কি হয়েছে? ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো রবিন।
ধীরে ধীরে বললো কিশোর, কি যেন নড়তে দেখলাম ওখানে…
শোনা গেল ঘোড়ার খুরের শব্দ। খটখট খটাখট খট-খট…
আবার! গুঙিয়ে উঠলো রবিন।
গুহার মধ্যে এই শব্দই শুনেছিলাম না? মুসা বললো।
তাই তো মনে হয়, বললো কিশোর। পাহাড়ের কোনো ফাটল দিয়ে ঢুকেছিলো শব্দটা।
গেটের কাছে একটা ঘন ঝোপে লুকিয়ে পড়লো ওরা।
এগিয়ে আসছে খুরের আওয়াজ। বড় একটা কালো ঘোড়া দেখা গেল, পর্বতের ঢালের পথ ধরে। দুলকি চালে চলে গেল ছেলেদের কয়েক ফুট দূর দিয়ে।
মানুষ কই? রবিনের প্রশ্ন।
ধরবো নাকি? মুসা বললো।
না। ঘোড়াটার দিকে চেয়ে রয়েছে কিশোর। দেখি, কি করে?
ঝোপের ভেতরেই বসে আছে ওরা।
হঠাৎ আঙুল তুলে দেখালো মুসা। ঢাল বেয়ে দ্রুত নেমে আসছে একজন, মানুষ। কাছে এলে চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখলো ওরা। লম্বা, বাদামী চামড়া, চোখা নাক। ডান গালে একটা কাটা দাগ। বা চোখের ওপর কালো পট্টি।
পট্টিটা দেখলে? ফিসফিসিয়ে বললো মুসা।
আর গালের কাটা, যোগ করলো রবিন।
আমি দেখেছি ওর স্যুট, কিশোর বললো। বিজনেস স্যুট। মনে হলো কোটের নিচে পিস্তলও আছে।
এবার তাহলে যেতে পারি আমরা? মুসা বললো।
হ্যাঁ। দারুণ কাটলো সময়।
সাইকেলের কাছে আসতে আসতে বার বার পেছনে ফিরে তাকালো ওরা। কিন্তু আর কিছু চোখে পড়লো না।
তবে, সাইকেল চালিয়ে মোনিং ভ্যালি পেরোনোর সময় আবার রাতের নীরবতা ভাঙলো সেই আজব গোঙানি।
.
০৮.
চোখেমুখে রোদ লাগতে ঘুম ভাঙলো মুসার। চোখ মেলে তাকালো। অপরিচিত লাগলো ঘরটা। কোথায় রয়েছে? বাইরে ঘোড়া নাক টানলো, একটা গরু হাম্বা করে উঠলো। মনে পড়লো তার, হারভে র্যাঞ্চের দোতলায় একটা বেডরুমে শুয়েছে। ওপরের বাংক থেকে ঝুঁকে নিচে তাকালো, কিশোরের বাংকের দিকে। সে কি করছে দেখার জন্যে। গোয়েন্দাপ্রধান নেই।
এক লাফে উঠে বসতে গিয়ে ছাতে আথা ঠুকে গেল মুসার। উফ করে উঠলো।
ওধারের বাংক থেকে সাড়া দিলো রবিন। হাত তুলে জানালা দেখালো।
জানালার কাছে বুদ্ধদেবের মতো আসন করে বসেছে কিশোর, গায়ে ওরকমই একটা চাদর জড়ানো। তার সামনে মেঝেতে বিছানো কাগজের বড় একটা শীট, ওটার ওপর চারটে বই। পেন্সিল দিয়ে অনেকগুলো লাইন টেনেছে কাগজটাতে।
হাঁ করে চেয়ে রইলো মুসা। বুঝতে পারলো, বই দিয়ে মোনিং ভ্যালির একটা মডেল বানিয়েছে কিশোর। পেন্সিল দিয়ে এঁকেছে সুড়ঙ্গমুখ।
এক ঘন্টা ধরে বসে আছে ওভাবে, রবিন জানালো।
খাইছে! দশ মিনিটও পারবো না আমি! মাঝে মাঝে তাদের তীক্ষ্ণ-বুদ্ধি। বন্ধুটির আচার-আচরণ খুবই অবাক করে মুসা আর রবিনকে।
ধ্যান ভাঙলো অবশেষে। কথা বললো কিশোর পাশা। গোঙানি উপত্যকার সঠিক টপোগ্রাফিকেল অ্যারেঞ্জমেন্ট নির্ণয়ের চেষ্টা করলাম। জায়গাটার ফিজিকাল প্যাটার্নের মধ্যেই রয়েছে রহস্যের চাবিকাঠি।
গ্রীক বললে!
ও বোঝাতে চাইলো, বুঝিয়ে দিলো রবিন। জায়গাটার গঠনের ওপর নির্ভর করছে রহস্যের সমাধান।
এরকম সহজ করে বললেই পারতো।
মুসার কথায় কান দিলো না কিশোর। গোঙানি উপত্যকার আসল রহস্য, আমরা ঢুকলেই কেন ওটার গোঙানি বন্ধ হয়ে যায়? কাল রাতে দুবার ঘটেছে। ঘটনাটা। অথচ আমরা ফেরার সময়ও আবার শুরু হলো, একটা খবরের কাগজ দেখালো। নতুন করে গোঙানি শুরু হওয়ার রিপোর্ট বেরিয়েছে এটাতে। শেরিফের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। শেরিফ বলেছেন, কারণটা জানা যাচ্ছে না তার আরেকটা কারণ, কেউ গুহায় ঢুকলেই নাকি ওই আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়। কাগজটা নামিয়ে, রাখতে রাখতে বললো, আমি এখনও শিওর, কাকতালীয় কোনো ব্যাপার নয় ওটা।
হয়তো তোমার অনুমানই ঠিক, রবিন বললো। এমনভাবে ঘটেছে, যেন। আমাদের ওপর কেউ চোখ রেখেছিলো।
তো, তোমার মডেল কিভাবে সাহায্য করছে আমাদের? জিজ্ঞেস করলো মুসা।
বই দিয়ে বানানো মডেলটার দিকে তাকালো কিশোর। কাল রাতে যতো জায়গায় গিয়েছি, সবগুলো জায়গায় চিহ্ন দিয়েছি এখানে। দুবার দুদিক দিয়ে ঢুকেছি, দুবারই গোঙানি বন্ধ হয়ে গেছে। রবিন ঠিকই বললো, যেন আমাদের ওপর কেউ চোখ রেখেছিলো।
মাথা ঝাঁকালো রবিন। আমরা ঢাকার আগেই দেখে ফেলছিলো আমাদের।
হ্যাঁ। আর এই মডেলটা বানিয়ে বুঝলাম, যতো জায়গায়ই গিয়েছি আমরা, আমাদের দেখেছে। ডেভিল মাউনটেইনের চূড়া থেকে।
তাহলে তো হয়েই গেল, বললো মুসা। মিস্টার হারভেকে গিয়ে বলবো একথা। চূড়া থেকে ধরে ফেলা হবে লোকটাকে।
না, মুসা, মাথা নাড়লো কিশোর। লোকটাকে ধরা এতো সহজ নয়। ওপর থেকে দেখে সে। ধরতে আসছে বুঝতে পারলেই পালাবে।
তাহলে…, শুরু করলো রবিন।
কিভাবে…, একই সময় বললো মুসা।
নজর রাখবো আমরা, নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটলো কিশোর। গুহায় আসলে কি ঘটছে জানার চেষ্টা করবো। তারপর জানাবো সবাইকে।
গুহায় কি ঘটছে কিছুই জানি না আমরা, মুসা বললো। জানি?
না। তবে একটা প্ল্যান করেছি আমি। একটা সূত্র পেয়েছি।
পেয়েছো? কি?
কাল রাতে গুহার ভেতর এটা পেয়েছি, বলে পাথরের টুকরোটা বের করে। দেখালো কিশোর। একসময় খুনিতে ঢোকার পথ ছিলো ওই সুড়ঙ্গ। পাথর পড়ে। যেখানে বন্ধ হয়েছে, ওখানে পেয়েছি।
বাংক থেকে নেমে গিয়ে পাথরটা হাতে নিলো রবি দেখলো। তুলে দিলো। মুসার হাতে।
কি এটা, কিশোর? মুসা বুঝতে পারছে না। আমার কাছে তো পিছলা একটা পাথর ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না।