কি করে দেবে? তাহলে যেতে হবে কাউকে।
কেন, টেলিফোন?
নষ্ট। তারটার ছিঁড়েছে বোধহয় কোনো জায়গায় ঝড়ে। বাজারে গিয়েছিলাম যে, তখনই মিস্ত্রীকে খবর দিয়ে এসেছি। চলে আসবে।
হুঁ! তাহলে শেরিফের অফিসে গিয়েই খবর দিতে হবে। তবে তার আগে কোথাও লুকিয়ে ফেলতে হবে এগুলো, গুপ্তধনের সুটকেসটা দেখালো কিশোর।
কিন্তু কোথায় লুকানো যায়? চিলেকোঠার কথা ভাবলে প্রথমে। ওখানে গিয়ে দেখা গেল, জায়গা নেই।
মুসা পরামর্শ দিলো, একটা ট্রাংকে ভরে তালা দিয়ে রাখলে কেমন হয়? কিশোর রাজি হলো না। তার ধারণা, ওখানেই প্রথম খুঁজবে চোরেরা। শেষে সেলারে লুকিয়ে রাখবে ঠিক করলো ওরা। সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলো মাটির নিচের ঘরে।
পুরনো আমলের একটা বয়লার পড়ে আছে। বাতিল। এখন আর কাজ হয় না। ওটা দিয়ে। তার মধ্যে লুকানোর কথা বললো রবিন। দেখা গেল, বয়লারের মুখটা খুব ছোট। বাক্সটা ঢুকবে না তার মধ্যে।
ঘরের একধারে পড়ে রয়েছে একগাদা বস্তা। তুড়ি বাজিয়ে কিশোর বললো, পেয়েছি। ওখানে লুকাবো।
কোথায়? অবাক হয়ে জানতে চাইলো মুসা।
ওই যে, ওই বস্তাগুলোর তলায়। তার ওপর পুরনো একটা ময়লা চাদর ফেলে রাখবো। ব্যস, তাহলেই হবে। চোরেরা ভাবতেই পারবে না এতো দামী জিনিস ওরকম সাধারণ জায়গায় লুকানো হয়েছে।
আর থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করলো টকার, আচ্ছা, এতো ঝামেলা কেন। করতে যাচ্ছো? চোর কি আসবেই?
সেই সম্ভাবনাই বেশি! ধাক্কা দিয়ে নিতে আসার সাহসূ যখন করেছে, চুরি করা তো আরও সোজা।
খুব সাবধানে একটা একটা করে বস্তা তুলে পাশে নামিয়ে রাখলো কিশোর। কয়েকটা বস্তা সরানোর পর সুটকেসটা রাখ। বাকি বস্তাগুলোর ওপর। তারপর নামিয়ে রাখা বস্তাগুলো তুলে আবার আগের মতো সাজিয়ে দিলো সুটকেসটার ওপর। তার ওপর বিছিয়ে দিলো একটা পুরনো চাদর, এলোমেলোভাবে। যেন অনেকদিন থেকেই ওটা ওভাবে পড়ে আছে।
ঘরের আরেক ধারে পুরনো, একটা ভাঙা খাট ফেলে রাখা হয়েছে। কি ভেবে, ওই খাটটা তুলে এনে বস্তাগুলোর ওপর রাখতে বললো কিশোর।
ধরাধরি করে খাটটা তুলে এনে বস্তার দিকের দেয়াল ঘেঁষে রাখলো ওরা। ঢাকা পড়ে গেল বস্তাগুলো,। খাটের নিচ দিয়ে উঁকি না দিলে আর চোখে পড়ে না।
যাক, আপাতত নিরাপদ, হাত ঝাড়তে ঝাড়তে বললো কিশোর।
তো, শেরিফকে কি আজই খবর দিতে হবে? জিনা জিজ্ঞেস করলো।
হ্যাঁ, তাড়াতাড়ি করা উচিত! অযথা ঝুঁকি নেয়ার কোনো মানে হয় না। কেন, তুমি যাবে নাকি?
নাহয় গেলামই।
কিন্তু সেলার থেকে বেরিয়েই বেরোনোর আশা বাদ দিলো ওরা। আবার কালো মেঘে ঢেকে গেছে আকাশ। দেখে বিশ্বাসই হতে চায় না, এই কিছুক্ষণ আগেও ঝকঝকে রোদ ছিলো।
কি আর করা? ঘরে বসেই কাটাতে হলো।
বিকেলের দিকে বৃষ্টি আরও বাড়লো। সাঁঝ হলো, রাত নামলো। আমার কোনো লক্ষণ নেই।
সারা রাত পালা করে পাহারা দিলো ওরা। এরকম দুর্যোগের রাতেই চোর ডাকাত আসার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু তাদের ধারণা ভুল হলো। কেউ এলো না। নিরাপদেই কেটে গেল রাতটা।
পরদিন সকালে আবার রোদ উঠলো।
নাস্তা সেরেই বেরিয়ে পড়বে ঠিক করলো ওরা। জিনা আর রবিন যাবে শেরিফকে খবর দিতে। কিশোর আর মুসা যাবে আবার ওয়ালটার লজে, ডাক্তার। এসেছেন কিনা খোঁজ নেয়ার জন্যে। আর টকার থাকবে কটেজে, লিয়ারির সঙ্গে। বাড়ি পাহারা দেবে। চোর-ডাকাত এলে ছুটে গিয়ে খবর দেবে কিশোর আর মুসাকে।
প্রথমে ঘরে থাকতে রাজি হলো না টুকার।
তাকে বোঝালো মুসা। শেষে বললো, তোমার গাড়ি চালানোর এই তো। সুযোগ। সোজা রেসিং-কার হয়ে ছুটে যাবে। তাছাড়া রাফিয়ান আর নটি থাকছে। নকল ড্যানির কি অবস্থা করেছিলো, ভুলে গেছো?
হাসি ফুটলো টকারের মুখে।
বেরিয়ে পড়লো ওরা যার যার মতো।
ওয়ালটার লজে চললো কিশোর আর মুসা। গিয়ে দেখা গেল, আগের দিনের মতোই জানালা-দরজা বন্ধ। ডেনারও নেই বাগানে। বেল বাজালো, কিন্তু সাড়া পাওয়া গেল না। খানিকটা নিরাশ হয়েই কটেজে ফিরে এলো দুজনে।
ওখানেও কোনো রকম অঘটন ঘটেনি। দ্বিধায় পড়ে গেল কিশোর। তবে কি তার সন্দেহ অমূলক? গুপ্তধন চুরি করার আর কোনো চেষ্টা হবে না?
কিছুক্ষণ পরেই পিকাপ নিয়ে এলেন শেরিফ। সঙ্গে রবিন আর জিনা। তাদের সাইকেলগুলো পিকাপের পেছনে তুলে নিয়ে এসেছে।
গাড়ি থেকে নামলেন শেরিফ লিউবার্তো জিংকোনাইশান। তিন গোয়েন্দার পরিচিত। (সাগর সৈকত দ্রষ্টব্য) হেসে এগিয়ে এসে হাত মেলালেন কিশোর আর মুসার সঙ্গে। বললেন, কি ব্যাপার? তোমরা যেখানেই যাও, গুপ্তধন চলে আসে নাকি তোমাদের সঙ্গে দেখা করতে?
কিশোরও হাসলো। সে-রকমই তো লাগে। চলুন, দেখাবো।
বারান্দায় বেরিয়ে এসেছে লিয়ারি। জিজ্ঞেস করলো, কেমন আছেন, শেরিফ?
ভালো। আপনি?
ভালো। যান, দেখুন গিয়ে। আমি চা করে ফেলছি। না খেয়ে যাবেন না কিন্তু, বলেই তাড়াতাড়ি রান্নাঘরের দিকে চলে গেল লিয়ারি।
সিঁড়ি বেয়ে আগে আগে নামলো কিশোর। নেমেই চিৎকার করে উঠলো।
কি হলো! হুড়মুড় করে নেমে এলো অন্যেরা। চমকে গেল কিশোরের মতোই। খাটটা সরানো। কাত হয়ে পড়ে আছে বস্তার প। চাদরটা ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। একধারে। সুটকেসটা নেই।
ভুরু কুঁচকে রেখেছেন শেরিফ। শিওর, ওখানেই রেখেছিলে?
নিশ্চয়ই! মুসা বললো। অনেক কষ্ট করেছি লুকিয়ে রাখতে।