বললে হয়তো যেতে দেবে না, তাই লিয়ারিকে কিছু জানালো না ওরা। ঘরে গিয়ে টর্চ নিয়ে এলো। ঢুকে পড়লো সুড়ঙ্গে।
গুপ্তদরজার কয়েক কদম পরেই সিঁড়ি পাওয়া গেল, নিচে নেমে গেছে। ওটা। দিয়ে নেমে সরু একটা গলিপথ পাওয়া গেল, দুধারে পাথরের দেয়াল, মাথার ওপরে পাথরের ছাত, মানুষের তৈরি।
এগিয়ে চলেছে ওরা। মনে হচ্ছে, ধীরে ধীরে নেমে গেছে পথটা। তবে এতো নিচেও পানি নেই, শুকনো।
আগে আগে চলেছে মুসা। হঠাৎ টর্চ নিভিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। তার গায়ের ওপর। এসে প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়লো কিশোর। কি হলো?
শ শ শ! একটা শব্দ শুনলাম!
কয়েক মিনিট চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো ওরা। কিছুই ঘটলো না। কিন্তু মুসা যখন শুনেছে বলেছে, নিশ্চয় শুনেছে, ভুল হতে পারে না। তার শ্রবণশক্তি খুবই প্রখর।
চোখে সয়ে এলো অন্ধকার। সামনে আবছা আলো পড়লো এখন।
খোলা! বললো টকার। সুড়ঙ্গ শেষ নাকি…
চুপ? তাকে থামিয়ে দিলো কিশোর।
আরও কিছুক্ষণ পঁড়িয়ে থাকার পরও কিছুই ঘটলো না দেখে আবার এগোলো ওরা। খুব সাবধানে, পা টিপে টিপে। শুরুতে যেমন নেমেছিলো, এখন আবার উঠে যাচ্ছে পথটা। শেষ মাথায় পৌঁছে গেল। সুড়ঙ্গমুখ ঘিরে ঘন হয়ে জন্মেছে লতাপাতা, ঝোপ। ওগুলোর ফাঁক দিয়ে চোখে পড়লো উজ্জ্বল রোদ।
সাবধানে মাথা উঁচু করলো মুসা। আরি, ওয়ালটার লজ! ফিসফিস করে। বললো সে। ওই যে, বাংলোটা দেখতে পাচ্ছি।
পেছন থেকে কিশোরও মাথা উঁচু করে দেখলো।
এবার কি করবো? জানতে চাইলো মুসা। বেরোবো?
এক মিনিট, বললো কিশোর। দরজা-জানালা তো বন্ধ দেখা যাচ্ছে, অন্তত এদিকেরগুলো। দেখি, কেউ বেরোয় কিনা।
আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে, সুড়ঙ্গের ভেতর থেকে বললো টকার। বেরোও।
তার কথার জবাব দিলো না কেউ।
পুরো এক মিনিট চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে কিশোর বললো, হ্যাঁ, এবার বেরোনো যায়। শব্দ করবে না। ডেনার দেখে ফেললে হুঁশিয়ার হয়ে যাবে। বলা যায় না, বিপদেও ফেলে দিতে পারে।
বেরিয়ে এলো সবাই।
পুরো এলাকাটাই নির্জন, লাগছে। সুড়ঙ্গমুখের কাছে ঝোপের ভেতরে বসে রইলো ওরা। সময় কাটছে খুব ধীরে। কিশোর ভাবছে, নিশ্চয় গাছপালা পরিষ্কার করার সময় কোনোভাবে এই সুড়ঙ্গমুখ আবিষ্কার করে ফেলেছে ডেনার। হয়তো ডাক্তার ওয়ালটারও এ-সম্পর্কে কিছু জানেন না।
আরও কিছুক্ষণ কাটলো।
ঝোপ থেকে বেরোনোর নির্দেশ দিলো কিশোর।
বাড়িটার দিকে এগোলো ওরা। শান্ত, যেন ঘুমিয়ে রয়েছে বাংলো।
নেই কেউ, টকার বললো।
আস্তে বলো, বললো কিশোর। শুনে ফেলবে।
যদি থাকে, বললো জিনা।
থাকতেও পারে।
বাংলোর ধার ঘুরে একপাশে চলে এলো ওরা। খানিক দূরে. একটা ছোট। কটেজ দেখা গেল।
নিশ্চয় ওখানে থাকে ডেনার, কটেজটা দেখিয়ে বললো রবিন।
চলো, গিয়ে দেখি, কিশোর বললো। আছে কিনা।
কী? মুসার প্রশ্ন। গুপ্তধনগুলো?
না, ডেনার। আমার মনে হয় না। গুপ্তধন ঘরে রাখবে। ভয় আছে না? শেরিফ যদি গিয়ে খোঁজাখুঁজি করে?
যাবো? যদি দেখে ফেলে? দ্বিধা করছে মুসা।
নাথিং ভেনচার, নাথিং উইন। এরকম কাজ আর আগে কখনও করেনি টকার, খুব মজা পাচ্ছে। এর তুলনায় গাড়ি হওয়াটা অনেক পানসে মনে হচ্ছে এখন তার কাছে।
ঠিক, সায়, জানিয়ে বললো কিশোর। ঝুঁকি না নিলে জিতবো কিভাবে? আর, ফরচুন ফোভাব দা বোল্ড।
হয়েছে হয়েছে, দুহাত তুললো মুসা। ওসব তত্ত্বকথা শুনতে ভাল্লাগে না। চলো যাই।
কটেজের পেছনের ছোট বাগানে চলে এলো ওরা, বিন্দুমাত্র শব্দ করলো না। রাফিয়ানও একেবারে চুপ। টকারের কাঁধে বসা নটিও। কিভাবে যেন বুঝে গেছে, এখন জরুরী অবস্থা।
উঁকি দিয়ে দেখে এলো রবিন। ডেনার ব্যাটা আছে ঘরে! আরও একজন। আছে। কোন
দেখি তো, এগিয়ে গেল মুসা। কয়েক কদম এগিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে। এগোলো। থামলো গিয়ে নিচতলার একটা জানালার নিচে। তারপর ধীরে, খুব ধীরে মাথা তুললো।
অন্যেরাও একইরকম ভাবে গিয়ে থামলো তার পাশে। এক এক করে মাথা তুলতে লাগলো। ঘামছে দরদর করে, যতোটা না পরিশ্রমে, তার চেয়ে বেশি উত্তেজনায়। গরম তেমন নেই। ঝোপ থেকে যখন বেরিয়েছিলো; কড়া রোদ ছিলো। এখন নেই। যেন চোখের পলকে কোথা থেকে এসে উদয় হয়েছে কালো মেঘ, ঢেকে দিচ্ছে সূর্য।
বাইরের আলোর তুলনায় ঘরের ভেতরে অন্ধকার। আবছামতো দেখা যাচ্ছে দুজন মানুষকে। তবে ওদের চিনতে কোনো অসুবিধে হলো না ছেলেদের।
একজন ডেনার। অন্যজন সেই কালো-চুল তরুণ, নকল ড্যানি। একটা টেবিলের দুধারে বসেছে দুজনে। টেবিলের ওপর দুই বোতল বিয়ার। শান্ত কণ্ঠে কথা বলছে। নিজেদের আলোচনায় এতোই মগ্ন, ওদেরকে যে দেখছে পাঁচজোড়া চোখ, খেয়ালই করলো না।
.
১২.
আসার সময়, শেরিফের একজন লোককেও দেখোনি? আশ্চর্য! বললো ডেনার। এই একটু আগে এসেছিলো ওরা, কটেজে খুঁজে দেখতে। গাধার দল। খালিহাতে ফিরে গেছে। ওদের বোকামি দেখে হাসি পেয়েছিলো আমার।
চাচা, তুমি একটা জিনিয়াস, হেসে বললো তরুণ। নিশ্চয় তাজ্জব করে দিয়েছে ওদের। ওরা কল্পনাও করতে পারবে না, কোথায় লুকিয়েছো।
না তা পারবে না। তোমাকে তো আগেই বলেছি, কিছু করতে পারবে না।
তবে, এজন্যে ছেলেগুলোকেও ধন্যবাদ দেয়া দরকার। ওরাই তো খুঁজে পেয়েছে। আর এমন জায়গায় নিয়ে লুকিয়েছে…হাহ হাহ হা! যা-ই বলো, সেলারে না রেখে ঘরে রাখলে কিন্তু বের করে আনা মুশকিল হতো। বিচ্ছ একেকটা। সঙ্গে। বাঘের মতো এক কুত্তা। বানরটাও আস্ত বাঁদর। এক মুহূর্ত চুপ করলো। খুলে দেখেছো নাকি?