আঙটা ধরে ধরে বেয়ে উঠে যেতে লাগলো মুসা। নিচ থেকে আলো ধরে রাখলো অন্যেরা। ওপরে উঠে দেখলো কাঠের ঢাকনা দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে কুয়ার মুখ। নিচ থেকে হাত বাড়িয়ে ঠেলা দিতেই নড়ে উঠলো। সরিয়ে ফেলতে পারলো সহজেই।
বেরিয়ে এলো মুসা। ওয়ালটার লজের বাগানে বেরিয়েছে। একপলক দেখেই চিনলো জায়গাটা। কাছেই দেখা গেল সেই ঝোপটা, যার ভেতরে রয়েছে আরেকটা সুড়ঙ্গমুখ, যেটা দিয়ে সেদিন বেরিয়েছিলো।
কুয়ার দেয়ালে হাতের ভর রেখে ঝুঁকে ডাকলো, এই, উঠে এসো তোমরা।
এক এক করে উঠে এলো টকার-কাঁধে নটি, জিনা, রবিন, কিশোর। রাফিয়ান রয়ে গেছে নিচে। সে মই বাইতে পারে না। এতো ভারি, তাকে বয়ে আনাও সম্ভব হয়নি।
নিচে চেয়ে চেঁচিয়ে জিনা বললো, রাফি, তুই থাক ওখানে। আমরা দড়ি নিয়ে আসছি।
ঘাউ করে জবাব দিলো রাফিয়ান।
ডেনারকে কোথাও দেখা গেল না। লজের একটা ছাউনির ভেতরেই পাওয়া। গেল দড়ির বাণ্ডিল।
ওটার একমাথা কোমরে বেঁধে আবার নিচে নেমে গেল মুসা। রাফিয়ানের কোমরে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে বেঁধে দিয়ে উঠে এলো। তারপর সবাই মিলে দড়ি টেনে তুলে আনলো ভারি কুকুরটাকে।
কুণ্ডলি পাকিয়ে দড়িটা আবার আগের জায়গায় আগের মতো করে রেখে দিয়ে কটেজে ফিরে চললো ওরা।
অনেক কিছু দেখেছে, অনেক কষ্ট করেছে, কিন্তু গুপ্তধন পাওয়া যায়নি। আরও খুঁজতে হবে। কাজটা পরের দিনের জন্যে স্থগিত রাখা হলো। কিশোরের। এখনও ধারণা, কুয়ার কাছাকাছিই কোথাও আছে ওগুলো। সুড়ঙ্গে নেই, এ ব্যাপারে শিওর। তাহলে কোথায়? পানিতে নয় তো!
দিনের বেলা যাওয়া আর ঠিক হবে না। ডেনারের চোখে পড়ে যেতে পারে। সন্ধ্যার পর বেরোনোর সিদ্ধান্ত নিলো সে। কাজেই, রাতের খাওয়া শেষ করেই সাইকেল বের করলো। লিয়ারিকে বললো, ঘুরতে যাচ্ছে। এ ওয়ালটার লজে পৌঁছে পাশের ছোট গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলো। সাইকেলগুলো ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে সোজা চললো কুয়ার পাড়ে। সঙ্গে করে আজ বড় টর্চ এনেছে, আর শক্ত মোটা দড়ি।
দড়ির একমাথা কোমরে পেঁচিয়ে বাঁধলো কিশোর। কোনোরকম ঝুঁকি নিতে চায় না। বলা যায় না, পুরনো আঙটা বেশি ব্যবহারে খসে যেতে পারে। দড়ির। আরেক মাথা বাঁধলো একটা গাছের সঙ্গে। তারপর সবাইকে ওপরে থাকতে বলে নামতে শুরু করলো।
পানির কাছাকাছি এসে থামলো। পকেট থেকে একটা পাথর বের করে ছেড়ে দিলো। টুপ করে ডুবে গেল পাথরটা। পাথরের সঙ্গে সুতো বাঁধা। খুব সামান্যই ছাড়তে হলো। তারমানে পানি বেশি নেই।
গুড! আনমনে বললো কিশোর! আঙটা ধরে ধরে আবার নামতে শুরু করলো। পানির নিচে তিন আঙটা নামতেই হাতে লাগলো কি যেন। ধরে দেখলো, দড়ি। পানিতে তার কোমর পর্যন্ত ডুবেছে। ওই অবস্থায় থেকেই এক হাতে টান দিলো দড়িতে। ভারি লাগলো। টেনে তুলতে লাগলো।
দড়ির মাথা বাঁধা বাক্সটা একনজর দেখেই চিনতে পারলো। তার অনুমান। ঠিক। পানিতেই লুকিয়ে রেখেছে।
নিচে থেকেই চেঁচিয়ে বললো কিশোর, এইই, পেয়েছি! পেয়েছি!
ওপর থেকে শোনা গেল উল্লসিত চিৎকার।
উঠে আসছি, আবার বললো কিশোর।
উঠতে উঠতে মাঝপথে এসে একবার রাফিয়ানের উত্তেজিত চিৎকার শুনতে পেলো কিশোর। ছেলেদের আনন্দে যোগ দিয়েছে হয়তো কুকুরটা, ভাবলো সে। এক হাতে বাক্স নিয়ে আঙটার মই বেয়ে উঠতে পারবে না। তাই কোমরের দড়ি খুলে বাক্সের দড়ির সঙ্গে বেঁধে রেখে এসেছে। ওপরে উঠে টেনে তুলবে।
কুয়ার বাইরে মাথা তুলেই স্থির হয়ে গেল কিশোর। ও, এজন্যেই হঠাৎ সবাই এতো চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি এক সারিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে মুসা, রবিন, টকার, জিনা। রাফিয়ানের কলার চেপে ধরে রেখেছে জিনা। নটি চুপ করে বসে। আছে টকারের কাঁধে। ওদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছে ডেনার আর তার ভাইপো ডজ।
ডেনারের হাতে একটা দোনলা শটগান।
.
১৪.
উঠে এসো! কড়া গলায় আদেশ দিলো ডেনার।
মুসার পাশে এসে দাঁড়ালো কিশোর।
দড়ি ধরে টেনে দেখলো ভজ। ভারি লাগলো। চাচা, বাক্সটা মনে হচ্ছে ঠিকই আছে। ওটার সঙ্গে বেঁধে রেখে এসেছে। ভারি বজ্জাত ছেলে।
আমাদের ছাড়বে না ওরা, ভাবলো কিশোর, নিজের অজান্তেই কেঁপে উঠলো। একবার। ছাড়লেই গিয়ে যদি শেরিফকে বলে দিই? আর তাই তো করবো!
তার দিকে ফিরলো রবিন। সে-ও একই কথা ভাবছে। আমাদেরকে এখন কি, করবে ওরা? মেরে কুয়ায় ফেলে দিলে কেউ খুঁজে পাবে না।
অনেক দেরিতে আফসোস হলো কিশোরের, বাড়াবাড়িটা সে-ই বেশি। করেছে। অন্যদের বিপদে ফেলার জন্যে সে-ই দায়ী।
চাপা গলায় গর্জাতে শুরু করলো রাফিয়ান।
চুপ, রাফি! তাড়াতাড়ি কুকুরটার মাথায় চাপড় দিয়ে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলো জিনা। ভয়, যদি রেগে গিয়ে গুলি করে ডেনার?
কথা মানলো রাফিয়ান।
গায়ে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে এলো ছেলেরা।
ঠিকই আছে, চাচা, বাক্সটা কিছুদূর তুলে টর্চের আলো ফেলে দেখে বললো ডজ। খোলার সময় পায়নি মনে হচ্ছে। আবার বাক্সটা পানিতে নামিয়ে ওপর থেকে দড়ি কেটে দিলো সে। ঘুরে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, বিচ্ছুগুলোকে কি করা? ছেড়ে দেয়া তো যাবে না।
না। সর্বনাশ করে ফেলবে তাহলে। প্ল্যান বদলাতে হবে আমাদের। ওদের সরিয়ে দিয়ে…
সরিয়ে দিয়ে মানে? বন্দি করে রেখে?
থরথর করে কাঁপছে টকার তাকে সাহস দিয়ে মুসা বললো, আরে ভয়ের কি আছে? ব্যাটারা ছিঁচকে চোর, ডাকাত হওয়ার সাহস নেই।