ফোঁস করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো মুসা।
বদলে গেল কিশোরের চেহারা। গম্ভীর কণ্ঠে অনেকটা বড়দের মতো করে পাল্টা প্রশ্ন করলো, আপনি এখানে কি করছেন, স্যার?…আমরা অনুমতি নিয়েই এসেছি, র্যাঞ্চের মালিকের কাছ থেকে। আপনি এসেছেন পানির তলা দিয়ে, কোনো গোপন পথে। অনধিকার প্রবেশ করেছেন।
মুখোশ খুললো লোকটা। সুন্দর চেহারা। সোনালি চুল। হাসলো কিশোরের দিকে তাকিয়ে। তারপর পিঠের এয়ার-ট্যাংক খুলে নামিয়ে রাখলো মাটিতে।
খোকা, এমনভাবে কথা বলছো যেন নেভির অ্যাডমিরাল। অনুমতি নিয়ে এসেছে কিনা সেকথা জিজ্ঞেস করিনি। আমি অবাক হচ্ছি, এই রাত দুপুরে হেনরি ফিগারোর গুহায় কি-জন্যে ঢুকেছো?
অ্যাডমিরাল? লোকটার কথার জবাব দিলো না কিশোর। নিশ্চয়ই! আপনি ফ্রগম্যান, না? নেভির লোক। চ্যানেল আইল্যাণ্ডস-এ নোঙর করেছে আপনাদের নৌ-বহর।
হ্যাঁ। একটা গোপন মিশনে এসেছি আমরা এখানে। আশা করি আমার সঙ্গে। দেখা হয়ে যাওয়ার কথাটা গোপনই রাখবে। অস্বাভাবিক কিছু দেখেছো এদিককার পানিতে?
না, জবাব দিলো মুসা।
না বলতে গিয়েও থেমে গেল কিশোর। মনে পড়ে গেল পানিতে দেখা সেই অদ্ভুত জীবটার কথা। দেখেছি, স্যার। তিমিও না, হাঙরও না..
হ্যাঁ হ্যাঁ, মুসারও মনে পড়লো। আকারটা অনেকটা সিগারের মতো। সাগরের দিকে চলে গেল।
সাবমেরিন, মুসা! চেঁচিয়ে উঠলো কিশোর। এখন বুঝতে পারছি। ওটা একটা মিজেট সাবমেরিন, বামন ডুবোজাহাজ। সে-জুন্যেই শক্ত হয়ে ছিলো, চলার সময় শরীর বাকেনি। কিন্তু এঞ্জিনের শব্দ শুনলাম না কেন? পানির নিচে তো শব্দ অনেক দূর পর্যন্ত ছড়ায়।
কালো হয়ে গেল ফ্রগম্যানের মুখ। ব্যাপারটা খুব সিরিয়াস, বুঝেছো? টপ সিক্রেট, ওই যে এঞ্জিনের শব্দ হয় না। তোমাদেরকে বোধহয় আটকাতেই হচ্ছে।
আটকাবেন? প্রতিধ্বনি করলো যেন মুসা।
নীরবে চলে, আনমনে বিড়বিড় করলো কিশোর। তারমানে সোনার সিসটেম ধরতে পারে না ওটার অস্তিত্ব। মুসা, টপ সিক্রেট তো হবেই। ফ্রগম্যানের দিকে ফিরে বললো, আমাদের আটকানোর দরকার নেই, মিস্টার
ক্রুগার, নাম বললো লোকটা। কমাণ্ডার ক্রুগার। সরি, আটকাতেই হচ্ছে। অ্যাডমিরালকে জানাবো। ছেড়ে দিলে কোনো অসুবিধে হবে না বুঝলে, তিনি ছেড়ে দেবেন।
বোদ্ধা মানুষের মতো মাথা ঝোঁকালো কিশোর। যেন কমাণ্ডারের কথা মেনে নিলো। আমার নাম কিশোর পাশা। ও আমার বন্ধু মুসা আমান। ড্রাইভিং বেল্টে ঝোলানো একটা পানিরোধক পাত্রের মুখ খুলে তাতে হাত ঢুকিয়ে বের করে আনলো একটা খাম। তার ভেতর থেকে বের করলো একটা কার্ড আর একটা সার্টিফিকেট। বাড়িয়ে দিয়ে বললো, পড়ে দেখুন। বুঝতে পারবেন।
কার্ডটা তিন গোয়েন্দার। আর সার্টিফিকেটটা লস অ্যাঞ্জেলেসের পুলিশ চীফ ইয়ান ফ্লেচারের।
পড়লো ক্রুগার।
একটা জরুরী কেসে জড়িয়ে পড়েছি আমরা, জানালো কিশোর। এই গুহায় ঢুকেছি সে-জন্যেই। আমি শিওর, কমাণ্ডার সাহেব, আপনার অ্যাডমিরাল আমাদেরকে সাহায্য করার কথাই বলবেন আপনাকে।
দ্বিধা করছে ক্রুগার। ছেলেটাকে মিথ্যুক মনে হচ্ছে না। কথাবার্তায় ওজন আছে, আর অপূর্ব সুন্দর কালো চোখ দুটোর পেছনে নিশ্চয় কাজ করছে ক্ষুরধার একটা ব্রেন। সার্টিফিকেটটা আসলই মনে হচ্ছে।
এক কাজ করুন না, পরামর্শ দিলো কিশোর। আপনার জাহাজের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলুন, চীফ ইয়ান ফ্লেচারকে একটা ফোন করতে। জিজ্ঞেস করতে বলুন তিন গোয়েন্দার কথা। আর কোনো সন্দেহ থাকবে না আপনার।
কিশোর, এখান থেকে উনি কি করে যোগাযোগ করবেন?
এটাও জানো না। জাহাজের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকে ফ্রগম্যানদের! সঙ্গে লং রেঞ্জ রেডিও থাকে।
হাসলো কমাণ্ডার। সাংঘাতিক চালাক ছেলে তুমি। বেশ, বসো এখানে। আমি আসছি। বসে থাকো চুপ করে।
গুহার অন্ধকার কোণে চলে গেল ক্রুগার। কৌতূহলী চোখে সেদিকে তাকিয়ে রইলো ছেলেরা, তবে দেখতে পেলো না কমাণ্ডার কি করছে।
অবশেষে হাসিমুখে ফিরে এলো কমাণ্ডার। সিকিউরিটি খোঁজ নিয়েছে। তোমাদেরকে আটকাতে হবে না।
এতো তাড়াতাড়ি জেনে ফেললেন? মুসা অবাক।
দরকারের সময় এর চেয়ে তাড়াতাড়ি করতে হয় আমাদেরকে।
মিস্টার কমাণ্ডার, কিশোর বললো। আমাদের ব্যাপারে তো অনেক খোঁজ খবর নিলেন। এবার আমি আপনাকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?
আমাকে? হেসে মাথা নাড়লো কমাণ্ডার। সরি, ইয়াংম্যান। জবাব দিতে পারবো না। টপ সিক্রেট…
আপনার কাজের কথা জিজ্ঞেস করবো না, স্যার। আমি এই গুহার ব্যাপারে কিছু তথ্য জানতে চাই। কাল রাতে আপনিই কি এসেছিলেন? যাকে দেখে। ফেলেছিলো আমার এই বন্ধুটি?
আমি না। আমার এক কলিগ গিয়ে রিপোর্ট করেছে, তাকে নাকি কে দেখে ফেলেছে।
যাক, বললো মুসা। একটা রহস্যের সমাধান হলো।
আরেকটা কথা, আঙুল তুললো কিশোর। আপনারা কি গুহার ভেতরে কিছু পরিবর্তন করেছেন? মানে, কোনো সুড়ঙ্গের মুখ খুলেছেন, কিংবা নতুন কোনো গুহা খুঁড়েছেন?
না।
এমন কিছু করেছেন, যাতে গোঙানো শুরু করেছে একটা গুহা?
মোটেই না। ওই গোঙানি শুনে আমরাও অবাক হয়েছি। এই এলাকায় নতুন এসেছি আমরা, আর এই গুহায়ও ঢুকেছি মাত্র কয়েকবার। ভেবেছি, সব সময়ই বুঝি ওরকম গোঙায় গুহাটা।
আর, নিশ্চয় আপনাদের ওপর আদেশ রয়েছে, অলক্ষ্যে কাজ করার? আই মীন, কেউ যেন আপনাদের দেখে না ফেলে?