ওটার এঞ্জিনের আওয়াজ মিলাতে না মিলাতেই অন্য গাড়ির শব্দ শোনা গেল।
চেঁচাও! বলেই গলা ফাটিয়ে চিৎকার শুরু করলো মুসা।
পাহাড়ে পাহাড়ে প্রতিধ্বনিত হলো দুজনের চিৎকার। ওপরে ব্রেক কষার শব্দ হলো। ভারি জুতোর আওয়াজ। দুটো মুখ উঁকি দিলো ঢালের কিনারে।
খানিক পরেই নেমে এলো মোটা দড়ি। কোমরে কয়েক প্যাঁচ দিয়ে মাথাটা শক্ত করে ধরে রাখলো মুসা। টেনে ওপরে তুলে নেয়া হলো তাকে।
রবিনও উঠে এলো। ভাঙা পা-টা দেখলো ভালো করে। মনে হলো, চমকেছে। দড়ি ফেলেছে যে লোকটা, সে ট্রাক ড্রাইভার। জানালো, হারভে র্যাঞ্চের দিকেই যাচ্ছে। ছেলেরা কোথায় যাবে শুনে নিজে থেকেই লিফট দেয়ার কথা। বললো। মিনিট পনেরো পরে সাইকেল সহ র্যাঞ্চের গেটে নামিয়ে দিয়ে গেল তাদেরকে। ড্রাইভারকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিয়ে, হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে ভেতরে ঢুকলো ওরা।
ঘর থেকে বেরিয়ে দুজনকে দেখে থমকে গেলেন মিসেস হারভে। সর্বনাশ! কি হয়েছে? এরকম অবস্থা কেন?
বলতে গিয়ে পায়ে রবিনের আলতো লাথি খেয়ে চুপ হয়ে গেল গলা।
বেশি তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে সাইকেল থেকে পড়েছি, রবিন বললো। ঢলে গড়িয়ে পড়লাম, গিরিপথের কাছে। পায়ে ব্যথা পেয়েছি। একজন ট্রাক ড্রাইভার তুলে এনে নামিয়ে দিয়ে গেল।
দেখি, পা-টা? এগিয়ে এলেন মিসেস হারভে।
র্যাঞ্চের মহিলারা সাধারণত নার্সিঙের কাজে ওস্তাদ, এসব শিখতে হয়। তাদের। মিসেস হারভেও ব্যতিক্রম নন। টিপেটুপে দেখে বললেন, সামান্য মচকেছে। ডাক্তার কিংবা ওষুধ লাগবে না, তবে অনেকক্ষণ বিশ্রাম নিতে হবে রবিনকে। বারান্দায় একটা চেয়ারে তাকে বসিয়ে দিয়ে গিয়ে লেমোনেড নিয়ে এলেন।
মুসা আমান, তুমি কাজ করতে যাও, বললেন তিনি। মিস্টার হারভে এখনও ফেরেননি। সামনের কোরালের ঘোড়াগুলোকে খড় খাওয়াও গিয়ে।
যাচ্ছি।
চেয়ারে পা তুলে দিয়ে, আরাম করে ছায়ায় বসে লেমোনেড খেতে খেতে মুসার দিকে চেয়ে হাসছে রবিন। রোদের মধ্যে কাজ করে ঘেমে সারা হচ্ছে গোয়েন্দাসহকারী। রবিনের হাসি দেখলো, কিন্তু মন খারাপ করলো না। কাজ করতে ভালোই লাগছে তার। পেশীতে জোর বাড়ছে।
সাপারের আগে পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডের পুরনো ট্রাকটা এসে থামলো র্যাঞ্চ হাউসের বাইরে। ড্রাইভিং সীটে বোরিস, পাশে বসে আছে কিশোর। নামলো সে। মালপত্র নামাতে তাকে সাহায্য করলো মুসা। স্কুবা ইকুইপমেন্টগুলো ছাড়াও ছোট আরেকটা রহস্যময় প্যাকেট রয়েছে, ভেতরে কি বুঝতে পারলো না সে। গোলাঘরে রাখা হলো মালগুলো।
বোরিস না খেয়ে যেতে পারবে না, বলে দিলেন মিসেস হারভে।
বিশালদেহী ব্যাভারিয়ান লোকটার চওড়া কাঁধ আর হাতের পেশীর দিকে মুগ্ধ চোখে তাকালেন মিস্টার হারভে। ভাবলেন, এরকম একজন লোক র্যাঞ্চে থাকলে খুব সাহায্য হতো।
র্যাঞ্চে কাজ করতে আপনার কেমন লাগে, বোরিস? জিজ্ঞেস করলেন। তিনি। আপনাকে পেলে দশজনকে ছেড়ে দিতে পারতাম।
আপনাদের লোক দরকার, কিশোর গিয়ে বলেছে, জানালো বোরিস। কয়েক হপ্তার জন্যে আমাকে, আর আমার ভাই রোভারকে এখানে কাজ করতে দিতে রাজি আছেন মিস্টার রাশেদ পাশা।
তাকে ধন্যবাদ দিয়ে মিস্টার হারভে বললেন, তার বোধহয় দরকার হবে না। গোলমালটা সাময়িক, শীঘ্রি সব ঠিক হয়ে যাবে। পেদ্রো বলেছে সে ভয় পায়নি। হাসপাতাল থেকে ফিরে এসে শ্রমিকদের বোঝাবে বলে দিয়েছে।
তাই বলেছে বুঝি? খুব ভালো, বললেন মিসেস হারভে।
মুখ কালো করে ফেললেন মিস্টার হারভে। কিন্তু ওর ফিরতে সময় লাগবে। আর এর মাঝে আবার কোনো অঘটন ঘটে গেলে কাউকে রাখা যাবে না। শেরিফও কিছু করতে পারেনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হেনরি ফিগারোর কোনো ছেলেটেলে ছিলো না। পট্টিওয়ালা লোকটা কে, তা-ও জানতে পারেনি।
এতো উতলা হচ্ছো কেন? সান্ত্বনা দিলেন প্রফেসর। ব্যাখ্যা একটা নিশ্চয় পাওয়া যাবে। আসল কারণটা জেনে ওদেরকে জানাতে পারলেই ভয় দূর হয়ে যাবে। টাইম লাগবে আরকি; এই যা।
জানা যে যাবে, এ-ব্যাপারে শিওর হতে পারলেও হতো, বললেন মিস্টার হারভে।
আলোচনা চললো।
খাওয়া শেষ করে বিদায় নিয়ে ট্রাকে গিয়ে উঠলো বোরিস।
প্রফেসরও বেরোলেন। ইউনিভারসিটিতে যাবেন, একটা ক্লাস নিতে হবে। মিস্টার হারভের অনেক কাজ জমে রয়েছে র্যাঞ্চে। তিনিও গেলেন।
তিন গোয়েন্দা চলে এলো নিজেদের বেডরুমে।
দরজা বন্ধ করলো রবিন।
এখন কি করা? কিশোরকে জিজ্ঞেস করলো মুসা।
পাথরটা কি হীরা? জানতে চাইলো রবিন।
হাসলো কিশোর। হীরাই। ইণ্ডাস্ট্রিয়াল ডায়মণ্ড। দাম খুবই কম। কোথায় পেয়েছি শুনে চোখ কপালে তুললল লস অ্যাঞ্জেলেসের এক ডায়মণ্ড এক্সপার্ট।
বিশ্বাসই করতে চায় না। ওর ধারণা, ওটা আফ্রিকান পাথর। কয়েকটা টেস্ট করবে। রেখে দিয়েছে পাথরটা। বলেছে, টেস্ট সেরেই এখানে ফোন করবে।
খাইছে!
মোম আর হ্যাট এনেছো?
এনেছি, বললো মুসা।
আর মোনিং ভ্যালির ওপরে লেখা একটা বই, রবিন বললো।
সানতা কারলায় যাওয়ার শুরু থেকে সমস্ত ঘটনা কিশোরকে জানালো। দুজনে।
গাড়িটার নম্বর দেখেছো?
সময় পেলাম কোথায়? মুসা বললো। তবে নম্বর প্লেটটা দেখেছি এক পলক, নীল আর শাদা।
হুমম। মনে হচ্ছে নেভাডার রেজিস্ট্রেশন। গাল-কাটা লোকটা এসে তাকিয়েছিলো তোমার দিকে, না?