বাইরে থেকে কিছু দিয়ে আটকে দিয়েছে, কিশোর বললো। ঠেলে লাভ হবে
তাহলে আর কি? দারুণ একখান কর্ম করে গেছে! ব্যাটা কি আসলেই হেনরি। ফিগারো? প্রফেসর হারকসনের তো ধারণা, ফিগারো বেঁচে আছে।
হয়তো আছে। তবে দেখে ওকে ফিগারোর মতো লাগলো না। ভুলে যাচ্ছো, ওর বয়স এখন প্রায় একশো হওয়ার কথা। অথচ যে আমাদেরকে আটকে গেল, সে একেবারে তরুণ, যেন সেই ঊনিশ শো আট সালের ফিগারো।
তাই তো!
তাছাড়া, লক্ষ্য করেছে, তার চেহারার কোনো রকম পরিবর্তন হয়নি? কথা বলার সময় মুখ নড়ে না, কাপে না, এরকম মানুষ দেখেছো কখনও?
দেখিনি। কিন্তু…
ব্যাটা মুখোশ পরে এসেছিলো। রবারের ওরকম মুখোশ কিনতে পাওয়া যায়, পরলে আসলের মতোই দেখায়। কথাও বলেছে সে খুব কম। হয়তো ভয়, গলা চিনে ফেলবো আমরা।
আমি চিনতে পারিনি। তুমি?
আমিও না। তবে একটা ব্যাপার শিওর, আমাদের ক্ষতি করার ইচ্ছে ছিল না। তাহলে এখানে আটকে রেখে যেতো না।
নেই মানে কি বলছো? জ্যান্ত কবর দিয়ে রেখে গেছে, এরচে বেশি আর কি করবে?
আরও অনেক কিছুই করতে পারতো। এখানে আমরা মরবো না। আগে হোক পরে হোক, আমাদেরকে খুঁজে বের করা হবেই। এবং এটা সে জানে। বাতাস আছে এখানে। দম বন্ধ হয়ে মরছি না। কোনো কারণে কিছুক্ষণের জন্যে আটকে দিয়েছে আমাদেরকে, যাতে কাজ সারতে পারে। কাজেই খুব তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে আমাদেরকে।
পারবো? তার চেয়ে চুপ করে বসেই থাকি। কেউ এসে খুঁজে বের করুক।
রহস্যের সামাধান করতে চাইলে আজ রাতের মধ্যেই করতে হবে। বসে থাকলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। যেদিক দিয়ে ঢুকেছি সেদিক দিয়ে বেরোতে পারবো না, অন্য দিক দিয়েই চেষ্টা করে দেখি। এসো।
সরু পথে কিশোরকে অনুসরণ করলো মুসা। চলেছে তো চলেছেই, সুড়ঙ্গ আর শেষ হয় না। অন্য কোনো সুড়ঙ্গও বেরোয়নি ওটা থেকে। ওদের মনে হলো মাইলের পর মাইল পেরিয়ে এসেছে। হঠাৎ, থমকে দাঁড়ালো ওরা। সামনেও পথ রুদ্ধ, পাথর পড়ে।
খাইছে! এবার? এবার কি করবো?
এরকম ভাবে আটকা পড়বো ভাবিনি, এই প্রথম সামান্য উদ্বিগ্ন মনে হলো গোয়েন্দপ্রাধানকে। ঝুঁকে পাথরগুলো ভালো করে দেখলো সে। উত্তেজিত হয়ে উঠলো। মুসা, এই বড় পাথরটা সরানো হয়েছিলো!
ঝুঁকে মুসাও দেখলো। মেঝেতে ঘষার দাগ রয়েছে। একমত হলো কিশোরের সঙ্গে। দুজনে মিলে আবার পাথরটা সরানোর চেষ্টা করলো। পারলো না। গর্তের মুখে এমনভাবে বসানো, হাত দিয়ে চেপে ধরার উপায় নেই, জোর পাওয়া যায় না, ফলে টেনে বের করা যায় না।
এই সুড়ঙ্গ নিশ্চয় লোকটার চেনা, চারপাশে আলো ফেলে দেখছে কিশোর। ঢোকে, বেরোয়। নিশ্চয় কোনো ডাণ্ডা-টাপ্তা দিয়ে চাড় দিয়ে…ওই যে, ডাণ্ডাটা। ওই তো, দেয়ালের ধারে।
তুলে আনলো মুসা। ডাণ্ডার মাথাটা চ্যাপ্টা, অনেকটা শাবলের মতো। গর্তের মুখে বসানো পাথরের ফাঁকে সহজেই ঢুকে গেল চ্যাপ্টা মাথাটা। জোরে চাড় দিতেই খুলে এলো পাথর। বেরিয়ে পড়লো কালো ফোকর। হাঁটু গেড়ে বসে : ওপাশে আলো ফেললো কিশোর। আরেকটা গুহা মনে হচ্ছে।
হামাগুড়ি দিয়ে গুহাটায় ঢুকে পড়লো দুজনে। সামনের দিকে আলো ফেলেই স্থির হয়ে গেল।
গুহার মাঝখানে বিরাট এক খাড়ি!
.
১৩.
টর্চের আলোয় চিকচিক করছে খুঁড়ির কালো পানি।
ঢোক গিললো মুসা। এখানেই তো বাস করেন বুড়ো মানুষটা!
তার কথা যেন কানেই ঢুকলো না কিশোরের। তাহলে পুকুর একটা সত্যিই। আছে। ইণ্ডিয়ানদের কথাই ঠিক।
চলো, ভাগি!
খাড়ি আছে বলেই যে বুড়ো মানুষটাও থাকবে, এমন কোনো কথা নেই।
একটা কথা যখন সত্যি হয়েছে, আরেকটাও হতে পারে। কে জানে, অনেক দিন ধরে হয়তো আটকা পড়ে আছেন জনাব বুড়ো মানুষটা। হয়তো সাংঘাতিক খিদে পেয়েছে তাঁর। ধরতে পারলে কোৎ করে গিলে ফেলবেন আমাদেরকে।
গুহার দেয়ালে আরেকবার আলো ফেলে দেখলো কিশোর। অনেকগুলো সুড়ঙ্গমুখ রয়েছে। দেখি, বেরোনোর পথ মেলে কিনা। মোম জ্বালো।
দুটো মুখ পরীক্ষা করা হলো। আরেকটা মুখ দেখতে এগোচ্ছে মুসা, কিশোরের ডাকে চমকে ফিরে তাকালো। প্রথমে কিছুই চোখে পড়লো না।
ওই যে দেখো…, ফিসফিস করে বললো কিশোর। ওই যে…
মুসাও দেখলো। খানিক আগে দ্বিতীয় যে সুড়ঙ্গটা পরীক্ষা করেছে, তার ভেতরে একটা খাজের মধ্যে বসে রয়েছে একটা ছোট্ট মানুষ। কালো পোশাক। কালো সমব্রেরো। কালো বুট। হাতে পুরনো আমলের একটা পিস্তল। তাদের দিকে তাকিয়ে যেন হাসছে।
পিস্তল ধরে রাখা হাতটা জীবন্ত নয়, আঙুলের শাচটা হাড় শুধু, তাতে মাংস নেই। কঙ্কাল!
আল্লাহরে! বলে চেঁচিয়ে উঠলো মুসা। ঘুরে দিলো দৌড়। যে সুড়ঙ্গ দিয়ে গুহায় ঢুকেছে, আবার গিয়ে ঢুকলো ওটাতে।
কিশোরও ছুটলো তার পেছনে। ডাকলো, আরে থামো থামো, শোনো! কোথায় যাচ্ছো?
থামলো মুসা। মাথায় হাত দিয়ে ধপ করে বসে পড়লো মেঝেতে।
কিশোরও বসলো তার পাশে। বেশি আতঙ্কিত হলে মাথার ঠিক থাকে না, ঠিকমতো কাজ করতে পারে না ব্রেন। এ-ধরনের পরিবেশে এই পরিস্থিতিতে এরকম হওয়াটাই অবশ্য স্বাভাবিক। স্নায়ুকে উত্তেজিত করে নার্ভাস করে দেয় মানুষকে। অথচ, ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখো, ওটা অতি সাধারণ একটা কঙ্কাল..
দুর! অধৈর্য হয়ে হাত নাড়লো মুসা। তোমার লেকচার থামাবে দয়া করে?
ওই কঙ্কালটা পরীক্ষা করে দেখা দরকার।