তাঁরা যখন ঢোকেন, হয়তো বন্ধ থাকে। পর্বতের চূড়া থেকে নামারও কোনো গোপন পথ আছে, ভেতর দিয়ে। গোপন পথ আরও কতো আছে কে জানে! যাকগে। আমাদের যাওয়ার সময় হলো।
চলো।
টর্চের আলোয় পথ দেখে সেই বড় গুহাটায় ফিরে এলো দুজনে। আগের রাতে প্রথম যেটাতে ঢুকেছিলো।
সুড়ঙ্গ দিয়ে বেরিয়ে এলো বাইরে। পাশের ছায়া থেকে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে। পড়লো কে যেন। কঠিন থাবায় চেপে ধরলো মুসার হাত। ধরেছি! কর্কশ। কণ্ঠস্বর।
ঝট করে মুসার হাতের টর্চ উঠে গেল ওপর দিকে, লোকটার মুখে ফেলেই চমকে গেল। গালে কাটা দাগ, চোখে পড়ি। চেঁচিয়ে উঠলো, কিশোর, পালাও!
জ্বলে উঠলো আরেকটা টর্চ। আরেকজনের হাতে।
১৬.
চুপ! একেবারে চুপ! কড়া গলায় আদেশ দিলো পট্টিওয়ালা। নড়লেই মরবে।
কিছু করার সাহস হবে না আপনার, মরিয়া হয়ে বললো কিশোর। ভালো চাইলে ছেড়ে দিন। আশপাশে আমাদের লোক আছে।
হেসে উঠলো পট্টি। ধাপ্পা দিতে চাইছো? ভালো। তা এসো না, বসে দুটো কথা বলি।
কিছু বলবে না, কিশোর! চেঁচিয়ে বললো মুসা।
দ্বিতীয়জন কথা বলে উঠলো। পরিচিত কণ্ঠ। অসুবিধে নেই। বলতে পারো। মিস্টার হারলিং একজন ডিটেকটিভ। চমকে দিয়ে একটু মজা করলেন তোমাদের সঙ্গে।
রবিন! দুই বন্ধুকে অবাক করে দিয়ে হাসিমুখে আলোর সামনে এসে দাঁড়ালো। বই পড়ার পরে কিভাবে সাহায্যের জন্যে ছুটেছে, জানালো সে। শেষে বললো, গাড়িটা চলে যেতেই ছুটলাম আবার। গিয়ে পড়লাম মিস্টার হারলিঙের হাতে।
ড্যাম হারলিং নাম জানালেন ডিটেকটিভ। একটা বীমা কোম্পানির হয়ে কাজ করছি। রবিন বললো তোমাদের কথা। সোজা চলে এলাম এখানে। সাহায্য আনার জন্যে র্যাঞ্চে গিয়ে আর সময় নষ্ট করতে চাইলাম না।
মিস্টার হারলিংও ভেবেছেন, তোমরা বিপদে পড়বে, রবিন বললো।
হ্যাঁ। যাদের পিছু নিয়েছে, ওরা ডেঞ্জারাস লোক।
তাহলে আপনি মিস্টার হারলিং, গোয়েন্দা, অবশেষে মুখ খুললো কিশোর। সংক্ষেপে জানালো গুহায় কি কি দেখেছে, কিছু কিছু কথা বাদ দিয়ে।
মাথা ঝাঁকালেন হারলিং। বললাম না, আমাদের দেখে ফেলেছে। দেখুক। বেশি দূর যেতে পারবে না। আর ওই ব্যাগের মধ্যে হীরাই রেখেছে, যেগুলোর পেছনে লেগেছি আমি।
কিসের হীরা?? মুসা জিজ্ঞেস করলো।
ওগুলো খুঁজে বের করতেই এসেছি আমি, বুঝিয়ে বললেন হারলিং। ধুরন্ধর। এক রত্নচোরের পেছনে লেগেছি আমি। অনেকগুলো হীরা চুরি করেছে সে। ওর আসল নাম কেউ জানে না, বাড়ি কোথায়, তা-ও না। ছদ্মনাম স্যাড সাইপ্রেস। সারা ইউরোপের সব দেশের পুলিশ ওকে খুঁজছে। ওর পিছু নিয়ে এক হপ্তা আগে এসে পৌঁছেছি সানতা কারলায়। ওখানেই শুনলাম মোনিং ভ্যালির কথা। চট করে। মনে হলো, লুকিয়ে থাকার জন্যে এতো ভালো জায়গা আর হয় না। সাইপ্রেস হয়তো এখানেই লুকিয়েছে। দেখতে চলে এলাম।
ওর পিছু নিয়ে এসেছেন মানে? ওকে আসতে দেখেছেন?
দেখবো কি? ওর আসল চেহারা দেখতে কেমন তাই তো জানি না। পাঁচ বছর আগে ইউরোপ থেকে পালিয়েছে, পুলিশের তাড়া খেয়ে। ওখানকার পুলিশের ধারণা, আমেরিকায় চলে এসেছে সাইপ্রেস। নতুন কোনো ছদ্মবেশ নিয়েছে। ছদ্মবেশ ধরতে আর অভিনয় করায় ওস্তাদ সে। সেজন্যেই তাকে ধরা মুশকিল। বোঝাই যায় না কিছু।
নিচের ঠোঁটে বার দুই চিমটি কাটলো কিশোর। নিশ্চয় আপনার কোম্পানির বীমা করা কিছু হীরা চুরি করে পালিয়েছে?
হা। বছরখানেক আগে। ইউরোপ থেকে পালিয়ে আসার পর অনেক দিন চুপ করে ছিলো, তারপর ওই প্রথম চুরিটা করলো। চার বছর ওর খোঁজ না পেয়ে পুলিশ ভেবেছিলো চুরি করা ছেড়ে দিয়েছে সাইপ্রেস, কিংবা মারা গেছে। কিন্তু হীরা চুরির আলামত দেখেই ইন্টারপোল বলে দিলো, ওটা সাইপ্রেসের কাজ। ওরা শিওর, ও ছাড়া আর কেউ নয়।
দা মোডাস অপার্যানডি, মানে, অপারেশনের পদ্ধতি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাপার, একমত হলো কিশোর। ওর বলার ধরন রহস্যময় মনে হলো মুসার কাছে। বড় বড় অপরাধীদের নিজস্ব কিছু পদ্ধতি আছে, আর সে-কারণেই ধরা পড়ে। পদ্ধতি কিছুতেই বদলাতে পারে না ওরা। বেশি অভিজ্ঞ যারা, তারা খুব সামান্য নড়চড় করতে পারে। পুরোটা পারে না।
ঠিকই বলেছো, বললেন হারলিং। চার বছর চুপ করে ছিলো। কারণ নতুন দেশে নতুন বেশে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছিলো। তারপর সুযোগ বুঝে করে বসলো হাত সাফাই।
নতুন কি ছদ্মবেশ নিয়েছে, আন্দাজ করতে পেরেছেন? জিজ্ঞেস করলো রবিন। র্যাঞ্চের কেউ নয় তো?
হতে পারে। আমি জানলাম কিভাবে জানো? দুটো হীরা বিক্রি করেছে সে। প্রথমটা করেছে নেভাডার রিলোতে, আর দ্বিতীয়টা এখানে।
নেভাডা!
আপনার গাড়িতে তো নেভাডার প্লেট লাগানো। আমাদেরকে ধাক্কা দিয়ে পাহাড়ের ওপর থেকে ফেলে দিতে চেয়েছিলেন, বললো মুসা।
না, আমি না। নেভাডার প্লেট লাগানো অন্য কেউ হবে। সানতা কারলা থেকে মোনিং ভ্যালিতে যাচ্ছিলাম, দেখি পথের ওপর সাইকেল পড়ে রয়েছে। সন্দেহ হলো। তাই নেমে এসে দেখছিলাম। তারপর দেখলাম, আরও লোকজন আসছে। ভাবলাম, ওরা তোমাদের তুলে নিতে পারবে। আমার পরিচয় তখন তোমাদের কাছে ফাঁস করতে চাইনি। তুলে আনলেই তো জিজ্ঞেস করতে, আমি কে? অনেক কষ্টে সাইপ্রেসের চিহ্ন খুঁজে পেয়েছি, সামান্য কারণে সেটা ভণ্ডুল করতে চাইনি। বুঝতেই পারছো, সাইপ্রেসের মতো একজন চালাক লোক নিশ্চয় টের পেয়ে গেছে তার পেছনে চর লেগেছে। হয়তো নেভাডাতে আমাকে দেখেও ফেলেছে সে। তাই আমিও ছদ্মবেশ নিলাম। চোখের ওপর কালো পট্টি লাগালাম, গালে কাটা দাগ বানালাম। তারপর এসেছি সানতা কারলায়। এতো কিছু করেও তাকে ধোকা দিতে পেরেছি কিনা কে জানে? বুঝে গিয়ে মনে মনে হয়তো হাসছে। সাইপ্রেস।