স্থির দাঁড়িয়ে রয়েছে কিশোর। ভাবছে। কিন্তু ঢুকলো কিভাবে? বিড়বিড় করলো আনমনে। পাথরের দেয়াল…লিয়ারি বলেছিলো, আগে নাকি হান্টিং লজ। ছিলো এটা। সেই বাড়ি ভেঙে তার ওপর তৈরি হয়েছে লিয়ারি কটেজ। সেলারের দরজায় নিজের হাতে তালা লাগিয়েছি আমি, নিজের হাতে খুলোম। তাহলে?
ওই জানালা দিয়ে নয় তো? দেয়ালের অনেক ওপরের ছোট জানালাটা। দেখালো রবিন। ওটা দিয়েই ঘরে আলো আসে।
না। ওটা দিয়ে বড় মানুষ কেউ ঢুকতে পারবে না। বাচ্চাটাচ্চা, টকারের মতো হলে কিন্তু এতো ভারি একটা সুটকেস নিয়ে ওখানে উঠতে পারবে না টকারের মতো কেউ। বড় মানুষ হলেও মইয়ের দরকার হবে।
দা মিস্টরি অভ দা লকড় রুম! চেঁচিয়ে উঠলো টকার। একটা গোয়েন্দা, গল্পের বইয়ের নাম। পড়েছে সে। প্রায় ওটার মতোই কাণ্ড হয়েছে এখানেও। ঢোকার পথ নেই। তাহলে সুটকেস নিয়ে গায়েব হলো কিভাবে?
দরজা-জানালা সব পরীক্ষা করে দেখলেন শেরিফ। ভেঙে ঢোকার কোনো চিহ্ন নেই।
ওপরে উঠে এলো সবাই।
শুনে, আরেকটু হলেই হাত থেকে চায়ের কাপ ফেলে দিয়েছিলো লিয়ারি। ছলকে খানিকটা চা পড়ে গেল মেঝেতে।
প্রথম থেকে সব বলো তো আবার, শুনি, সোফায় বসে বললেন শেরিফ।
গোড়া থেকে আবার বলা হলো তাকে।
হুঁ, চা শেষ করে কাপটা ঠক করে নামিয়ে রাখলেন টেবিলে। ওই ডেনার ব্যাটাকেই গিয়ে ধরতে হবে। জানতে হবে, কাকে পাঠিয়েছিলো ড্যানির পরিচয়। দিয়ে।
.
১১.
সরাসরি সব অস্বীকার করলো ডেনার-সে কিছুই জানে না। এমনকি নোটটাও নাকি সে লেখেনি। সেটা প্রমাণও করা গেল না। কারণ, হাতের লেখা মিললো না। মহাধড়িবাজ লোক। নিশ্চয় অন্য কাউকে দিয়ে লিখিয়েছে, হতে পারে নকল ড্যানিকে দিয়েই। তাকে ধরা গেল না। হয়তো লুকিয়ে আছে কোথাও, কিংবা পালিয়ে গেছে। মোট কথা, ডেনারের মুখ থেকে কিছুই বের করা গেল না। তাকে, ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেন শেরিফ। দোষী প্রমাণ করতে না পারলে আটকে রাখবেন কিভাবে?
হতাশ হয়ে কটেজে ফিরে এলো ছেলেরা। কিশোর নিশ্চিত, কাজটা ডেনারই করেছে। দুপুরের খাওয়া শেষে আলোচনায় বসলো সবাই।
মিটিঙে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, তদন্ত চালিয়ে যাবে ওরা।
সেলারে চলো, বললো কিশোর। আরেকবার খুঁজে দেখি, কোনো সূত্র। পাওয়া যায় কিনা।
ওখানে গিয়ে আর কি দেখবো? মুসা বললো। তখন আমরা সবাই দেখেছি। শেরিফ দেখেছেন। থাকলে কি পাওয়া যেতো না?
দেখেছি। তবে একটা জায়গা বাকি রয়ে গেছে। মনে পড়েছে আমার।
অবাক হয়ে বললো মুসা, কোথায়?
চলো। দেখাবো।
আবার সেলারে নামলো ওরা।
ঢুকেই জিজ্ঞেস করলো মুসা, কোথায়?
ওই যে, হাত তুলে দেখালো কিশোর।
ওগুলো তো বস্তা! ধাক্কা লেগে পড়েছে।
হ্যাঁ, বস্তা। তবে ধাক্কা নয়, বরং বলা ভালো, ঠেলা দিয়ে ফেলেছে।
ঠেলা তো পরে দিয়েছে। ঢুকলো কোনখান…
সেটাই তো দেখতে এলাম। বস্তাগুলোর দিকে এগিয়ে গেল কিশোর। দ্রুত সরাতে শুরু করলো।
গোপন পথ-টথ আছে ভাবছো নাকি? পাশে এসে দাঁড়িয়েছে রবিন।
হ্যাঁ।
রবিন আর মুসাও হাত লাগালো। দেখতে দেখতে সরিয়ে ফেললো সমস্ত বস্তা। কিন্তু কোথায় গুপ্তপথ? কোনো চিহ্নই নেই। নিরেট পাথরের দেয়াল যেন ব্যঙ্গ করে হাসছে ওদের দিকে চেয়ে।
দেয়ালটার দিকে তাকিয়ে রইলো কিশোর। নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটলো দুবার।
এবার কি বলবে? মুসা বললো।
এখনও বলবো গুপ্তপথ আছে। নইলে ঢোকার আর কোনো উপায় নেই। এসো, খুঁজে দেখি। বসে পড়ে দেয়ালে হাত রাখলো কিশোর। হাত বুলিয়ে দেখতে লাগলো, কোথাও বাধে কিনা, পাথরের কোনো কিনার বেরিয়ে আছে কিনা।
নেই। অন্যান্য খাঁজগুলোর মতোই বস্তার পেছনের চৌকোণা বড় পাথরটার কিনারে খাজ। অন্যগুলোর সঙ্গে কোনো তফাত নেই।
এই, এসো তো, ডাকলো কিশোর। সবাই ধাক্কা দাও।
জোরে ধাক্কা দিতেই সরে গেল পাথরটা, দরজার পাল্লার মতো বেরিয়ে পড়লো। কালো সুড়ঙ্গমুখ। টকার ধাক্কা দিচ্ছিলো এক কিনারে, আরেকটু হলেই হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলো সুড়ঙ্গের মধ্যে, যেভাবে হঠাৎ সরেছে পাথরটা।
তাহলে আমিই ঠিক! এতোক্ষণে হাসি ফুটলো গোয়েন্দাপ্রধানের মুখে। পুরনো এলাকা এটা, বাড়িঘর বেশির ভাগই পুরনো আমলের। আর এটা তো সবচেয়ে পুরনোগুলোর একটা। তখন লোকে এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে সুড়ঙ্গ-যোগাযোগ রাখতো। বিশেষ করে হামফ্রে ওয়ালটারের মতো লোকেরা। আমার বিশ্বাস, এই সুড়ঙ্গ চলে গেছে একেবারে দুর্গটার নিচে। আর গেছে। ওয়ালটার লজের নিচ দিয়ে, কিংবা পাশ দিয়ে। এটা জানে ডেনার। রাতে এই পথ। দিয়েই চুরি করতে এসেছিলো। আর এমনি কপাল, একেবারে তার পথের মুখেই জিনিসগুলো রেখে দিলাম। আমি একটা গর্দভ! আরও ভালোমতো ভাবা উচিত ছিলো।
এখানে সুড়ঙ্গ রয়েছে জানার কথা নয় তোমার, রবিন বললো। একটা কথা ঠিকই বলেছে। ডেনারই কাজটা করেছে। ওয়ালটারদের ওখানে অনেক দিন কাজ করছে সে, সব কিছু তার চেনা, জানা। সুড়ঙ্গ যে আছে, জানে।
তাহলে এখনও দাঁড়িয়ে আছি কেন আমরা? বলে উঠলো মুসা। চলো না যাই। ও-ব্যাটা যেখান দিয়ে এসে নিয়ে গেছে, ওখান দিয়ে গিয়ে আমরা আবার ফেরত নিয়ে আসি।
গেলেই তো আর হলো না, জিনা বললো। নিয়ে গিয়ে কোথায় লুকিয়েছে কি করে জানবো? তবে, এই সুড়ঙ্গ কোথায় গেছে দেখতে আপত্তি নেই আমার।