চলে আসবো আবার। আমাদের ডুবুরির পোশাকগুলো আনতে যাবো। কাল রাতে সৈকতের ওদিকে কয়েকটা স্পট দেখেছি। ভালো ভালো অনেক নমুনা পাওয়া যাবে, বুঝেছি। ইসকুলের ম্যারিন বায়োলজিতে ভালো নম্বর তুলতে পারবো।
হাঁ করে ওর দিকে চেয়ে রয়েছে রবিন আর মুসা। ম্যারিন বায়োলজি ওন্দের বিষয় নয়। কিন্তু কিছু বললো না। কোনো কারণ ছাড়া যে মিথ্যে বলে না কিশোর, জানা হয়ে গেছে এতোদিনে।
কিন্তু রকি বীচে তো আজ যেতে পারবো না…
যেতে হবে না, স্যার। আমি বাসে চলে যাবো।
বেশ। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও।
রবিন আর মুসার দিকে চেয়ে হাসলেন মিসেস হারভে। পালের গোদাই তো চলে গেল। সময় কাটাবে কি করে? যে ঝামেলা বাধলো, মিস্টার হারভে আজ র্যাঞ্চের কাজ দেখানোর সময় পাবেন না।
দেখি, ব্যবস্থা একটা করে নেবো সময় কাটানোর, রবিন বললো।
দুই সহকারীকে ইশারা করে বেডরুমে চলে এলো কিশোর। রবিন আর মুসা। এলে বললো, আমি চলে গেলে তোমরাও সানতা কারলায় যাবে। বড় দেখে এক ডজন মোম কিনবে। আর তিনটে মেকসিকান সমব্রেরো হ্যাট। কোথায় যাচ্ছো। জানতে চাইলে মিসেস হারভেকে যা হোক একটা কিছু বলে দেবে।
হ্যাট দিয়ে কি হবে? জিজ্ঞেস করলো মুসা।
দরকার আছে, এখন বলার সময় নেই। রবিন তারপর পাবলিক লাইব্রেরিতে যাবে। ডেভিল মাউনটেইন আর মোনিং ভ্যালির সমস্ত ইতিহাস জানার চেষ্টা করবে।
ঠিক আছে, জানলাম। কিন্তু তুমি রকি বীচে যাচ্ছো কেন?
বললাম না, স্কুবা ইকুইপমেন্ট আনতে। তোমাদেরগুলোও নিয়ে আসবো। আর লজ অ্যাঞ্জেলেসে গহনার দোকানে গিয়ে দেখিয়ে আনবো হীরাটা।
নিচে থেকে ডাকলেন মিস্টার হারভে, কিশোর, তোমার হয়েছে?
দ্রুত নেমে এলো তিনজনে। পিকআপ ট্রাকে মিস্টার হারভের পাশে ব্যাগ নিয়ে উঠে বসলো কিশোর। ওর চলে যাওয়া দেখছে রবিন আর মুসা। ডুবুরির। পোশাক দিয়ে কি করবে গোয়েন্দাপ্রধান, কিছুই বুঝতে পারছে না দুজনে।
যেচে এসে রান্নাঘরে মিসেস হারভেকে সাহায্য করলো রবিন। ঘন্টাখানেকের মধ্যেই মহিলাটি পটিয়ে তার লাইব্রেরি কার্ডটা ধার নিয়ে নিলো। তারপর বেরিয়ে এসে সাইকেল নিয়ে সানতা কারলায় চললো সে আর মুসা।
দেখো, সাবধানে যেও! পেছন থেকে ডেকে বললেন মিসেস হারভে।
মহিলা সত্যি খুব ভালো, চলতে চলতে বললো মুসা।
হ্যাঁ, হাসলো রবিন। জোর করে খাবার তুলে দেন তো পাতে…
আরে না, সেজন্যে না। আসলেই ভালো…
কথা বলতে বলতে চলেছে দুজনে। উপত্যকার ভেতর দিয়ে পাহাড়ের গা ঘেঁষে, কখনও বা দূর দিয়ে ঘুরে গেছে পথ। তিন দিক থেকে ঘিরে রয়েছে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বাদামী পর্বতের সারি, আরেক ধারে সাগর। কড়া রোদ। সাগরের তীরে বাতাস বেশ ঠাণ্ডা, সরে গেলেই ভীষণ গরম। প্রতিটি পাহাড়ের চূড়া খটখটে শুকনো, আর্দ্রতার লেশমাত্র নেই। সানতা-কারলা নদীর ওপরে চওড়া ব্রীজ। নিচে নদীর বুকে শাদা বালি, পানি নেই। গরমে শুকিয়ে গেছে। ভেজা মৌসুমে কিছু কিছু তৃণলতা জন্মেছিলো, জীবন ধারণের প্রচণ্ড চেষ্টায় সেগুলো এখন ধুকছে।
ধীরে ধীরে উঠে চলেছে পথ। স্যান মেটিও গিরিপথে ঢুকলো ওরা। দুর্গম পথ, মাঝে মাঝে তীক্ষ্ণ মোড়। চালানোর চেয়ে সাইকেল ঠেলে নেয়া সহজ। তা-ই করলো দুজনে। বাঁয়ে পর্বতের খাড়া ঢাল, ডানে হাঁ করে রয়েছে যেন কালো। গিরিখাত। মাথার ওপরে গনগনে সূর্য।
অনেকক্ষণ পর ঘামতে ঘামতে গিরিপথের বাইরে বেরিয়ে এলো ওরা।
খাইছে! দেখো দেখো! চেঁচিয়ে উঠলো মুসা।
থমকে দাঁড়ালো রবিন। বিপুল বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো সামনের দিকে।
এ-রকম দৃশ্য খুব কমই দেখেছে ওরা। ক্রমশ ঢালু হয়ে নেমে গেছে পর্বতের ঢাল, ছোট একটা পাহাড়ের গোড়ায় গিয়ে মিশেছে। তার ওপারে ছড়ানো তৃণভূমি, ঘন নীল প্রশান্ত মহাসাগরকে গিয়ে ছুঁয়েছে। এক ধারে সানতা কারলা শহর, ঝলমল করছে রোদে। দূর থেকে ঘরগুলোকে দেখাচ্ছে বিশাল এক সবুজ চাঁদরের মাঝে দেশলাইয়ের রঙিন বাক্সের মতো। সাগরের পানিতে নানারকম জাহাজ, নৌকা চলাচল করছে। আর, বহুদুরে, পার্বত্য চ্যানেল আইল্যাণ্ডস যেন ভেসে আছে। সাগরের ওপর।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে দুজনে। পেছনে শোনা গেল ঘোড়ার খুরের আওয়াজ। প্রায় একই সঙ্গে ঘুরলো ওরা। জোরে ছুটে আসছে মস্ত এক কালো ঘোড়া। রূপার কাজ করা লাগাম, চ্যারো জিনটাতেও রূপার কাজ। জিনের ধাতব পোমেল হর্ন-এ রোদ চমকাচ্ছে।
পাথর হয়ে গেছে যেন ছেলেরা। পা নড়াতে পারছে না। ওদের দিকেই ছুটে আসছে ঘৌড়াটা। পিঠে আসীন ঘোড়সওয়ারের ছোট্ট শরীর, মাথায় কালো সমব্রেরো হ্যাট, কালো চোখের নিচে নাক-মুখ ঢাকা কালো কাপড়ে, গায়ে কালো খাটো জ্যাকেট, পরনে কালো আঁটো প্যান্টের নিচের ঢোলা অংশ উড়ছে চকচকে বুটের ওপর। হাতের পুরনো পিস্তলটা তাক করে ধরেছে ছেলেদের দিকে।
হেনরি ফিগারো!
.
০৯.
অনেক দেরিতে আতঙ্কিত ছেলেদুটোকে চোখে পড়লো যেন ঘোড়াটার। হঠাৎ ব্রেক, কষে থামলো, সামনের দুই পা শূন্যে তুলে তীক্ষ্ণ ডাক ছাড়লো।
ঘোড়াটাকে সামলালো আরোহী। হাতের পিস্তল নাচিয়ে ছেলেদের বললো, ভিভা ফিয়েসতা! একটানে নামিয়ে দিলো মুখের কালো কাপড়। এক কিশোর, দুষ্টুমি ভরা চেহারা। ফিয়েসতা দেখতে এসেছো? এসো। বলেই ঘোড়ার লাগাম; ধরে টানলো। খটাখট করে চললো হাইওয়ে ধরে, সানতা কারলার দিকে।