকটা ঝুলন্ত তারের খাঁচার ভেতরে জ্বলছে কয়েকটা বান্ধ।
কিশোরকে অনুসরণ করে রান্নাঘরে এসে ঢুকলো মুসা আর রবিন। টর্চ জ্বেলে দেয়ালগুলো পরীক্ষা করতে আরম্ভ করলো গোয়েন্দা প্রধান।
নরম সুরে নিজের সঙ্গেই কথা বলতে লাগলো সে, টেবিলটা ছিলো এখানে। লাঞ্চের পর নিয়ে যাওয়া হলো ওই দিকে, এখানে এনে পাতা হলো কতগুলো সুইভেল চেয়ার। আর তখন নিশ্চয় সোনালি বাস্কেট ছিলো সেটের বাইরে…।
সেটের দরজার দিকে এগিয়ে গেল সে। এই দরজা দিয়েই বাক্স নিয়ে ঢুকেছিলো লাল চুল মেয়েটা। দরজা খুলে ওপাশে এলো কিশোর, সঙ্গে সঙ্গে এলো দুই সহকারী।