আহ, জিনা, কি শুরু করলে? তাড়াতাড়ি বললো কিশোর। তুমি এমন করতে থাকলে আমরা চলেই যাবো।…আন্টি, আপনি কিছু ভাববেন না। দরকার হলে দ্বীপে গিয়ে থাকবো আমরা…
তুমি খুব ভালো ছেলে, কিশোর, হাসলেন মিসেস পারকার। অস্বস্তি দূর। হলো চেহারা থেকে। প্রফেসর না এলে কোনো অসুবিধে হতো না তোমাদের, জানোই তো। আর যেমন প্রফেসর কারসওয়েল, তেমনি তোমার আংকেল। দুজনেই এমন ভুলো মন। সারাদিন না খেয়ে থাকলেও মনে করতে পারবে না। ভাববে, হায় হায়, পেটে মোচড় দেয় কেন!
হেসে উঠলো সবাই।
সে হঠাৎ দরজার দিকে ঘুরে ঘেউ ঘেউ শুরু করলো রাফিয়ান। আবার বানরটার গন্ধ পেয়েছে। কিচমিচ শুনে ছুটে গেল। কী, বাদরের বাচ্চা, আমাকে গাল দেয়! এতোবড় সাহস! আজ তোর একদিন কি আমার একদিন! এমনি ভাবসাব। কুকুরটার।
সিঁড়ির রেলিঙে বানরটা বসে আছে। রাফিকে দেখেই নাচতে শুরু করলো, মুখ ভেঙচাচ্ছে।
লাফ দিয়ে সিঁড়িতে উঠলো রাফিয়ান। কিন্তু বানরটাকে ধরতে পারলো না। তাতে রাগ গেল আরও বেড়ে। তারস্বরে চেঁচাতে লাগলো।
ঝটকা দিয়ে খুলে গেল স্টাডির দরজা। গটমট করে বেরিয়ে এলেন দুই প্রফেসর। রাগে চোখমুখ লাল।
কী, হয়েছে কি! চেঁচিয়ে উঠলেন মিস্টার পারকার। শান্তিতে কাজ করতে পারবো না নাকি?
না না, পারবে পারবে, বললেন বটে মিসেস পারকার, কিন্তু পরিষ্কার বুঝতে পারছেন, সারাদিনই ঘটতে থাকবে এ-ধরনের ঘটনা। বানরটাকে নতুন দেখেছে তো, সহ্য করতে পারছে না এখনও রাফি। ঠিক হয়ে যাবে সব। যাও, কাজ করোগে। দরজাটা বন্ধ করে দিও। আমি দেখবো, আর যেন গোলমাল করতে না পারে।
ঘাউ-ঘাউ করে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করছে রাফিয়ান। চোখে পড়লো প্রফেসরকে। নতুন লোক দেখে সমস্ত রাগ গিয়ে পড়লো তার ওপর। সিঁড়ি থেকে নেমে তেড়ে এলো।
এক দৌড়ে গিয়ে স্টাডিতে ঢুকে পড়লেন কারসওয়েল।
হাসি থামাতে পারলো না ছেলেরা। বিশেষ করে মুসা। হাসতে হাসতে চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে গেল তার।
জিনা, কুত্তাটাকে থামা! গর্জে উঠলেন মিস্টার পারকার। নইলে দেবো বিদেয় করে! বলে আর দাঁড়ালেন না। চলে গেলেন কাজের ঘরে।
উঁহ, দেবো বিদেয় করে! পেছন থেকে মুখ ভেঙচে বললো জিনা। ভাগ্যিস তার বাবা শুনতে পাননি। মা, বাবাকে হুঁশিয়ার করে দিও। রাফি চলে গেলে আমিও যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাবো।..আরি, বানরটার কাণ্ড দেখো! আরে ঘড়ির ওপর বসেছে তো! নষ্ট না করে দেয়!..বিদেয় করবে, বললেই হলো। কেন, রাফিকে কেন, ওই বাঁদরের বাচ্চাটাকে দেখে না?
.
০৩.
কাজে হাত দিলো তিন গোয়েন্দা। টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে চিলেকোঠায় তুললো দুটো পুরনো ম্যাট্রেস। ঠাণ্ডা বাতাস! কিন্তু কি করার আছে? বাইরে তাঁবুতে থাকলে ঠাণ্ডা আরও বেশি লাগবে।
গাল ফুলিয়েই রেখেছে জিনা।
ওরকম করে রাখলে শেষে আবার নামাতে পারবে না, ঠাট্টা করলো মুসা। ফুলেই থাকবে। হাসো, হাসো। তোমার মায়ের কথা একবার ভাবো? আমাদের চেয়ে তাঁর অবস্থা বহুত খারাপ। কি চিন্তায়ই না পড়েছেন!
আসলেই মিসেস পারকারের অবস্থা কাহিল। নয়জন লোকের খাবার জোগাড় করা, সহজ ব্যাপার নয়। রান্নাঘর থেকে আর বেরানোর জো নেই বেচারি আইলিনের। ছেলেমেয়েরা ঘরের কাজে সাহায্য করলো। সাইকেল নিয়ে বাজারে গেল বাজার করে আনতে।
ওই টকারটা কিছু করে না কেন? পরের দিন রাগ করে বললো জিনা।
করে না কে বললো? ওই তো করছে, হেসে বাগানের দিকে দেখালো রবিন।
বাগানময় ছুটে বেড়াচ্ছে ছেলেটা। ভীষণ শব্দ করছে।
এই টকার, চুপ করবে? ডেকে বললো জিনা। তোমার বাবার কাজে। অসুবিধে হচ্ছে…,
তুমি চুপ করো! ধমক দিয়ে বললো টকার। দেখছো না আমি এখন বেন্টলি কার হয়েছি? ভারি শক্তিশালী এঞ্জিন। আর এই দেখো, ব্রেক করলে কেমন। নিঃশব্দে থেমে যায়, একটুও ঝাঁকুনি লাগে না। আর দেখো… বলেই জোরে পোঁ পোঁ করে হর্ন বাজালো দুবার। দারুণ, তাই না?
খুলে গেল স্টাডিরুমের জানালা। দেখা গেল দুই বিজ্ঞানীর ক্রুদ্ধ মুখ।
এই টকার, কি হচ্ছে? রেগেমেগে বললেন কারসওয়েল। এতো হৈ-চৈ কিসের? চুপ করে থাকতে পারো না?
বেন্টলি গাড়ি কিছুতেই নিঃশব্দে চলতে পারে না, বোঝানোর চেষ্টা করলো। টকার। কিন্তু কিছুতেই বুঝতে চাইলেন না বোকা মানুষ দুজন। শেষে একটা মিনি-কার হওয়ার অনুমতি চাইলো সে। এই দেখো না, বাবা, কেমন আস্তে শব্দ করে, ছুটতে ছুটতে শব্দ করে দেখালো টকার। ধরতে গেলে কোনো শব্দই নেই…।
দড়াম করে বন্ধ হয়ে গেল জানালা।
দরজা খোলা পেয়ে সোজা রান্নাঘরে ঢুকে পড়লো মিনি-কার। জানালো, খুব খিদে পেয়েছে। খাবার পাওয়া যাবে কি?
গাড়িটাড়িকে খাওয়াই না আমি, জবাব দিয়ে দিলো আইলিন। এখানে পেট্রল নেই। যাও, ভাগো।
এঞ্জিনের মৃদু গুঞ্জন তুলে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো মিনিকার, যাত্রী খুঁজতে লাগলো। জানালার চৌকাঠে বসে আছে নটি, ডাকতেই লাফ দিয়ে গিয়ে চড়ে বসলো দুপেয়ে গাড়ির কাঁধে। গাড়ির চুল খামচে ধরে রইলো, যাতে ঝাঁকুনি লাগলে, পড়ে না যায়।
সারা বাগানে চক্কর দিতে লাগলো গাড়ি। মাঝে মাঝেই তীক্ষ্ণ হর্ন বেজে ওঠে।
আজব ছেলে। আইলিনের দিকে চেয়ে বললেন মিসেস পারকার। ভালোই লাগছে ওকে। এই ঝামেলা না থাকলে বসে বসে দেখতাম আর কি করে? গাড়ির এমন পাগল…