ঠিক তাই, স্যার।
কিন্তু, তোমাদের কথা তো র্যাঞ্চের আরও লোকে শুনেছে। তাদেরকে সন্দেহ। না করে শুধু প্রফেসরের ওপর নজর গেল কেন তোমার?
ওর পিস্তলটা, স্যার।
পিস্তল? বুঝতে পারছেন না পরিচালক। এমন কি বিশেষত্ব আছে ওটার…
ওটার কিছু নেই, স্যার, তাড়াতাড়ি বললো কিশোর। ওটাকে যেভাবে ধরা হয়েছে…মানে, আমি বলতে চাইছি, নকল ফিগারো বাঁ হাতে ধরেছিলো পিস্তলটা। হোলস্টার পরেছিলো বাঁ দিকে। অথচ কোনো বইতে উল্লেখ নেই যে আসল হেনরি ফিগারো বাইয়া ছিলো। তার ছবিতেও হোলস্টার ডান দিকে ঝোলানো দেখেছি। গুহায় তার কঙ্কাল পেয়েছি, তখনও ডান হাতে ধরা ছিলো পিস্তলটা…
এহহে! নিজের ওপরই বিরক্ত হলেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। এই সহজ কথাটা একবারও ভাবলাম না! বইতে উল্লেখ নেই, ছবিতে রয়েছে হেনরি ফিগারোর ডান পাশে হোলস্টার। শুধু প্রফেসর হারকসনের বক্তব্য, ফিগারো ছিলো বাইয়া। নিজের ফঁদে নিজেই পড়েছে।
হ্যাঁ, হাসলো কিশোর। স্যাড সাইপ্রেস কিন্তু আসলেই ইতিহাসের প্রফেসর, স্যার। ইউরোপ থেকে পালিয়ে এসে ক্যালিফোর্নিয়ায় লুকিয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার। ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেছে, তাই বিন্দুমাত্র সন্দেহ করতে পারেনি কেউ। হেনরি ফিগারোর ওপর একটা বইও লিখতে আরম্ভ করেছিলো, তাতে বলেছে, ফিগারো ছিলো বাঁইয়া। নিজেকে ফিগারো বলে চালিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা ছিলো আগে থেকেই, তাই বাঁইয়ার ব্যাপারটা প্রতিষ্ঠিত করে ফেলতে চেয়েছিলো।
চেয়ারে হেলান দিলেন পরিচালক। খুব জটিল একটা রহস্যের সমাধান করেছে এবার। অথচ সূত্র বলতে প্রায় কিছুই ছিলো না তোমাদের হাতে। শুধু বাইয়ার ব্যাপারটা দিয়েই…নাহ, ইউ আর অ্যা জিনিয়াস, ইয়াং ম্যান!
মিস্টার ক্রিস্টোফারের মতো মানুষের প্রশংসা পাওয়া যা-তা কথা নয়। গর্বে ফুলে উঠলো গোয়েন্দাদের বুক। মুসার দিকে চেয়ে ইশারা করলো কিশোর।
বাক্সটা এতোক্ষণ কোলের ওপর রেখে দিয়েছিলো মুসা। তুলে টেবিলের ওপর দিয়ে ঠেলে দিলো। নিন, স্যার। আপনাকে প্রেজেন্ট করলাম।
কী?
খুলেই দেখুন।
বাক্সটা খুলে ভেতরের জিনিসটা বের করলেন পরিচালক। দীর্ঘ এক মুহূর্ত স্থির তাকিয়ে রইলেন ওটার দিকে। আনমনে বিড়বিড় করলেন, হেনরি ফিগারোর পিস্তল!
হ্যাঁ, স্যার। মিস্টার হারভে আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন, আমরা দিলাম আপনাকে, রবিন বললো। আপনার ব্যক্তিগত জাদুঘরে রেখে দেবেন। আর মোনিং ভ্যালির ওপরে ছবি করলে, তাতেও ব্যবহার করতে পারবেন।
থ্যাংক ইউ, মাই বয়েজ! থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ!
পিস্তলটা উল্টেপাল্টে দেখে টেবিলে রেখে দিলেন পরিচালক। সরাসরি তাকালেন কিশোরের চোখের দিকে। মিটিমিটি হাসছেন। আচ্ছা, ওই বুড়ো মানুষটার ব্যাপারে কি মনে হয় তোমার? ওটাই কি হেনরি ফিগারোকে মেরেছিলো?
পলকে বদলে গেল কিশোরের চেহারা। দৃষ্টি চলে গেল যেন বহুদূরে। আপনি তো জানেন, স্যার, কিংবদন্তী শুধু শুধু তৈরি হয় না। পেছনে কোনো না কোনো কারণ থাকেই। হয়তো ওরকম কোনো কিছু একটা ছিলো গুহার ভেতরের খাড়িতে। হয়তো লক নেস মনস্টারের মতো কোনো দানব। ভাবছি, সময় করতে পারলে গিয়ে আরেকবার ঢুকবো গুহাটায়। দানব-রহস্যের সমাধান করার চেষ্টা করবো।
খাইছে! তাড়াতাড়ি দুই হাত নাড়লো মুসা। গেলে তুমি যাও। আমি বাবা ওর মধ্যে নেই।
হেসে উঠলো সবাই।