জানালার কাঁচে ঘষা দাও ওটা দিয়ে।
কী? আরও অবাক মুসা। তাতে কি হবে…
দিয়েই দেখো না।
বাংক থেকে নেমে গিয়ে কাঁচে ঘষা দিলো মুসা। কেটে গেল কাঁচ। শিস দিয়ে উঠলো মুসা।
কিশোর! চেঁচিয়ে বললো রবিন। তারমানে…
হীরা, কথাটা শেষ করে দিলো কিশোর। হ্যাঁ, আমার তাই মনে হয়। আনকাট ডায়মণ্ড। বড় বটে, কিন্তু জাত ভালো নয়, ইণ্ডাস্ট্রিয়াল স্টোন সম্ভবত। তবে এটা হীরা।
হেনরি ফিগারোর গুহাটা হীরার খনি? পাথরটা নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস। করতে পারছে না রবিন। এখানে, এই ক্যালিফোর্নিয়ায়?
গুজব তো রয়েছে। হয়তো…
বাধা পেয়ে থেমে গেল কিশোর। দরজায় থাবা দিয়ে জোরে জোরে ডাকলেন। মিসেস হারভে, এই ছেলেরা, জলদি ওঠো। নাস্তা দেয়া হয়েছে।
খাবারের কথা শুনে পেট মোচড় দিয়ে উঠলো। এতোক্ষণ বুঝতেই পারেনি। ওরা, কতোটা খিদে পেয়েছে। কাপড় পরে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই চলে এলো। র্যাঞ্চের বিরাট রান্নাঘরে। ওদের দিকে চেয়ে হাসলেন মিস্টার হারভে আর প্রফেসর হারকসন।
বাহ্, মন্তব্য করলেন প্রফেসর। মোনিং ভ্যালির রহস্যও দেখি তোমাদের খিদে কমাতে পারেনি।
বড় বড় পাত্রে করে খাবার এনে রাখছেন মিসেস হারভে।
খাওয়া শুরু করলো ছেলেরা।
কাজটাজ করবে কিছু আজ? জিজ্ঞেস করলেন মিস্টার হারভে।
নিশ্চয় করবে, ওদের হয়ে জবাব দিলেন মিসেস হারভে। উত্তরের মাঠে যাবে না খড় কাটতে? ওদেরও নিয়ে যাও।
ভালো বলেছো। খড় কাটা শেষ হলে ম্যাভারিক জড়ো করবো. সাহায্য করতে পারবে।
র্যাঞ্চ জীবনের ওপর মোটামুটি পড়াশোনা আছে রবিনের। ম্যাভারিক মানে জানে। পশুর মূল পাল হতে সরে যাওয়া গরু ছাগল-ভেড়াকে বলে ম্যাভারিক।
তো, কাল রাতে সৈকতে কেমন লাগলো? জিজ্ঞেস করলেন প্রফেসর। কি কি দেখলে?
চমৎকার, জবাব দিলো কিশোর। এক আজব বুড়োর সঙ্গে দেখা হলো। নাম বললো ডিন মারটিন। লোকটা কে, স্যার?
ডিন মারটিন আর তার বন্ধু কার্ল বেইরি ছিলো প্রসপেকটরস, বললেন মিস্টার হারভে। যৌবনে সমস্ত পশ্চিম ছুঁড়ে বেরিয়েছে সোনা রূপা আর হীরার সন্ধানে।
অনেক বছর আগে, এখানে এসেছিলো দুজনে, মিসেস হারভে বললেন। তখন গুজব ছিলো, এই অঞ্চলে সোনা পাওয়া গিয়েছে। আসলে যায়নি, কিন্তু ডিন। আর কার্ল আশা ছাড়েনি। খোঁজ চালিয়েই যাচ্ছে। পর্বতের ঢালে একটা ছাউনি তুলে থাকে। তাদের ঘরে কারও যাওয়া পছন্দ করে না। মাঝে মাঝে র্যাঞ্চের কাজকর্ম করে দিয়ে তার বিনিময়ে খাবার নেয় আমাদের কাছ থেকে।
এখানে ওদেরকে সবাই চেনে, জানালেন প্রফেসর।
অনেক গল্প জানে মারটিন, আর বলতেও পারে, হাসলেন মিস্টার হারভে। খেয়ালি লোক,গল্পগুলোও বেশির ভাগ বানানো কিংবা রঙ চটানো। যেমন, শুরুতেই বলবে, ইণ্ডিয়ানদের সঙ্গে ফাঁইট করেছিলো। কিন্তু আমার সন্দেহ আছে।
মিথ্যে বলে? মুখ ভরতি খাবার চিবাতে চিবাতে বললো মুসা।
মিস্টার হারভে জবাব দেয়ার আগেই ঝটকা দিয়ে পেছনের দরজা খুলে গেল। ঘরে ঢুকলো ফোরম্যান ডেভিড কোহেন। থমথমে চেহারা। বললো, পেদ্রো পড়ে ছিলো মোনিং ভ্যালিতে।
পেদ্রো? উদ্বিগ্ন হলেন মিস্টার হারভে।
কাল রাতে ঘোড়া থেকে পড়ে গেছে। সারারাত ওখানেই পড়ে ছিলো।
কেমন আছে ও? মিসেস হারভেও উদ্বিগ্ন হলেন।
ডাক্তার বললো ঠিক হয়ে যাবে। সানতা কারলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এখুনি যাচ্ছি দেখতে! লাফ দিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠলেন মিস্টার হারভে।
শ্রমিকেরা ভীষণ ভয় পেয়েছে, জানালো কোহেন। আরও দুজন বলেছিলো, এখানে আর কাজ করবে না। পেদ্রো বলেছে, মোনিং ভ্যালিতে নাকি কি নড়তে দেখে দেখার জন্যে যায়। হঠাৎ গোঙানি শুনে ভয় পেয়ে যায় ঘোড়াটা। পেদ্রোকে পিঠ থেকে ফেলে দিয়ে ছুটে পালায়। সারা শরীর জখম হয়েছে বেচারার গোড়ালি মচকে গেছে।
পরস্পরের দিকে তাকালেন মিস্টার এবং মিসেস, চোখে চোখে কথা হয়ে গেল।
কিশোর জিজ্ঞেস করলো, ঘোড়াটা কি কালো? রড়?
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকালো ফোরম্যান। নাম ব্ল্যাকি। খুব ভালো জানোয়ার। আজ সকালে কোরালে ফিরেছে। একা। তখনই.পেদ্রোর খোঁজ শুরু করলাম।
কেন, কাল রাতে তোমরা ঘোড়াটাকে দেখেছিলে? তীক্ষ্ণ হলো মিস্টার হারভের দৃষ্টি।
হ্যাঁ, স্যার। পিঠে লোক ছিলো না।
র্যাঞ্চের নিয়ম জানো? আরোহী ছাড়া কোনো ঘোড়া দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে এসে রিপোর্ট করতে হয়। তোমাদের তা-ই করা উচিত ছিলো। তাহলে কাল রাতেই পেদ্রোকে হাসপাতালে পাঠানো যেতো।
নিয়মটা জানতাম না, স্যার। তা-ও এসে জানাতাম, যদি খালি ঘোড়া দেখতাম। ওটার পেছনে একজন লোককে দৌড়ে যেতে দেখেছি। ভাবলাম, ওই লোকটাই বুঝি ঘোড়ার সওয়ারি। লম্বা, ডান গালে কাটা দাগ, চোখে পটি।
ধীরে ধীরে মাথা নাড়লেন মিস্টার হারভে। ওরকম চেহারার কাউকে তো চিনি।
লম্বা, চোখে পট্টি? ভুরু কোঁচকালেন প্রফেসর। শুনে সুবিধের লোক মনে হচ্ছে না। তবে নিশ্চয় হেনরি ফিগারো নয়। ফিগারো লম্বা নয়, আর চোখে পট্টিও লাগাতো না।
দরজার দিকে এগোলেন মিস্টার হারভে। ডেভিড; শ্রমিকদের গিয়ে ঠাণ্ডা করো। পেদ্রোকে দেখে উত্তরের মাঠে চলে আসবো আমি। আর লোকটার কথাও জানিয়ে আসবো শেরিফকে।
স্যার, উঠে দাঁড়ালো কিশোর। শহরে গেলে আমাকেও নিয়ে যান। রকি বীচে যাবো।
কেন, কিশোর? মিসেস হারভে বললেন, আজই যাবে কেন? আর কটা। দিন থাকো না।