এ-জন্যেই লুকোচুরি খেলছেন? মানে, এরকম একটা…?
হ্যাঁ, রবিন কি বলতে চাইছে বুঝতে পারলেন হারলিং। সাইপ্রেসের নজর এড়িয়ে থাকতে চাইছি।
ওদের কথায় তেমন মন নেই, অন্ধকার গুহার দিকে তাকিয়ে নিচের ঠোঁটে চিমটি কেটে চলেছে গোয়েন্দাপ্রধান। হঠাৎ ঝিক করে উঠলো তার চোখের তারা, কেউ দেখতে পেলো না। ফিরলো। হীরাগুলো স্পেশাল কিছু, তাই না, মিস্টার হারলিং?
অবাক হলেন হারলিং। কি বোঝাতে চাইছে ছেলেটা? বললেন, আঁ! হ্যাঁ। কোনো জুয়েলারি কোম্পানি কিংবা দোকান থেকে চুরি হয়নি। হয়েছে স্যান ফ্রান্সিসকোর একটা মিউজিয়ম থেকে। আর ওগুলো…
রাফ ডায়মণ্ডস! বাক্যটা শেষ করে দিলো কিশোর।আকাটা হীরা। খনি। থেকে যে অবস্থায় তোলা হয়েছিলো সেভাবেই রেখে দিয়েছিলো। ঠিক? আর ওগুলো ছিলো ইণ্ডাস্ট্রিয়াল ডায়মণ্ড।
তুমি জানলে কিভাবে? সবগুলোই রাফ, তবে সব ইণ্ডাস্ট্রিয়াল নয়। মিউজিয়মে ডায়মণ্ড শো চলছিলো। দুনিয়ার অনেক দেশ থেকে হীরা. এনে রাখা হয়েছিলো মানুষকে দেখানোর জন্যে। কেন জানি না, বোধহয় রাফ ডায়মণ্ড বলেই, আর দেখতে সাধারণ পাথরের মতো বলেই বোধহয় বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি কর্তৃপক্ষ। সাইপ্রেসের চুরি করতে কোনো অসুবিধেই হয়নি, কারণ, পাহারা তেমন। কড়াকড়ি ছিলো না। কিন্তু তুমি এতো কথা জানলে কি করে?
ওরকম একটা পাথর এখানকার গুহায় পেয়েছি আমি। বাকিগুলো খুঁজে বের করছে মারটিন আর বেইরি। সব বোধহয় পায়নি এখনও। ওদের ব্যাগ থেকেই হয়তো কোনোভাবে শ্যাফটের মুখে পড়ে গিয়েছিলো পাথরটা। ..
তাহলে সত্যি সত্যি গুহায় আছে পাথরগুলো!
আনমনে মাথা দোলালো কিশোর। আমার বিশ্বাস, চুরি করার পরই এনে এখানে পাথরগুলো লুকিয়েছে আপনার সাইপ্রেস। অপেক্ষা করেছে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হওয়ার জন্যে। তার প্ল্যানমতোই হতো সব, মাঝখান থেকে মারটিন আর বেইরি বাগড়া না দিলে। বহু বছর ধরে এখানে সোনা আর হীরা খুঁজছে ওরা, সাইপ্রেসের পাথরগুলো পেয়ে ভেবেছে বুঝি খনিই পাওয়া গেছে।
কিন্তু এই এলাকায় কোনো হীরার খনি নেই!
নেই। কিন্তু ওদের দুজনকে বোঝায় কে? তাদের বিশ্বাস, আছে। পাথরগুলো পেয়ে সেই বিশ্বাস আরও জোরালো হলো।
তা ঠিক। কিন্তু একই জায়গায় পাথর জড়ো হয়ে পড়ে থাকতে দেখে ওদের সন্দেহ হয়নি? খনিতে ওভাবে পাথর থাকে না।
পেলে, হতো। তবে মনে হয় না এক জায়গায় পেয়েছে। ভালো করেই জানেন, স্যান অ্যানড্রিয়াস ফল্টের ওপর রয়েছে এই জায়গা। ফলে ওপরের মাটি খালি সরে যায়, আর ভূমিকম্প হয়,। গত কয়েক বছরে বড় ভূমিকম্প অবশ্য হয়নি। এখানে, তবে ছোট ছোট প্রায়ই হয়। গুহার ভেতরে ঢুকলেই তার প্রমাণ মেলে। যেখানে সেখানে পাথরের ধস।
তাতে কি? জানতে চাইলো মুসা।
তাতে? আমার মনে হয়, মাসখানেক আগে ছোট একটা ভূমিকম্প পাথরগুলোর অবস্থান নড়িয়ে দিয়েছিলো। ঝাঁকুনিতে ছড়িয়ে গিয়েছিলো। ফলে এক জায়গায় পায়নি মারটিন। ভেবেছে, খনিই আবিষ্কার করে বসেছে।
খাইছে! ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি ছড়ায়, তা কি সম্ভব?
সম্ভব, জবাব দিলেন হারলিং। হয় এরকম। আলগা মাটি সরে সরে যায় তো। আমি আরেকটা কথা ভাবছি এখন। হয়তো সাইপ্রেসকে খামোকা দোষ। দিচ্ছি। পাথরগুলো হয়তো ও চুরি করেনি, করেছে মারটিন আর বেইরি। এখানে এনে লুকিয়েছিলো, এখন তুলে নিচ্ছে।
কিন্তু, মিস্টার হারলিং, রবিন ধরলো কথাটা। ওরা দুজনে এখানে অনেক বছর ধরে আছে। সবাই চেনে। পাঁচ বছর নয়, আরও অনেক আগে এসেছে ওরা।
হাসলেন হারলিং। আগেই বলেছি, সব রকম ছদ্মবেশ ধরায় ওস্তাদ সাইপ্রেস। হতে পারে, ওদেরই একজন সে। দুই বুড়োর কোনো একজনকে সরিয়ে দিয়ে। নিজে সেই ছদ্মবেশ ধরে এখানে আরামসে লুকিয়ে রয়েছে পাঁচ বছর ধরে।
হ্যাঁ, এটা হতে পারে!
বোঝার উপায় এখন একটাই। গুহায় ঢুকে খুঁজে বের করতে হবে ওদেরকে। এক কাজ করো। একজন, র্যাঞ্চে চলে যাও। শেরিফকে গিয়ে নিয়ে এসো। ইতিমধ্যে আমরা গুহায় ঢুকে মারটিন আর বেইরিকে আটকানোর চেষ্টা করি।
মুসা, তুমি যাও, কিশোর বললো।
ক্ষুব্ধ হলো মুসা। এতো কষ্ট করলাম। এখন নাটকের শেষ দৃশ্যে এসে আমাকে তাড়াতে চাইছো?
-তুমিই যাও, মুসা, হারলিং বললেন। রবিনের পা ভালো না। তাড়াতাড়ি করতে পারবে না। আর কিশোরকে আমার দরকার। টীম ওয়ার্ক করছো তোমরা। যে যেটা ভালো পারবে সেটাই তো করা উচিত।
আর প্রতিবাদ করলো না মুসা। তবে খুশিও হতে পারলো না। নীরবে সরে গেল সেখান থেকে।
.
মারটিন যে গুহাটা খুঁড়ছিলো, ওটার শ্যাফটের মুখের কাছে এসে দাঁড়ালো রবিন, কিশোর আর হারলিং। পাথরটা সরিয়ে ভেতরে আগে ঢুকলেন ডিটেকটিভ।
ছোট গুহাটা শূন্য। ওপাশের দেয়ালে দেখা গেল সুড়ঙ্গমুখ, বোঝা গেল, ওটা দিয়েই পালিয়েছে মারটিন আর বেইরি। মানুষের তৈরি আরেকটা মাইন শ্যাফট, ঢালু হয়ে উঠে গেছে ওপর দিকে। পিস্তল বের করে নিয়ে আগে আগে চললেন হারলিং। পেছনে চক দিয়ে দেয়ালের গায়ে আশ্চর্যবোধক চিহ্ন আঁকতে আঁকতে চললো কিশোর।
মনে হচ্ছে উত্তরের শৈলশিরার দিকে চলেছি আমরা, রবিন বললো। বইয়ে লেখা আছে, ওদিকেই ছাউনি বানিয়ে থাকে মারটিন আর বেইরি।
হবে হয়তো, বললো কিশোর। ছাউনির মেঝে থেকেই হয়তো কোনো সুড়ঙ্গ খুঁড়ে নিয়েছে, কিংবা খোঁড়া ছিলো, সেটা দিয়েই ঢোকে খনিতে। ফলে তাদেরকে ঢুকতে-বেরোতে দেখে না কেউ।