পারলে করোগে তুমি। আমি যাচ্ছি না। বললো বটে মুসা, কিন্তু কিশোর রওনা হতেই উঠে সুড়সুড় করে চললো তার পেছনে, যেন দেহের সঙ্গে ছায়া।
দ্বিতীয় সুড়ঙ্গে ঢুকলো দুজনে।
সমব্রেরোটায় আঙুল ছোঁয়ালো কিশোর, ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়লো ওটা।
খাইছে! সাহস বাড়লো মুসার। কালো জ্যাকেটটা ধরতে গেল। পোড়া কাগজের ছাইয়ের মতো কাপড়ের ওই অংশটা ঝরে পড়ে গেল কঙ্কালের শরীর থেকে। পিস্তল ধরা আঙুলগুলোতে হাত বোলাতে গেল সে। খসে পড়লো হাড়, খটাং করে পাথুরে মেঝেতে পড়লো পিস্তলটা। দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়ে অস্বাভাবিক শব্দ হলো। চমকে, লাফিয়ে সরে এলো মুসা।
ঝুঁকে দেখছে কিশোর। অনেক পুরনো কঙ্কাল..ওই পিস্তলটাও…মুসা, আর কোনো সন্দেহ নেই।
কিসের সন্দেহ?
কঙ্কালটা হেনরি ফিগারোর। আসলে ফিগারো, তার কথা বিচিত্র প্রতিধ্বনি তুললো গুহার উঁচু ছাতে বাড়ি খেয়ে। যেন বহু দূর থেকে আসা কোনো ভূতুড়ে কণ্ঠস্বর।
আসল ফিগারো? তারমানে এতোগুলো বছর এখানেই ছিলো সে, অথচ কেউ দেখেনি?
তাই তো মনে হয়। যে রাতে এই গুহায় ঢুকেছিলো, হয়তো সে-রাতেই মারা গিয়েছিলো হতভাগ্য মানুষটা, বিষণ্ণ শোনালো কিশোরের কণ্ঠ। কেউ ভাবতেই পারেনি তার আঘাতটা ছিলো মারাত্মক। তবে, সেকালে এমন সব আঘাত, এমন সব রোগে মানুষ মারা যেতো, যেগুলোকে আজকাল কেয়ারই করি না আমরা। মেডিক্যাল সাইন্সের অসাধারণ উ…
সে-রাতেই মারা গেছে কি করে বুঝলে? বাধা দিয়ে বললো মুসা। এমনও হতে পারে, অনেক দিন বেঁচে ছিলো ফিগারো। এখানেই বাস করেছে। তারপর একদিন মারা গেছে।
মাথা নাড়লো কিশোর। না, আমার তা মনে হয় না। দেখো, কঙ্কালটার ধারেকাছে কোনো খারারের চিহ্ন নেই। পানিও খেতে পারেনি বেচারা। গিয়ে টেস্ট করে দেখতে পারো, পুকুরের পানি নোনা।
অন্য কোথাও বসে খেয়েছে হয়তো।
হয়তো। কিন্তু তাহলে কি কারণে মারা গেল? কেউ হামলা চালিয়ে মেরে রেখে গেলে তারও চিহ্ন থাকতো। ধস্তাধস্তি কিংবা অন্য কিছু…অন্তত আরও দুয়েকটা কঙ্কাল পড়ে থাকতো।
হ্যাঁ, তোমার কথায় যুক্তি আছে।
আরেকটা ব্যাপার, কঙ্কালটার অবস্থান দেখো। মৃত্যুর আগে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসেছিলো। হাতে পিস্তল, তারমানে আশঙ্কা করছিলো আক্রমণ আসতে পারে। শত্রুকে পাল্টা আঘাত হানার জন্যে তৈরি হয়েছিলো। দেখি, পিস্তলটা তোলো তো।
তুলে দেখলো মুসা। ভরা ম্যাগাজিন। একটা গুলিও খরচ হয়নি।
তারমানে শত্রু আসেনি। কেউ তাকে খুঁজে পায়নি। আর ওই আঘাতের কারণেই মারা গেছে বেচারা। একটা ব্যাপার পরিষ্কার হলো, শেরিফ আর তার লোকদের চেয়ে এসব গুহাসুড়ঙ্গ অনেক বেশি চিনতো ফিগারো।
না চিনলেই বোধহয় ভালো হতো। ধরা পড়তো, তার জখমের চিকিৎসা। হতো।
কি হতো তাতে? চিকিৎসা করে ভালো করে নিয়ে গিয়েফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিতো। তার চেয়ে এই তো ভালো হলো। কিংবদন্তী হয়ে গেল হেনরি ফিগারো, তার অনুসারীদের কাছে হিরো হয়ে গেল।
তা হলো…
আর ওই কিংবদন্তী এখন কাজে লাগাচ্ছে কেউ একজন। ভয় দেখায়। যাতে গুহার কাছে কেউ না আসে। প্রশ্ন হলো, কেন?
হয়তো র্যাঞ্চ থেকে ভাগাতে চায় মিস্টার হারভেকে।
মনে হয় না। অন্য কোনো কারণ আছে। ভেবে দেখো, মিস্টার হারভেকে তাড়াতে চাইলে তিনি আসার পর পরই ভয় দেখাতো। অথচ গোঙানিটা শুরু হয়েছে মাত্র এক মাস আগে, তিনি আসার অনেক পরে।
ঠিক বলেছো। আরেকটা ব্যাপার, কিশোর, উত্তেজিত হয়ে উঠলো মুসা। আজকের আগে আর কেউ কেন হেনরি ফিগারোকে দেখলো না? মানে জ্যান্ত ফিগারোকে, আমরা যাকে দেখেছি? শেরিফ আর মিস্টার হারভে যখন ঢুকলেন, তখন দেখা দিলো না কেন?
জানি না। তবে আজই প্রথম লোক ঢোকার পরে থামলো না গোঙানি। আজ রাতে ফাঁকি দিয়ে ঢুকে পড়েছি আমরা, গোঙানি থামেনি, ফিগারোও দেখা দিয়েছে। অবশ্যই নকল ফিগারো। তারমানে এই দাঁড়াচ্ছে, তাকে দেখতে পেয়েছিই গোঙানি থামেনি বলে।
মানে?
বলতে পারবো না, মুসা। তবে শিওর হলাম, শুধু প্রাকৃতিকূ কারণে গোঙায় না গুহাটা, আরও কোনো ব্যাপার আছে। কিছুক্ষণ আগে খোঁড়ার শব্দ শুনেছিলাম ৩ না? কে কি খুঁড়ছিলো দেখা দরকার।
তাই তো! ভুলেই গিয়েছিলাম। তোমার কি মনে হয়? সত্যি সত্যি হীরার খনি আছে এখানে?
খুঁড়ছে যখন, কোনো একটা ব্যাপার নিশ্চয় আছে, ঘুরিয়ে জবাব দিলো কিশোর।
চলো, মিস্টার হারভেকে গিয়ে জানাই।
ভ্রূকুটি করলো কিশোর। রহস্যের সমাধান নিজে করতে না পেরে অন্য কারও সাহায্য চাওয়ার পক্ষপাতি নয় গোয়েন্দাপ্রধান। তবু কিছু কিছু বিশেষ সময়ে যখন তিন গোয়েন্দার জন্যে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে কাজ করা, সাহায্য নিতেই হয়। কথাটা, বলেছো ঠিকই। বেশ, চলো পিস্তলটা হাতে রাখো। দেখি, বেরোনোর পথ পাই কিনা?
আবার মোম জ্বেলে সুড়ঙ্গমুখ পরীক্ষা করতে লাগলো ওরা।
হঠাৎ পানিতে মৃদু আলোড়ন হলো, ঢেউ উঠলো। ভেসে উঠছে কি যেন!
পাঁই করে ঘুরে আলো ফেললো কিশোর। ধক করে উঠলো-বুক। কালো চকচকে একটা দেহ ভেসে উঠেছে।
হাঁ হয়ে গেল দুই গোয়েন্দা।
চকচকে কালো জীবটা উঠে আসছে খাড়ির পাড়ে। পানি ঝড়ছে পিচ্ছিল চামড়া থেকে।
.
১৪.
তোমরা এখানে কি করছো? জিজ্ঞেস করলো জীবটা।
মানুষ! পরনে কালো রবারের ওয়েট-স্যুট, পায়ে সুইম ফিন, পিঠে বাঁধা ডাবল এয়ার ট্যাংক।