অন্ধকারে দাঁড়িয়ে নীরব হাসিতে ফেটে পড়লো ছেলেমেয়েরা।
দুটো বেকার, ফিসফিসিয়ে বললো কিশোর। টকার, দাও নটিকে লেলিয়ে।
বানরটাকে নির্দেশ দিয়ে ছেড়ে দিলো টকার।
হুফ! করে উঠলো রাফিয়ান। সে-ও কিছু করার অনুমতি চাইছে জিনার কাছে।
যা। যা ইচ্ছে কর গিয়ে, খুশিমনে অনুমতি দিয়ে দিলো জিনা।
জিনার কথা শেষ হওয়ার আগেই ছুটলো রাফিয়ান।
ডেনারকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসছিলো লিংকার। দরজার কাছে পৌঁছার। আগেই দেখলো, বিরাট এক জীব মস্ত একটা ছায়ার মতো ছুটে আসছে তার ওপর আঁপিয়ে পড়ার জন্যে।
আর কি দাঁড়ায় চোরাই মালের ব্যবসায়ী? ভারি শরীর নিয়ে এমনভাবে ঘুরলো, যেন পালকের মতো হালকা। দিগগজ দৌড়-বিদদের সমস্ত রেকর্ড ভঙ্গ করে ছুটলো প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে। সামনে একটা গাছ দেখে চোখের পলকে তাতে চড়ে বসলো।
নিচে থেকে ঘেউ ঘেউ করতে লাগলো রাফিয়ান, লাফঝাঁপ দিতে লাগলো। লিংকারকে ধরতে না পারায় ভীষণ খেপে গেছে।
গাছে উঠে যখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো লিংকার, এলো আরেক বিপদ। ঝুপ করে তার কাঁধের ওপর লাফিয়ে পড়লো একটা বানর। চুল, খামচে ধরে কামড় বসালো কানে।
ওরে বাবারে, খেয়ে ফেললো রে! বলে চেঁচিয়ে বানরটাকে সরাতে গিয়ে ডাল থেকে ছুটে গেল হাত। ওপর থেকে পড়লো আবার নিচে, একেবারে রাফিয়ানের মুখের কাছে। আচ্ছামতো কয়েকটা কামড় খেয়ে হাঁচড়ে-পাঁচড়ে আবার উঠলো গিয়ে গাছে।
হাসতে হাসতে বেরিয়ে এলো ছেলেমেয়েরা। বানরটাকে ডেকে নামালো। টকার। গলার বেল্ট ধরে জোর করে টেনে রাফিয়ানকে সরালো জিনা।
বোটে চলো সবাই, আদেশ দিলো কিশোর। কুইক!
ঢালু পথ বেয়ে দৌড় দিলো সবাই। টকারের কাঁধে নটি। মুসার কাঁধে গুপ্তধনের ব্যাগ। কোথায় তেল ফেলেছে, জানা আছে ওদের। ওগুলো এড়িয়ে গেল, আছাড় খেতে হলো না। এক এক করে লাফিয়ে উঠলো, বোটে। গাছের দিকে ফিরে জোরে আরেকবার ঘেউ ঘেউ করে রাফিয়ানও উঠে পড়লো।
এঞ্জিন স্টার্ট দিলো মুসা। জিনা ধরলো হুইল। তিন মিনিট পর খোলা সাগরে বেরিয়ে এলো ওয়ালটারদের মোটর বোট। ছুটলো মূল ভূখণ্ডের দিকে।
দূর থেকেই গোবেল ভিলায় আলো দেখা গেল, স্টাডিরুমে।
দুই প্রফেসর নিশ্চয় মাথার ঘাম বের করে ফেলছেন, হেসে বললো মুসা। আমাদের এই অবস্থায় দেখলে কি যে…
জিনা, বাধা দিয়ে বললো কিশোর। আগে শেরিফের ওখানে যাও।
বোটের মুখ ঘুরিয়ে দিলো জিনা।
ছেলেমেয়েদের দেখে অবাক হলেন শেরিফ আর তার ডেপুটি। সব কথা। শুনলেন। গুপ্তধনগুলো রেখে দিলেন নিরাপদ জায়গায়।
মনে হলো ডাক্তার ওয়ালটার এসেছেন, বললেন শেরিফ। একটু আগে ওপথেই আসছিলাম। বাড়িতে আলো দেখলাম।
শেরিফের অফিসে বসেই লিয়ারিকে টেলিফোন করলো কিশোর। মিসেস পারকারকে ফোন করে সংক্ষেপে সব কথা জানালো। শেরিফ ফোন করলে ডাক্তার ওয়ালটারকে। তারপর নিজেদের লঞ্চ আর লোকজন নিয়ে দ্বীপে চললেন চোরগুলোকে ধরে আনার জন্যে। ছেলেমেয়েরাও চললো সঙ্গে।
তিন চোরকে নিয়ে ফিরে এসে ওরা দেখলো, শেরিফের অফিসে বসে আছেন ডাক্তার ওয়ালটার আর তার মিসেস। ছেলেদের মুখে গুপ্তধনের গল্প শুনে তো অবাক।
ডজকে হাজতে ভরা হলো। মাথার একপাশ গোল আলুর মতো ফুলে আছে। ডেনার পায়ের ব্যথায় ককাচ্ছে। লিংকারের সারা গায়ে কামড় আর আঁচড়ের ক্ষত; রক্তাক্ত। দুজনকে কড়া পাহারায় পুলিশ হাসপাতালে পাঠিয়ে দিলেন শেরিফ।
আর এই সময় এসে অফিসের সামনে থামলো আরেকটা গাড়ি। নামলেন মিসেস পারকার আর দুই বিজ্ঞানী।
অফিসে ঢুকেই জিনার দিকে চেয়ে ভুরু কুঁচকে বলে উঠলেন মিস্টার পারকার,, তোমাদের জ্বালায় শান্তিতে কাজ করার জো নেই। কেন জড়ালে এসবে?
আহ, তুমি থামো তো, মৃদু ধমক দিলেম মিসেস পারকার। ঠিকই তো করেছে। চোখের সামনে অন্যায় ঘটতে দেখেও পালিয়ে আসবে নাকি?
কিন্তু মারাও যেতে পারতো, বললেন প্রফেসর কারসওয়েল।
যায়নি যখন আর বলে লাভ কি? টকারকে কাছে টানলেন মিসেস পারকার। কেমন ছিলি? খুব কষ্ট হয়েছিলো?
আরে না, কি যে বলো, আন্টি, মাথা নেড়ে বললো টকার। দারুণ মজা পেয়েছি। বাবা, তোমাকে আর জ্বালাবো না। গাড়ি হতে আর ভালো লাগে না এখন আমার। গোয়েন্দা হবো।
গোয়েন্দা হয়ে করবিটা কি শুনি? বললেন কারসওয়েল। হলে বিজ্ঞানী হবি।…এই হ্যারি, চলো চলো, পরীক্ষাটা শেষ করে ফেলি। এরা ভালোই আছে।
চলো।
অফিস থেকে বেরিয়ে গেলেন দুই বিজ্ঞানী।
লিয়ারিও এসে হাজির হলো। জানালো, ছেলেদের–বিশেষ করে মুসার জন্যে তৈরি হয়ে পড়ে আছে বিশাল এক ফুট কেক।
পরদিন লাঞ্চে দাওয়াত করলেন সবাইকে মিসেস ওয়ালটার। লিয়ারি, পারকার দম্পতি, প্রফেসর কারসওয়েল, শেরিফ, আর ছেলেমেয়েদেরকে তো অবশ্যই।
দাওয়াতে গেল সবাই। চমৎকার খাওয়া-দাওয়া হলো। ছেলেময়েদের সবাইকে একটা করে সোনার মোহর উপহার দিলেন ওয়ালটার, স্যুভনির হিসেবে রেখে দেয়ার জন্যে। বাকি গুপ্তধনগুলো রাখবেন না, জানালেন। ডাকাতি করে। এনেছিলো তাঁর পূর্বপুরুষ। ওসব লুটের মাল রাখতে চান না তিনি। দান করে দেবেন কোনো রিসার্চ সেন্টারে। মানুষের উপকারে লাগবে ওই গুপ্তধন বিক্রির টাকা।