কঠিন হলো হারলিঙের চোখ। গাধার মতো কাজ করেছে তোমরা! বলে, পাথরগুলো নিয়ে আবার চামড়ার ব্যাগে ভরতে শুরু করলেন। চেয়ে রয়েছে দুই বুড়ো। চোখের সামনে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। এতোগুলো দামী পাথর, কিন্তু কিছুই বললো না। হারলিং বলছেন, আসল চোরটাকে ধরতে যেতে হবে এখন..
মিস্টার হারলিং, বাধা দিয়ে বললো কিশোর, চোরটার কথা ভেবেছি আমি.. সে জানে, মিস্টার মারটিন আর বেইরি খুঁড়ে বের করছে পাথরগুলো। ওগুলো নেয়ার জন্যে ফিরে আসবে…
পেছন থেকে কথা বলে উঠলো একটা চাপা, ভোতা কণ্ঠ, ঠিকই বলেছো তুমি। আমি এসেছি।
চমকে ফিরে তাকালো সবাই। দোড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে নকল ফিগারো। মুখে মুখোশ। হাতে পুরনো আমলের পিস্তল।
নড়ো না কেউ, ঘরের সবাইকে সাবধান করলেন হারলিং। সাইপ্রেস ভয়ানক পাজী লোক। টেবিলে রাখা তাঁর পিস্তলটার দিকে আড়চোখে তাকালেন।
পিস্তল নাচালো নকল, ফিগাররা। না না, হারলিং, বোকামি করো না। পিস্তলের আশা ছাড়ো। যাও, দেয়ালের কাছে গিয়ে দাঁড়াও সবাই।
আদেশ পালিত হলো।
এই যে, তুমি, রবিনকে বললো নকল ফিগারো। ঘরের কোণে দড়ি আছে, দেখোএনে হারলিংকে বাঁধো শক্ত করে। জলদি!
রবিনকে দ্বিধা করতে দেখে হারলিং বললেন, যা বলছে করো।
দড়ি এনে হারলিঙের হাত-পা বাঁধলো রবিন। তাকে সরে যাওয়ার ইশারা করে নিজে এসে বাঁধন পরীক্ষা করে দেখলো সাইপ্রেস। সন্তুষ্ট হয়ে পিছিয়ে গেল দুই পা।
এখন দুজনে মিলে দুই বুড়োকে বাঁধো।
মারটিন আর বেইরিকে বাঁধলো দুই গোয়েন্দা। তারপর সাইপ্রেসের আদেশে কিশোরকে বাঁধলো রবিন। রবিনকে বাঁধলো, সাইপ্রেস নিজে। বাঁধা শেষ করে গিয়ে পাথরগুলো তুলে ব্যাগে ভরলো। খসখসে কণ্ঠে বললো, তোমাদের সবাইকে ধন্যবাদ। পাথরগুলো রেডি করে রেখেছো আমার জন্যে। ভূমিকম্পে ছড়িয়ে গিয়েছিলো। খুঁড়ে বের করা অনেক কষ্ট। কড়া নজর রেখেছিলাম অবশ্যই। এতো কষ্ট করে চুরি করে এনে হারাতে চায় কেউ? খিকখিক করে হাসলো চোরটা। তবে তোমরা তিন বিচ্ছু বড় জ্বালান জ্বালিয়েছে। স্কুবা ইকুইপমেন্টগুলো আনতে দেখেই বুঝেছি, কি করতে যাচ্ছে। তার ওপর পিছে লেগে ছিলো হারলিং। ভয়ই। পেয়ে গিয়েছিলাম। পাথরগুলো না হারাই! চলি। গুড বাই। বেরিয়ে গেল সে।
গুঙিয়ে উঠলো কিশোর। আমি একটা গাধা! আমাদেরকে ধরে যখন সুড়ঙ্গে আটকালো, তখনই বোঝা উচিত ছিলো আমার, খুঁড়ে পাথর বের করার ব্যাপারটা সে জানে। আমাদের যেখান থেকে ধরে এনেছে, স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিলো খোঁড়ার শব্দ। হুঁশিয়ার হওয়া উচিত ছিলো আমার। কেন ভাবলাম না, ব্যাটা আমাদের ওপর চোখ রেখেছে?
দুঃখ করো না, সান্ত্বনা দিলেন হারলিং। চমৎকার ভাবে এই রহস্যের সমাধান করেছে। গাধা তো আসলে আমি। কেন বুঝলাম না, মারটিন আর বেইরিকে ব্যবহার করছে সাইপ্রেস?
হু, দীর্ঘশ্বাস ফেললো রবিন। কিশোরের অনুমানই ঠিক। চোরটা সত্যি। ফিরে এলো।
কিশোর সন্তুষ্ট হতে পারছে না। ভিলেনের চেহারাই যদি দেখা না গেল, রহস্যের এমন কিনারা করে লাভটা কি? পালিয়ে গেল। দেখতে কেমন। কোনোদিনই হয়তো জানবো না। মিস্টার হারলিংকেও আবার নতুন করে মরা। মাছের মতো হাঁ হয়ে গেল হঠাৎ তার মুখ।
কিশোর? ডাকলো রবিন।
কিশোর, হারলিং জিজ্ঞেস করলেন। কি হয়েছে?
চোখ মিটমিট করলো কিশোর। বহুদুর থেকে ফিরে এলো যেন। বাঁধন খুলতে হবে! ছাড়া পেতে হবে আমাদের! চেঁচিয়ে বললো সে। জলদি! নইলে ব্যাটাকে ধরতে পারবো না!
বিষণ ভঙ্গিতে মাথা নাড়লেন হারলিং। বৃথা চেষ্টা, কিশোর। লাভ হবে না। ও এতোক্ষণে অনেক দূরে চলে গেছে।
মনে হয় না…
বাইরে ঘোড়ার খুরের শব্দ হলো। খানিক পরেই ঝটকা দিয়ে খুলে গেল। দরজা। বিশালদেহী একজন লোক ঘরে ঢুকলেন, দুই গোয়েন্দা আগে দেখেনি। তাঁকে। ভুরু কুঁচকে তাকালেন পাঁচ বন্দির দিকে। কি ব্যাপার? গমগম করে। উঠলো ভারি কণ্ঠস্বর।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো দুই গোয়েন্দা। দুটো পরিচিত চেহারা চোখে পড়লো। তাদের। মুসা, আর মিসেস হারভে।
.
১৮.
বিশালদেহী মানুষটা সানতা কারলা কাউন্টির শেরিফ। মারাত্মক ঝুঁকি নিয়েছে বলে তিন গোয়েন্দার ওপর রেগে গেলেন। এমন একটা ভয়ানক চোরের পেছনে লাগতে কে বলেছে তোমাদেরকে।
ওই গুহায় আটকে যদি মেরে ফেলতো! বললেন মিসেস হারভে। ভাগ্যিস, দেয়ালে চিহ্নগুলো দেখতে পেয়েছিলো মুসা। নইলে তো জানাই যেতো না তোমাদেরকে কোথায় বেঁধে রেখেছে।
চুপ করে রইলো রবিন।
সরি, স্যার, শেরিফের দিকে চেয়ে বললো কিশোর। আগে আপনাকে জানানোর সুযোগই পাইনি। তাছাড়া মিস্টার হারলিঙের দেখা পেয়ে গেলাম। তিনি অভিজ্ঞ গোয়েন্দা। এলাম সঙ্গে সঙ্গে। চোরটা যে ওভাবে আমাদেরকে চমকে দেবে, ভাবতেই পারিনি।
তা ঠিকই বলেছে ওশেরিফ, হারলিং বললেন। গুহায় যে ডেঞ্জারাস এক ক্রিমিন্যালও ঢুকতো, জানতো না, ওরা। ওরা ঢুকেছিলো নিছক কৌতূহলের বশে, কিসে গোঙায় জানার জন্যে। সেকথা মিস্টার হারভেও জানেন।
যুতসই কোনো জবাব খুঁজে না পেয়ে আরও রেগে গেলেন শেরিফ। হারলিঙের দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধু ঘোঁৎঘোৎ করলেন।
আপনি যা-ই বলুন, শেরিফ, আবার বললেন হারলিং। কাজ দেখিয়েছে বটে ছেলেগুলো। বড়রা যা পারেনি, ওরকম একটা রহস্যের সমাধান করে দিয়েছে।