হাসলো শুধু জিনা।
ওই যে, তোমাদের বাড়ির চিমনি, কিছুক্ষণ পর আবার বললো মুসা। ধোয়া উড়ছে! নিশ্চয় রান্নাঘরের। আমরা এতোগুলো মানুষ যাচ্ছি, দুপুরের রান্না চড়িয়েছেন ক্যারোলিন আন্টি…আহ, মনে হচ্ছে এখান থেকেই সুগন্ধ পাচ্ছি!
গতি বাড়িয়ে দিলো সে।
তার কাণ্ড দেখে হেসে উঠলো সবাই।
গোবেল ভিলার পেছনের গেটে এসে সাইকেল থেকে নামলো চারজন। গ্যারেজের পাশের ছাউনিতে নিয়ে গিয়ে রাখলো সাইকেলগুলো। তারপর চিৎকার করতে করতে দৌড় দিলো জিনা, মা, মাআ, আমরা এসে গেছি! কোথায় তুমি? মা?
পাশে ছুটছে তিন গোয়েন্দা।
হঠাৎ খপ করে জিনার হাত চেপে ধরলো রবিন। জিনা, দেখো! ওই যে, জানালায়!
আরে, বানর এলো কোত্থেকে!…এই এই, রাফি, যাবি না! খবরদার!…আয়, আয় বলছি!
কিন্তু রাফিয়ানকে থামানো গেল না। জানালার কাঁচে নাক ঠেকিয়ে রাখা ছোট্ট জীবটাকে চিনতে পারছে না কুকুরটা। ওটা কি ছোট কোনো কুকুর? নাকি অদ্ভুত কোনো বেড়াল? যা-ই হোক, তাড়াবে ওটাকে, বাড়িছাড়া করে ছাড়বে। গলা। ফাটিয়ে ঘেউ ঘেউ করে দরজার দিকে দৌড় দিলো সে। বেরিয়ে আসছিলো টকার, বিশাল কুকুরের ধাক্কা খেয়ে উল্টে পড়ে গেল। আতঙ্কিত হয়ে বানরটা লাফ দিয়ে। গিয়ে ধরলো দেয়ালে ঝোলানো একটা ছবির ফ্রেম, কিনার ধরে ঝুলে রইলো।
এই কুত্তা! হাঁচড়ে-পাঁচড়ে উঠে দাঁড়ালো টকার। আমার নটিকে বি না! খবরদার বলে দিচ্ছি! বলেই ঠাস করে এক চড় মারলো রাফিয়ানের নাকেমুখে।
ছুটে গিয়ে দ্বিগুণ জোরে ছেলেটার গালে চড় মারলো জিনা। চেঁচিয়ে বললো, শয়তান ছেলে কোথাকার! এত্তোবড় সাহস! আমার রাফির গায়ে হাত দিস! ওটা কি, ওই বাঁদরটা?
মনিবের দুরবস্থা দেখে আরও ঘাবড়ে গেল বানরটা। ছবি ধরে ঝুলে থেকে বিচিত্র কিচির মিচির জুড়ে দিলো। হট্টগোল শুনে দোতলা থেকে নেমে এলো আইলিন। জিনা কিংবা তিন গোয়েন্দাকে আগে দেখেনি সে, তবে বলে দিতে হলো না ওরা কারা। চিনতে পারলো। বললো, কি হয়েছে, জিনা? বানরটা কি করেছে?…আরে এই রাফি, থাম! বাড়ি মাথায় করে ফেলেছিস তো! এই ছেলে, তুমি কাঁদছো কেন? তোমার বানরকে খেয়ে ফেলছে নাকি?
কে বললো কাঁদছি? তেজের সঙ্গে জবাব দিলো টকার। দুহাতে চোখ ডলছে। নটি, নেমে আয়। আয় বলছি.. হারামজাদা কুত্তা খালি ছুঁয়ে দেখুক না তোকে…
না না, কিছু করবে না, এগিয়ে এসে অভয় দিয়ে বললো কিশোর। তুমি তোমার বানরটাকে নামাও। ছবিটা ফেলে দেবে তো।
জিভ টাকরায় লাগিয়ে চুকচুক করে ডাকলো টকার। ছবি ছেড়ে দিয়ে তার কাঁধে লাফিয়ে নামলো নটি। গলা জড়িয়ে ধরে কুকুরটার দিকে চেয়ে কিচমিচ করে। উঠলো। ভয় যাচ্ছে না।
এই রাফি, ধমক দিলো মুসা। ওটা তোর সমান হলো নাকি? থাম।
ওকে ধমকাচ্ছো কেন? জিনার চোখে আগুন জ্বলছে। ঠিকই তো করছে ও। কে না কে এসে বাড়িতে ঢুকে বসে আছে!…এই ছেলে, কে তুমি?
বলবো না! রাগে গটমট করে বেরিয়ে গেল টকার।
আপনি নিশ্চয় আইলিন? আমি মুসা আমান। ছেলেটা কে?
মিস্টার পারকারের বন্ধু, প্রফেসর কারসওয়েলের ছেলে। আজই এসেছে। আগামী হপ্তায় আসার কথা ছিলো, আগেই এসে বসে আছে।
এখানে থাকবে নাকি? আঁতকে উঠলো জিনা। বাবার তো নেইই, মারও আক্কেল নেই! জানে না, আমরা আসছি? জায়গা দিলো কেন?
থামো, জিনা, হাত তুললো কিশোর। শান্ত হও। আগে শুনিই না সব কথা। হয়তো কোনো ভুল হয়েছে…
হ্যাঁ, ভুলই, বললো আইলিন। মিস্টার পারকার ভুলেই গেছেন, তোমরা আসছে। বন্ধুকে আসার জন্যে চিঠি লিখে দিয়েছেন। বন্ধুও চিঠি পেয়ে আর এক মুহূর্ত দেরি করেননি, এক হপ্তা আগেই চলে এসেছেন। সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন ছেলেকে, তার সঙ্গে আবার একটা বানর। জিনার মা তো ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এতোগুলো মানুষের থাকার জায়গা করবেন কোথায়? প্রফেসর নাহয় গেস্টরুমে থাকলেন, তাঁর ছেলে সোফায়। কিন্তু তোমরা
আমি ওসব বুঝি না, সব শুনে রাগ আরও বাড়লো জিনার। এখুনি গিয়ে মাকে বলছি…
পাগলামি করো না, জিনা, বিরক্ত হয়ে বললো কিশোর। ব্যবস্থা একটা হবেই। তোমার রাগ সামলাও।
হ্যাঁ, ব্যবস্থা করা হচ্ছে, বললো আইলিন। চিলেকোঠায় দুটো ম্যাট্রেস। বিছিয়ে দেবো, তোমরা তিনজন থাকতে পারবে, তিন গোয়েন্দার দিকে আঙুল নাড়লো সে। কিন্তু যা ধুলো জমেছে, সাফ করতে লাগবে একদিন…বাতাসও খুব। বেশি। ঝড় এলে আর উপায় নেই। ঠাণ্ডায়…
তাতে কিছু হবে না, হাত নেড়ে বললো কিশোর। ধুলো আমরাই সাফ করে নিতে পারবো। আর ঠাণ্ডার সময় কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে থাকবো, আরামই লাগবে।
আন্টি কই? মেজাজ নিশ্চয়ই খারাপ?
হবে না? তিনি বলেই সামলে নিয়েছেন। অন্য কেউ হলে…আর প্রফেসরেরই কেমন আক্কেল? অন্যের বাড়িতে এমনভাবে ঢুকে পড়লেন, যেন তাঁর নিজের বাড়ি। মালপত্র দিয়েই, বোঝাই করে ফেলেছেন ঘর। তার ওপর আবার একটা আজব ছেলে আর বানর! আমি যখন থালাবাসন ধুই, কেমন জুলজুল করে চেয়ে থাকে ওটা, মনে হয় এসে আমার সঙ্গে সে-ও হাত লাগাতে চায়।
রান্নাঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন জিনার মা। এই যে, এসে পড়েছে, হেসে বললেন। রাফির ডাক শুনলাম। রাফি, দেখে চমকে যাবি, একটা বানর। এসেছে।
চমকে গেছে এসেই, মুখ কালো করে বললো জিনা। মা, তুমি জানো আমরা আসছি। তার পরেও কি করে ওদের জায়গা দিলে?