দেখেছি। চমকে গিয়েছিলাম একেবারে। এতো দামী দামী সব জিনিস।
কিন্তু চাচা, ওসব জিনিস বেচবে কোথায়? যে দেখবে সে-ই সন্দেহ করবে।
তুই কি ভাবছিস সেকথা ভাবিনি? ব্যবস্থাও করে ফেলেছি। হলিউডে একটা লোক আছে, চোরাই মালের ব্যবসা করে। তার নাম লিংকার। আমার পুরনো দোস্ত। ওর কাছে নিয়ে গেলেই ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তবে তাড়াহুড়ো নেই। আর তাড়াহুড়ো করা উচিতও হবে না। শেরিফ কিছুদিন কড়া নজর রাখবে আমার ওপর। পরিস্থিতি এখন গরম, ঠাণ্ডা হয়ে নিক, তারপর ধীরেসুস্থে তুলে নেবো। এখন যেখানে আছে সেখানেই নিরাপদ, থাক।
সফল হবো তো, চাচা?
এখনও তোর সন্দেহ আছে নাকি, ডজ?
এরপর আর বিশেষ কোনো কথা হলো না। নীরবে বিয়ার খেয়ে চললো দুজনে। এক সময় উঠে বেরিয়ে গেল ডজ। মোটর সাইকেলের এঞ্জিন স্টার্ট নেয়ার। শব্দ হলো। পথের দিকে আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল আওয়াজ।
মাথা নিচু করে ফেললো ছেলেরা। একে অন্যের দিকে তাকালো। অল্প সময়ে অনেক কথা জেনে ফেলেছে। শেরিফ এসেছিলেন, ডেনারের কটেজ খুঁজে বিফল হয়ে ফিরে গেছেন, কিছু পাওয়া যায়নি। আর ড্যানি সেজে যে গিয়েছিলো, তার আসল নাম ডজ, ডেনারের ভাইপো। চাচা-ভাতিজা মিলে গুপ্তধনগুলো চুরি করেছে। তৃতীয় আরেক লোক, লিংকারের মাধ্যমে ওগুলো বিক্রি করবে। তবে সেটা কয়েকদিন পর। তারমানে গোয়েন্দাদের হাতে সময় আছে। খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে পারবে।
কিন্তু আসল কথাটাই জানা যায়নি। ডেনবার একবারও বলেনি, গুপ্তধনগুলো কোথায় লুকিয়েছে।
আর এখানে থেকে কোনো লাভ নেই। ডেনার দেখে ফেললে বিপদে পড়বে। লিয়ারি কটেজে ফিরে চললো ওরা।
ওয়ালটার লজের সীমানার বাইরে চলে এলো।
ডাক্তার ওয়ালটার থাকলে সুবিধে হতো এখন, জিনা বললো। আজকালের মধ্যে চলে এলেও ইতো। তাকে বলতে পারতাম।
কি আর হতো? রবিন হাত নাড়লো। যা জেনেছি, শেরিফকে গিয়েও তো বলা যায়। কিন্তু লাভটা কি হবে?
ঠিকই বলেছো, চিন্তিত মনে হচ্ছে গোয়েন্দাপ্রধানকে। বড় জোর আবার ধরে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করবেন ডেনারকে। ডেনার অস্বীকার করবে। তাতে আরও ক্ষতি হবে। আবারও হুঁশিয়ার হয়ে যাবে সে। গুপ্তধন নিয়ে পালিয়ে যাবে। নাহ, খুঁজে বের করার চেষ্টা আমাদেরকেই করতে হবে।…আমার ধারণা, ওয়ালটার লজের কাছাকাছি কোথাও লুকানো হয়েছে ওগুলো। বেশি দূরে রাখেনি ডেনার। আর এ-রকম সাধারণ চোরেরা যা করে, তা-ই করবে। মাঝে মাঝেই দেখতে যাবে, ঠিকমতো আছে কিনা জিনিসগুলো। এখন আমাদের প্রধান কাজ হলো ওঁর ওপর চোখ রাখা। ও-ই পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে আমাদেকে।
বেশ,মুসা বললো। কাল থেকে তাহলে তা-ই করা যাবে।
পরদিনও ডাক্তার ওয়ালটার ফিরলেন না। তিনি থাকলে সুবিধে হতো, ছেলেদের। তার অনুমতি নিয়ে সহজেই খুঁজতে পারতো ওয়ালটার লজ.আর আশপাশের এলাকায়। অনধিকার প্রবেশের দায় এড়াতে পারতো।
ওয়ালটার লজে ঢুকলো না ওরা। ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পালা করে চোখ রাখতে লাগলো ডেনারের কটেজের ওপর। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাখে, রাতে বাদ।
কিন্তু লোকটার দৈনন্দিন কাজ বড় একঘেয়ে। ওয়ালটার লজের সীমানার বাইরেই যায় না, শুধু বাজার করা ছাড়া। হয় ঘরে বসে থাকে, নয়তো বাগানের লতাপাতা ঘাস সাফ করে।
দুদিন কাটলো এভাবে।
কিশোর এখন বিশ্বাস করতে আরম্ভ করেছে, কটেজের ভেতরে বা বাইরে খুব কাছেই কোথাও গুপ্তধন লুকিয়েছে ডেনার। শেরিফের লোক জায়গামতো খুঁজতে পারেনি, তাই পায়নি।
কিশোরের সঙ্গে একমত হলো অন্যেরাও। নইলে কটেজ থেকে দূরে পারতপক্ষে যায় না কেন ডেনার? আসলে, কুকুর যেমন হাড় পাহারা দেয়, লোকটাও জিনিসগুলো পাহারা দিচ্ছে কাছে কাছে থেকে।
নাহ্, এভাবে চলতে পারে না, তৃতীয়দিন বললো কিশোর।
কিছু একটা করা দরকার। আজ ডেনার, বাজারে গেলেই ঢুকবো। আমরা আবার তার কটেজে খুঁজে দেখবো।
যদি ধরা পড়ি? মুসা প্রশ্ন তুললো।
পড়লে কি করবে? সে নিজেই এখন শেরিফের ভয়ে অস্থির। বেশি বাড়াবাড়ি করলে বলবো, আমরা সব জানি। চুপ হয়ে যাবে।
বললো বটে কিশোর, কিন্তু কথাটা তার নিজেরই পছন্দ হলো না। সত্যি কি চুপ হবে? ওরকম একজন লোক, এতোগুলো দামী জিনিসের জন্যে বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। হয়তো আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে তার কাছে, কে জানে!
কিন্তু পরিকল্পনায় অটল রইলো কিশোর।
সুযোগ মিললো সেদিন বিকেলেই। ওয়ালটার লজের এক প্রান্তের লনের ঘাস ছাঁটতে গেল ডেনার। অনেকক্ষণ লাগবে কাজ করতে। সোজা তার কটেজের দিকে এগিয়ে গেল ছেলেমেয়েরা।
ঢুকতে অসুবিধে হলো না। নিচতলার একটা জানালা খোলা। চৌকাঠ ডিঙিয়ে টপাটপ ভেতরে ঢুকে পড়লো ওরা।
অনেক খোঁজাখুঁজি করলো। কিছুই পেলো না।
জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বললো মুসা, পাবো কি? শেরিফের লোকেরা ট্রেনিং পাওয়া, চোরাই জিনিস কিভাবে খুঁজতে হয় ভালো করেই জানে। তারা যখন পায়নি, আমাদের আশা করাটাই বোকামি হয়েছে।
কিশোর, রবিন জিজ্ঞেস করলো। কিছু বলবে?
আমার এখনও বিশ্বাস, ধারেকাছেই কোথাও রয়েছে ওগুলো। কটেজের ওধারে ছোট ছোট দুটো ঘর আছে না, ওগুলোতেও খুঁজতে হবে…
থেমে গেল কিশোর। পায়ের শব্দ এগিয়ে আসছে।
নিশ্চয়ই ডেনার! কাঁপা গলায় বললো জিনা।
উঁকি দিয়ে দেখার জন্যে পা বাড়ালো টকার, তাকে আটকালো কিশোর। দ্রুত। একবার সারা ঘরে চোখ বোলালো, ওদের কোনো চিহ্ন ফেলে যাচ্ছে কিনা। দেখলো। তারপর সবাইকে নিয়ে আবার নিঃশব্দে জানালা দিয়ে বেরিয়ে এলো বাইরে।