আমরা মরেছি কিনা দেখতে এসেছিলো হারামজাদা, রেগে গেল মুসা। মেরে ফেলতো। অন্যান্য গাড়ি আসতে দেখে পালিয়েছে।
হয়তো নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটলো কিশোর। শহরে প্রফেসরের সঙ্গেও দেখা হয়েছে, না?
ডিন মারটিন আর কার্ল বেইরির সঙ্গেও। তিনজনই গিয়েছিলো, রবিন মনে করিয়ে দিলো।
গিরিপথটা এখান থেকে দূরে নয়, যুক্তি দেখালো কিশোর। র্যাঞ্চের কেউ গাড়ি নিয়ে চলে যেতে পারে, তাতে কয়েক মিনিটের বেশি লাগবে না।
তা ঠিক।
তবু, নেভাডার লাইসেন্স প্লেট, আরেকবার ঠোঁটে চিমটি কাটলো কিশোর। এখানে কারও গাড়ি…সবারই ক্যালিফোর্নিয়ার রেজিস্ট্রেশন।
আমাদের অচেনা কারও কথা বলছো? মুসার প্রশ্ন।
হতেও পারে, বললো রবিন। পট্টিওয়ালাকেই তো আমরা চিনি না।
হু, মাথা দোলালো কিশোর। চলো, কাজ শুরু করি। আমি চট করে বইটা উল্টে নিই। তোমরা গিয়ে স্কুবা ইকুইপমেন্টগুলো চেক করো। ট্যাংকগুলো কোনো কিছুতেই জড়িয়ে নেবে, যাতে দেখে কেউ চিনতে না পারে। সাইকেলের ক্যারিয়ারে তুলে নিও। মোমের প্যাকেট, হ্যাট, আর আমি যে পোঁটলাটা এনেছি, ওটাও নিও।
তোমার উদ্দেশ্যটা কি?
যেতে যেতে বলবো। হাতঘড়ি দেখলো কিশোর। জলদি করতে হবে। নইলে সূর্য ডোবার আগে মোনিং ভ্যালিতে পৌঁছুতে পারবো না। আজ রাতেই হয়তো রহস্যের সমাধান করে ফেলতে পারবো।
আধঘন্টা পর গোলাঘরে ঢুকলো কিশোর। হাতের বইটা নাড়লো। জবাব বোধহয় পেয়েছি, ঘোষণা করলো সে। এতে বলছে, পঞ্চাশ বছর আগে ডেভিল মাউনটেইনে খনির বেশির ভাগ শ্যাফট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সোনাদানা কিছু। পায়নি, তাই বন্ধ করেছে। সেই সময়ই বন্ধ হয়ে যায় গোঙানি।
তারমানে ওগুলোর কোনোটা নতুন করে ভোলা হয়েছে? রবিন বললো। আর ওটা দিয়ে বাতাস পাস করে বলেই শব্দ হয়।
সে-রকমই তো মনে হয়। তবে প্রশ্ন আছে। যাকগে, তোমরা রেডি?
রেডি, বললো মুসা।
বেশ। হ্যাট পরো। আমাকে একটা দাও। পরে এখান থেকে বেরোবো।
চটের বস্তায় ট্যাংকগুলো জড়িয়ে নিয়েছে। হ্যাট পরে মালপত্র নিয়ে বেরোলো তিন গোয়েন্দা। সাইকেলে চাপলো। ক্যারিয়ারে ভারি বোঝা, ঝাঁকুনি লাগলেই মাতালের মতো টলছে, বেশ কায়দা করে ব্যালান্স রাখতে হচ্ছে। সাবধানে হ্যাণ্ডেল ধরে রেখে প্যাডাল ঘোরালো ওরা।
ব্যথায় আঁউক করে উঠলো রবিন।
কি হলো? পায়ে খুব লাগছে? জিজ্ঞেস করলো মুসা।
মাথা ঝাঁকালো রবিন। কিশোর, তোমরা যাও। আমি বোধহয় পারবো না। থেকেই যাই।
চিন্তিত ভঙ্গিতে তার দিকে তাকালো কিশোর। না থাকতে হবে না, রবিন। তোমার ওই মচকানো পা সুবিধেই করে দিলো। ফাঁকি দেয়া সহজ হবে।
ফাঁকি? ভুরু কোঁচকানো মুসা।
ওই যে মিলিটারি ক্লাসিক পদ্ধতিঃ ক্যাম্পের আগুন আর গাছের কাণ্ড, দেখতে লাগে কামানের মতো, খুব সহজ ব্যাখ্যা দিলো কিশোর, যার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারলো না মুসা। রবিন, তোমার ইকুইপমেন্ট খুলে রেখে এসো। বোঝ না থাকলে সাইকেল চালাতে কষ্ট হবে না।
চেষ্টা করে দেখলো রবিন। চালাতে পারলো। গেটের দিকে এগোলো তিনজনে। বারান্দা থেকে হাত নাড়লেন মিসেস হারভে। বেশি দেরি করো না কিন্তু। সাবধান থেকো।
র্যাঞ্চের বাইরে এসেই মুখ ঘোরালো ওরা, মোনিং ভ্যালির দিকে চললল। সেই লোহার গেটটার কাছে পৌঁছে থামলো। সাইকেল আর মালপত্র লুকানো ঘন ঝোপের ভেতরে।
শোনো, কিশোর বললো। গুহায় ঢুকবো আমরা। এমনভাবে, যাতে কেউ দেখে না ফেলে।
বুঝলাম, কান চুলকালো মুসা। গোঙানি-ব্যাটাকে অবাক করে দেবো।
ঠিক। আমার ধারণা, এই মুহূর্তে তীক্ষ্ণ নজর রাখা হচ্ছে আমাদের ওপর।
কি করে ফাঁকি দেবো ওকে? রবিনের প্রশ্ন।
পানির নিচ দিয়ে যাবো। ইকুইপমেন্টগুলো কেন আনলাম? হিসেব করে দেখেছি, এখন জোয়ার। সৈকত আর গুহামুখটা পানির তলায়।
তাতে কি ওরা দেখবে না?
দাঁত বের করে হাসলো গোয়েন্দাপ্রধান। ডিকয় পদ্ধতির নাম শুনেছো? তা-ই ব্যবহার করবো। আর্মিরা ব্যবহার করে। রাতে ক্যাম্পের আগুন জ্বেলে রেখে অন্ধকারে চুপি চুপি কেটে পড়ে।
তোমার কথাবার্তা..
মুসাকে কথা শেষ করতে দিলো না কিশোর। ডেভিল মাউনটেইনের চূড়ায় বসে বাঁ-দিকের পথের নিচের অংশ দেখা যায় না, বুঝতে পেরেছি। ওখান দিয়েই নামবো।
গেট ডিঙালো ওরা। তারপর বাঁয়ের পথ ধরে চললো। চূড়াটা চোখের আড়াল হতেই বললো কিশোর, থামো। কাঁধ থেকে বোঝা নামালো। খুলতে শুরু করলো রহস্যময় পোঁটলাটা।
আরি! এ-তো দেখি খালি পুরনো কাপড়? মুসা বললো।
এরকম কাপড়ই তো পরে আছি আমরা! রবিনও অবাক।
সে-জন্যেই তো এনেছি। ভেতরে লতাপাতা ঢুকিয়ে মানুষ বানাবো। নাও, শুরু করো। তারপর শুইয়ে রাখবো।
দেখতে দেখতে দুটো ডামি তৈরি হয়ে গেল। মুসা আর কিশোরের
গলার ওপর সমব্রেরো ফেলে রাখলে মনে হবে মাথায় পরেছে! ধীরে ধীরে। বুঝতে পারছে মুসা।
হ্যাঁ, বললো কিশোর। দূরে, পাহাড়ের চূড়া থেকে তা-ই মনে হবে। রবিন। থাকছে এখানে। মাঝেসাঝে নড়াচড়া করবে। ওখান থেকে যে চোখ রাখছে, সে ভাববে আমরাই। সন্দেহ করবে না।
ডামিগুলো পথের ওপর রাখা হলো। পাশে বসে রইলো রবিন। পর্বতের চূড়া থেকে যে-ই থাকুক, মনে করবে, তিনিটে ছেলে ঢালের কিনারে হেলান দিয়ে বসে সাগর দেখছে।
ঢালের আড়ালে থেকে সরু পথ বেয়ে নিচের সৈকতে নামতে লাগলো, কিশোর আর মুসা। নিচে একটা সুবিধেজনক জায়গায় এসে ডুবুরির পোশাক পরে নিলো। পিঠে বাঁধলো এয়ার-ট্যাংক।