হাসলেন মিসেস হারভে। বড় হলে অনেক বড় গোয়েন্দা হবে ওরা।
তা হবে, এই প্রথম শেরিফের মুখে হাসি ফুটলো। আমরা যা পারিনি…কিন্তু চোরটা যে পালালো! তাকে ধরি কিভাবে?
আমার মনে হয় না পালিয়েছে, বোমা ফাটালো যেন কিশোর। একসঙ্গে তার দিকে ঘুরে গেল সবগুলো চোখ। চেষ্টা করলে এখনও ধরা যায়।
যায়?
অন্য সবাই কোথায়, স্যার? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
অন্য সবাই? র্যাঞ্চের লোকদের কথা বলছো তো? তোমাদের খুঁজতে বেরিয়েছে, জবাব দিলেন শেরিফ। কয়েকজনকে নিয়ে হারভে গেছে সৈকতে। আরও কয়েকজনকে নিয়ে কোহেন আর প্রফেসর গেছেন ডেভিল মাউনটেইনের ওপাশে।
ওদের সঙ্গে কোথায় আপনার দেখা হবে?
কেন? র্যাঞ্চে।
জলদি চলুন তাহলে।
ভ্রূকুটি করলেন শেরিফ। যা বলার বলে ফেলো না এখানেই।
মাথা নাড়লো কিশোর। একদম সময় নেই, স্যার। বলতে অনেক সময় লাগবে।.জলদি চলুন, চোরটাকে ধরতে চাইলে।
ওর কথা শুনুন, শেরিফ, হারলিং বললেন। ওর ওপর ভক্তি এসে গেছে। আমার। সত্যি ধরে ফেলবে চোরটাকে। চলুন চলুন।
বেশ, দরজার দিকে এগোলেন শেরিফ।
শেরিফের দুজন ডেপুটি পাহারায় রয়েছে পাহাড়ের গোড়ায়। তাদের দুটো ঘোড়ায় উঠলো রবিন আর মুসা। আর শেরিফের সঙ্গে কিশোর। রুক্ষ তরাই অঞ্চল, এবড়োখেবড়ো। কঁকুনির চোটে ঘোড়ার পিঠে বসে থাকাই দায়।
র্যাঞ্চের কাছে চলে এলো ওরা। কাউকে চোখে পড়লো না।
এবার বলো, শেরিফ বললেন। কাকে ধরতে হবে?
ঠোঁট কামড়ালো কিশোর। আসবে, স্যার, শিওর আসবে। এলেই ধরতে হবে। আমাদেরকে খোঁজার ভান করে না পেয়ে ফিরে আসবে। ওত পেতে থাকবো আমরা। এলেই ধরবো।
ঘোড়া থেকে নামলেন শেরিফ। কিশোরকে নামতে সাহায্য করলেন। এবার খুলে বলো সব।
স্যার, কিশোর বললো। কেবিনে কিছু বেফাঁস কথা বলে ফেলেছে চোরটা…
র্যাঞ্চ হাউসের পাশ থেকে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বেরিয়ে এলেন প্রফেসর হারকসন। এই যে, শেরিফ, খুঁজে পেয়েছেন তাহলে। ভেরি গুড। তোমরা ছেলেরা খুব একচোট দেখিয়েছো। ভুগিয়ে ছেড়েছো। নার্ভাস ভঙ্গিতে হাসলেন তিনি। যা চোখ পাথর।দেখতে পাইনি, কি করে যেন লেগে, কেটে গেল। ফিরে এসে ব্যাণ্ডেজ না বেঁধে আর পারলাম না।
সময় মতোই এসেছেন, প্রফেসর, শেরিফ বললেন। কিশোর পাশা এখন একটা গল্প শোনাবে আমাদের।
শান্ত কণ্ঠে কিশোর বললো, গল্প শোনানোর আর দরকার নেই, স্যার। প্রফেসরের দেহ তল্লাশি করলেই হীরাগুলো পেয়ে যাবেন। আবার হাতছাড়া করেছে বলে মনে হয় না। ওকে যে সন্দেহ করেছি, কল্পনাও করেনি নিশ্চয়। তাই এক না, মিস্টার স্যাড সাইপ্রেস?
সাইপ্রেস! শেরিফ অবাক।
ছদ্মনাম। ওর ব্যাণ্ডেজ খুলে দেখুন, হীরাগুলো পেয়ে যাবেন।
ঘুরে দৌড় দিলো প্রফেসর হারকসন, ওরফে স্যাড সাইপ্রেস। কিন্তু পালাবে কোথায়? শেরিফ আর তার দুই সহকারীর কাছে পিস্তল রয়েছে। সহজেই ধরে ফেলা হলো চোরটাকে।
.
১৯.
ব্যাণ্ডেজের ভেতরই পাওয়া গেল তাহলে, বললেন বিখ্যাত চিত্রপরিচালক মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফার।
হ্যাঁ, স্যার, কিশোর বললো। দৌড়ে গিয়ে গাড়িতে ওঠার চেষ্টা করেছিলো। সাইপ্রেস। নেভাডার লাইসেন্স প্লেট লাগানো ওটাতে। দুটো গাড়ি ছিলো তার। নেভাডার প্লেট লাগানোটা লুকিয়ে রাখতো মোনিং ভ্যালির একটা গিরিপথে, ওদিকে যেতে না কেউ। তাই কারও চোখে পড়েনি গাড়িটা। হেনরি ফিগারোর পোশাক আর মুখোশটা রাখতো গাড়ির মধ্যে।
হুঁ, বিশাল ডেস্কের ওপাশে বসে আস্তে মাথা দোলালেন পরিচালক। ভীষণ চালাক। …যা-ই হোক, দুই বোকা বুড়োর কি খবর? মারটিন আর বেইরি?
হাসলো রবিন। ওরা বার বার কসম খেয়ে বলেছে, হীরাগুলো ফিরিয়ে দিতো। ওদের কথা বিশ্বাস করেননি শেরিফ। র্যাঞ্চের লোকদের ভয় দেখিয়েছে। বলে নালিশ করতে পারতেন মিস্টার হারভে। করেননি। তিনি মাফ করে দিয়েছেন দুই বুড়োকে। ফলে শেরিফও ছেড়ে দিয়েছেন তাদেরকে।
কিশোর, জানতে চাইলেন পরিচালক। কি করে বুঝলে, হেনরি ফিগারো, প্রফেসর হারকসন আর স্যাড সাইপ্রেস একই লোক?
সামনে ঝুঁকলো কিশোর। শুরু থেকেই প্রফেসরের ভাবভঙ্গি ভালো লাগেনি। আমার, খটকা লেগেছে। কয়েকবার ভেবেওছি, ও-ই হয়তো নকল হেনরি ফিগারো।
কিন্তু শিওর হলে কি করে, ও-ই স্যাড সাইপ্রেস?
কেবিনে বন্দি করার পর একটা কথা বলেছিলো, তাতেই…
দ্রুত আরেকবার রবিনের লেখা ফাইলের পাতা ওল্টালেন পরিচালক। তারপর মুখ তুললেন। কই, বিশেষ কিছু তো বলেনি সে?
কম বলেছে। তবে যা বলেছে, ধরা পড়ার জন্যে যথেষ্ট। আমাদের স্কুবা, ইকুইপমেন্টগুলো আনতে নাকি দেখেছে। কে দেখে থাকতে পারে? এমন কেউ, যে র্যাঞ্চে থাকে। তারপর রয়েছে তার কণ্ঠস্বর। অভিনয় করে অন্যরকম করার। চেষ্টা করেছে বটে; কিন্তু গলার স্বর, কথা বলার ধরন বদলালেই বা কতোটা: বদলাতে পারে একজন মানুষ? দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে ফেলতে শুরু করলাম, থামলো কিশোর। গাল চুলকালো। সে আরও বললো, হারলিং পিছু লাগাতে ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলো। ওই কথা থেকে দুটো সূত্র পেলাম। এক, নকল ফিগারো জানে। হারলিং কে। দুই, হারলিং যে তার খুব কাছাকাছি এসে গেছে, সেটাও জানে।
নিশ্চয়ই! একমত হলেন পরিচালক। হারলিং তোমাদেরকে বলেছে, স্যাড সাইপ্রেস তাকে চেনে। অথচ হারলিংকে তোমরা ছাড়া র্যাঞ্চের আর কেউ দেখেনি। তোমরা র্যাঞ্চের লোকের কাছে তার চেহারার বর্ণনা দিয়েছে। শুনেই হুঁশিয়ার হয়ে গেছে সাইপ্রেস, তোমাদের কথা থেকেই বুঝে গেছে চোখে পট্টি লাগিয়ে হারলিংই ছদ্মবেশ নিয়েছে।