নিশ্চয়ই। তবে তোমরা ছাড়া এখানে আর কেউ দেখেনি আমাদের।
আপনারা দেখেছেন আর কাউকে, এ গুহায়?
মাথা নাড়লো কমাণ্ডার। না। বললামই তো, কেউ যাতে না দেখে ফেলে সেভাবেই থাকি আমরা।
বুঝেছি, হতাশ মনে হলো কিশোরকে।
সেটা বুঝতে পারলো ক্রুগার। আর কোনো প্রশ্নের জবাব যাতে না দিতে হয় সে-জন্যে তাড়াতাড়ি বললো, তোমরা কি পথ হারিয়েছো? সাহায্য লাগবে?
হ্যাঁ, জবাব দিলো মুসা। বেরোনোর চেষ্টাই করছিলাম। এই সময় আপনি এলেন।
চলো, পথ দেখিয়ে দিই। মনে রাখবে, আমাদেরকে যে দেখেছো, সাবমেরিন দেখেছো, কথাটা কাউকে বলবে না। মুখ একেবারে বন্ধ। ও কে?
ও কে, বলুলো মুসা।
বলবো না, স্যার, বিশ্বাস করতে পারেন, কিশোর বললো।
এসো আমার সাথে।
একটা সুড়ঙ্গ ধরে আগে আগে চললো কমাণ্ডার। পেছনে দুই গোয়েন্দা। কয়েকটা গুহা, সুড়ঙ্গ, শাখাসুড়ঙ্গ পার হয়ে এসে ঢুকলো একটা বড় গুহায়। এটা সেই গুহা, যেখানে আগের রাতে আরেকজন ফ্রগম্যানকে দেখেছিলো মুসা।
আশা করি এবার বেরোতে পারবে?
পারবো, স্যার। থ্যাংক ইউ, বললো কিশোর।
হাসলো ক্রুগার। গুড লাক। বলে একটা সুড়ঙ্গে ঢুকে হারিয়ে গেল।
বেরোনোর জন্যে পা বাড়ালো মুসা।
কিশোর নড়লো না। তার চোখের দিকে চেয়ে গুঙিয়ে উঠলো মুসা, না না, বলো না। আর পারবো না…
মুসা, এখন আমি আরও শিওর হয়েছি, রহস্যের সমাধান আজ রাতের মধ্যেই করতে হবে। নকল ফিগারো জানে, আমরা বেরিয়ে যেতে পারবোই। তার মানে সে তাড়াহুড়ো করবে। আসলে, আমাদেরকে কয়েক ঘন্টা আটকে রাখতে চেয়েছে, যাতে কাজ সেরে নিরাপদে পালিয়ে যেতে পারে।
আমি ওর পথের কাঁটা হতে চাই না।
এই আমাদের সুযোগ, মুসা, বোঝানোর চেষ্টা করলো কিশোর। লোকটা আমাদের আটকে রেখে ভাবছে, আর কোনো বাধা নেই। ফলে তেমন সাবধান হবে না। আমাদের জানতেই হবে কে কি খুঁড়ছিলো, আর কেন গোঙায় গুহাটা?
বেশ, জানবো। চলো, গিয়ে মিস্টার হরভেকে বলে লোকজন নিয়ে আসি।
গুহা থেকে বেরোলেই দেখে ফেলবে আমাদেরকে। হয়তো আর যেতেই দেবে না। তাছাড়া হাতে সময়ও নেই। যা করার জলদি করতে হবে।
কি করবো? কোনদিকে কোথায় ঢুকবো তাই তো জানি না।
পথ বের করে নেবো। আমরা এখন জানি ওই খোঁড়ার সঙ্গে গোঙানির সম্পর্ক আছে।
কিভাবে বুঝলে?
শেরিফ, মিস্টার হারভে, কিংবা খবরের কাগজে কোথাও কোনো রকম খোঁড়াখুঁড়ির উল্লেখ নেই। তারমানে যে খুঁড়ছে, ব্যাপারটা গোপন রেখেছে। কোনো একটা চালাকি করে। যখনই খুঁড়তে আসে, গোঙানিটা শুরু হয়। তারমানে দুটো ব্যাপারের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে।
বেশ, তা নাহয় হলো। এখন আমরা কি করছি?
এখন তোমার অসাধারণ ক্ষমতাটা ব্যবহার করো। অন্ধকারেও যেভাবে পথ। খুঁজে পাও। ওটা ব্যবহার করে সাইড টানেলটা খুঁজে বের করো।
মাথা ঝোঁকালো মুসা। গভীর ভাবে ভাবলো কিছুক্ষণ। তারপর বললো, কিশোর, মনে হয় উত্তর-পশ্চিমে যেতে হবে আমাদের।
কম্পাস দেখলো কিশোর। বায়ে হাত তুলে বললো, ওদিকে।
চলো।
আবার নোম জ্বালানো হলো। মুসার অনুমান ঠিক। সুড়ঙ্গমুখে মোম ধরতেই কাত হয়ে গেল শিখা।
উত্তর-পশ্চিমে এগিয়ে চলেছে দুজনে। শোনা গেল আওয়াজটা।
গোঙানি! ফিসফিস করে বললো মুসা।
বন্ধ হয়নি।
কাছে এসে গেছি।
একটা সাইড টানেলের মুখ দেখা গেল। ওটার কাছে মোম ধরতেই প্রায় নিভে যাওয়ার উপক্রম হলো বাতি, গোঙানিও জোরালো। ঢুকে পড়লো ওরা ওটাতে। ছোট সুড়ঙ্গ। বেরিয়ে এলো একটা ছোট গুহায়।
কিশোর, কোথায় এসেছি জানি।
মোম নিভাও, ফিসফিস করে বললো কিশোর। টর্চ জ্বালবো।
টর্চের মুখে হাত চাপা দিলো দুজনেই, ফলে খুব সামান্য আলো বেরোলো, মৃদু এটা আভা ছড়িয়ে পড়লো মাত্র। ওই আলোতেই পথ দেখে দেখে সেই সুড়ঙ্গে ঢুকলো মুসা, যেটা থেকে তাদের ধরে নিয়ে গিয়েছিলো নকল ফিগারো।
জোরালো হচ্ছে গোঙানির আওয়াজ।
চলে এলো আরেকটা সাইড টানেলের মুখে, আরেকবার এসেছিলো ওখানে। শোনা গেল খোঁড়ার শব্দ।
আছে! ফিসফিসিয়ে বললো মুসা।
এসো!
নিঃশব্দে শাখা-সুড়ঙ্গ ধরে এগোলো দুজনে। লম্বা, সোজাসুজি এগিয়েছে পথ। কিছুদূর এগিয়ে আলো দেখতে পেলো। থামতে ইশারা করলো কিশোর।
সুড়ঙ্গের পাশের দেয়ালে একটা মাইন শ্যাফটের ভেতর দিয়ে আলো আসছে। মুখের কাছে স্তূপ হয়ে আছে মাটি আর পাথর। খোঁড়ার শব্দ আসছে ওই গর্তের ভেতর থেকেই।
খুব সাবধানে এগিয়ে ভেতরে উঁকি দিলো ছেলেরা। উজ্জ্বল আলো চোখ ধাধিয়ে দিলো তাদের। থেমে থেমে হয় গোঙানির শব্দ। থেমে গিয়েছিলো, হঠাৎ এসে যেন কানে ঝাপটা মারলো, এতো জোরে, মনে হলো কানের পর্দা ফেটে যাবে। প্রতিধ্বনি তুলতে তুলতে ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল আবার।
কানে হাত চাপা দিয়ে রেখেছে মুসা।
ওর হাত ধরে টানলো কিশোর, দেখো!
চোখে সয়ে এসেছে আলো। দেখলো, ঝুঁকে রয়েছে একটা লোক। হাতে বেলচা।
ঢোক গিললো মুসা।
সোজা হলো মূর্তিটা। বেলচা ফেলে দিয়ে একটা গাঁইতি তুলে নিলো। স্পষ্ট দেখা গেল তার চেহারা। শাদা চুল, শাদা দাড়ি।
বুড়ো ডিন মারটিন!
.
১৫.
চুপচাপ দাঁড়িয়ে বুড়োর কাজ দেখছে দুই গোয়েন্দা। কয়েক মিনিট পর পরই কানে আঙুল দিতে হচ্ছে, গোঙানির আওয়াজের জন্যে। কিন্তু শব্দটা যেন শুনতেই পাচ্ছে না বুড়ো। একমনে গাঁইতি চালিয়ে যাচ্ছে। গর্ত করছে একটা দেয়ালের গোড়ায়।