এই, চুপ! ধমক দিলো ডেনার। বন্দুকটা ওদের দিকে ধরে রেখে ভাইপোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করলো।
আমি বলি কি, চলো আজই পালিয়ে যাই, পরামর্শ দিলো ডজ।
তা করা যাবে না। লিংকার এখন হলিউডে নেই। আসবে আরও দুদিন পর, খবর নিয়েছিলাম। এই বিচ্ছগুলো দেখে ফেলায়ই যতো গণ্ডগোল হলো। হলিউডে। মাল দিয়েই পালাতে হবে। নইলে ধরে ফেলবে পুলিশ। ..
দুদিন এখানে বসে থাকলেও ধরে ফেলবে। এগুলোকে ছাড়লেই সোজা চলে যাবে শেরিফের কাছে।
ছাড়ছে কে? আটকে রাখবো।
কিন্তু কোথায়? রাতে ওরা না ফিরলেই হৈ-চৈ শুরু করবে লিয়ারি। শেরিফ খুঁজতে আসবে এখানে। তোমার কটেজে রাখা যাবে না, বাংলোতেও না। তাছাড়া ডাক্তাররাও এসে পড়তে পারে যে কোনো দিন।
চুপ করে আছে ডেনার। ভাবছে।
চাচা, পেয়েছি। তুড়ি বাজিয়ে বলে উঠলো ডজ। সেদিন মোটর সাইকেল নিয়ে ঘুরছিলাম। সী-বীচ থেকে কিছু দূরে একটা ছোট দ্বীপ দেখেছি। দেখেই বোঝা যায়, লোক থাকে না-ওখানে। ভাঙাচোরা দুর্গও আছে। এদেরকে ওখানে নিয়ে গিয়ে রেখে আসতে পারি। কিছু খাবার আর কম্বল দিয়ে এলেই হবে. মরবে না। তারপর লিংকার এলে মাল নিয়ে চলে যাবো আমরা। যাওয়ার আগে ফোন করে লিয়ারিকে বলে যাবো, ওরা কোথায় আছে। আইডিয়াটা কেমন?
ভালো, একমত হলো ডেনার। ওয়ালটারদের বোটটা নিয়েই যেতে পারবো। চলো। এই, এসো তোমরা।
আদেশ পালন করা ছাড়া উপায় নেই। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দৌড় দেয়ার কথা ভাবলো কিশোর; সঙ্গে সঙ্গেই বাতিল করে দিলো চিন্তাটা। বেপরোয়া হয়ে আছে এখন ডেনার। নির্দ্বিধায় গুলি চালাবে।
চলতে চলতে থেমে গেল ডেনার। ডিজ, ভুল করছি না তো? হুট করে কিছু করা উচিত হবে না। চলো, কটেজে চলো আগে। আরও ভেবে দেখি, কি করা যায়…
ছেলেদেরকে কটেজে নিয়ে আসা হলো। দরজা-জানালা সব বন্ধ করে দিয়ে আলোচনায় বসলো চাচা-ভাতিজা।
প্রথমেই ধরো লিয়ারির কথা, ডেনার বললো। রাতে ছেলেদের ফিরতে না দেখলেই অস্থির হয়ে উঠবে। শিওর, শেরিফকে ফোন করবে।
ঠিকই বলেছো, মাথা ঝাঁকালো ডজ। তাহলে?
বুড়িটাকে বোঝাতে হবে, ছেলেদের কোনো বিপদ হয়নি। ইয়ে করো, দড়ি দিয়ে ওদের হাত পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলো আগে।
বন্দুক ধরে রইলো ডেনার, দ্রুত কাজ সারলো ডজ। রাগে দাঁতে দাঁত চাপলো জিনা, গালও দিলো। কিন্তু ডজ শুধু হাসলো। কেয়ারই করলো না।
ইহ, ধরে রাখতে রাখতে হাত ব্যথা হয়ে গেছে, বন্দুকটা নামালো ডেনার। নাও, এটা ধরো। আমি আসছি।
কোথায় যাচ্ছো?
লিয়ারিকে ফোন করে আসি। বলবো, আমি পারকার। ছেলেমেয়েরা বাড়িতে এসেছে, থাকবে দুতিন দিন।
ঠোঁট কামড়ালো কিশোর। কোনো রকম ফাঁক রাখছে না ডেনার ব্যাটা!
পাগল হয়েছে? ডজ বললো। তোমার গলা চিনে ফেলবে না? বুড়িটা এতো বোকা না।
না, চিনবে না। রুমাল দিয়ে রিসিভার ঢেকে নেবো। দুএক বার খুকখুক করে কাশবো। তাহলেই বুঝবে, ঠাণ্ডা লেগেছে। গলা অন্যরকম হয়ে গেছে। আমি আসলে পারকারই, আর কেউ নই, হাহ হাহ হা!
হেহ হেহ হে! রেগে গিয়ে মুখ ভেঙুচালো জিনা। রাফিয়ান ঘেউ করে উঠতেই বললো, এই, চুপ!
ওদের দিকে ফিরেও তাকালো না চাচা-ভাতিজা।
ভালোই বুদ্ধি করেছে, চাচা, বললো ডজ। কাজ হবে
তাড়াতাড়িই ফিরে এলো ডেনার। হয়েছে, ভাইপোর দিকে চেয়ে হাসলো। চলো, বেরোও ওদের নিয়ে। নৌকায়।
খাবার-টাবার আনোনি?
না। দরকার মনে করিনি। আরেকটা কথা ভেবেছি আমি। দূর থেকে দেখে তোমার মনে হয়েছে দ্বীপটাতে লোক থাকে না। ধরে নিলাম থাকে না। কিন্তু কারও পিকনিকে যেতে বাধা কোথায়? কিংবা দিনের বেলা জেলেরা যদি খুব কাছাকাছি চলে যায়? তারমানে ওপরে রাখা যাবে না ওদের। ভাঙা দুর্গ আছে বললে না? মাটির তলায় নিশ্চয় সেলার-টেলার কিছু আছে…
কিংবা ডানজন।
তাহলে তো আরও ভালো। ভরে রাখবো ওখানে। বাইরে থাকছে না, ঠাণ্ডা লাগবে না, কাজেই কম্বলের দরকার নেই। আর খাবার-পানি ছাড়াই আটচল্লিশ ঘণ্টা বাঁচতে পারে মানুষ, বলে আবার হাহ্ হাহ্ করে হাসলো সে। হয়েছে, চলো এবার।
সাগর পারে নিয়ে আসা হলো ওদের। ওয়ালটারদের বোট হাউসে ছোট একটা মোটর লঞ্চে এনে তোলা হলো। এঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে লঞ্চটা বোট হাউস থেকে বের করলো ডজ।
জিনার মুখে রহস্যময় হাসি দেখতে পেলো কিশোর, কিন্তু কোনো প্রশ্ন করলো।
খুব শিগগিরই অবশ্য জিনার হাসি মুছে গেল। তীর থেকে অনেক দূরে চলে এসেছে তখন লঞ্চ। কিনারে দাঁড়িয়ে আছে রাফিয়ান। সাবধান হওয়ার সামান্যতম সুযোগ না দিয়ে হঠাৎ এক ধাক্কায় তাকে পানিতে ফেলে দিলো ডজ। চেঁচিয়ে উঠলো জিনা।
খিকখিক করে হাসলো ডজ। তারপর একটানে টকারের কাঁধ থেকে বানর টাকে তুলে নিয়ে ছুঁড়ে দিলো পানিতে।
এই হারামীর বাচ্চা! ভীষণ রাগে গাল দিয়ে উঠলো জিনা। এটা কি করেছিস। ভালো চাইলে জলদি তুলে আন!
না আনলে কি করবে? হাসতে হাসতে বললো ডজ। না ফেলে উপায় ছিলো। ঘাউ ঘাউ করে চেঁচাতো কুত্তাটা। জেলেরা শুনে ফেললে মুশকিলে পড়তাম। আর ওই বাঁদুরটাকে ট্রেনিং দেয়া আছে কিনা কে জানে? হয়তো তোমাদের বাঁধন খুলে দিতো। ওসব শয়তান জানোয়ার মরে যাওয়াই ভালো।
মরা তো উচিত তোর মতো হারামী জানোয়ারের, ফুঁসে উঠলো জিনা। কুকুর আর বানর তো তোর চেয়ে অনেক ভালো। দুটোকে ফেলে দেয়া হয়েছে, সে-জন্যে ভাবছে না সে, রাফিয়ান ডুবে মরবে না। খুব ভালো সাঁতার জানে। নটিও মরবে না। রাফিয়ানই তাকে বাঁচাবে। ভাবছে অন্য কারণে। পিছন পিছন আসছে কুকুরটা, মনিবকে সাহায্য করার জন্যে। এভাবে দ্রুত সাঁতরে এলে ক্লান্ত হয়ে পড়বে। তখন বিপদ ঘটতেও পারে।