ফ্যাকাশে হয়ে গেল ড্যানি। জ্বলন্ত চোখে তাকালো জিনা আর কিশোরের। দিকে। মানে! আমাকে সন্দেহ করছো? ডাক্তার ওয়ালটারের ভাতিজাকে?,
না, শিওর হতে চাইছি, দরজার দিকে এগিয়ে গেল, মুসা। প্রমাণ করার মতো কিছু সঙ্গে না থাকলে চলে যান। গিয়ে নিয়ে আসুন। আমাদেরকে বিশ্বাস। করাতে পারলে তারপর পাবেন সুটকেস।
বেশ, যাচ্ছি।
আগে সুটকেসটা রাখুন, বেশ উপভোগ করছে টকার। মোটর সাইকেলের এঞ্জিনের মতো একবার গোঁ গোঁ করে উঠে বললো, যান। পঞ্চাশ মাইল বেগে ছুটে চলে যাবেন। কতোক্ষণ আর লাগবে?
কিন্তু সুটকেস রাখলো না, ড্যানি। হঠাৎ দৌড় দিলো দরজার দিকে। পাথরের। দেয়ালের মতো তার সামনে দাঁড়িয়ে গেল তিন গোয়েন্দা আর জিনা। পেছন থেকে তার জ্যাকেট খামচে ধরলো টকার।
ঝাড়া দিয়ে টকারের হাত ছাড়িয়ে ভোলা জানালার দিকে ছুটলো ড্যানি।
বাঘের মতো লাফ দিয়ে গিয়ে পড়লো রাফিয়ান। কামড়ে ধরলো ড্যানির চামড়ার জ্যাকেটের ঝুল। দুই পা তুলে দিলো গায়ের ওপর।
হাত থেকে সুটকেস ছেড়ে দিলো নকল ড্যানি–কারোই আর বুঝতে বাকি নেই এখন, সে আসল ড্যানি নয়। জ্যাকেটটা ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। টেনে বের করে নিলো কুকুরটার দাঁতের ফাঁক থেকে।
আবার কামড় দিলো রাফিয়ান। নকল ড্যানির জিনসের প্যান্টের পেছনে। হ্যাঁচকা টানে ছিঁড়ে ফেললো খানিকটা, কাপড় তো বটেই, সেই সঙ্গে কিছুটা চামড়াও। ব্যথায় চেঁচিয়ে উঠলো ছেলেটা। আবার দরজার দিকে দৌড় দিলো।
সুটকেস ফেলে দিয়েছে। আর আটকানোর কোনো মানে নেই। পথ ছেড়ে দিলো ছেলেরা।
পিছন দিকটা চেপে ধরে বারান্দা পেরিয়ে লাফ দিয়ে বাগানে পড়লো নকল ড্যানি। ইতিমধ্যে আরেক কাণ্ড হয়েছে। নটি ভেবেছে, সবাই কিছু না কিছু করেছে, তারও কিছু একটা করা দরকার। ড্যানি ঘর থেকে বেরোনোর আগেই গিয়ে লাফিয়ে উঠেছে তার কাঁধে, ঝাঁকড়া চুল খামচে ধরেছে। এখন হ্যাঁচকা টান মারছে।
দৌড়াবে, পাছা ডলবে, নাকি কাঁধ থেকে বানর ফেলবে? মহা মুশকিলে পড়ে, গেছে নকল ড্যানি। দুহাতে ধরে অনেক কষ্টে টেনে বানরটাকে নামিয়ে আনলো কাঁধ থেকে, ছুঁড়ে ফেলে দিলো। দেখে টকার গেল রেগে। লাফ দিয়ে বাগানে নেমে ইয়া বড় এক ঢিল তুলে নিয়ে ধা করে ছুঁড়ে মারলো। ধ্যাপ করে গিয়ে লাগলো সেটা ড্যানির পিঠে। ওরে বাবারে, গেছিরে! বলে আরও জোরে দিলো দৌড়। কিন্তু তার দুর্ভাগ্য তখনও শেষ হয়নি। বিশাল এক লরির মতো গর্জন তুলে তার পেছনে ছুটলো টকার।
গাড়ির আওয়াজ শুনে আরও ভড়কে গেল বেচারা ড্যানি। ভাবলো, গাড়ি নিয়ে তাকে তাড়া করেছে কেউ। পেছনে ফিরে তাকানোরও সাহস হলো না। এক লাফে গিয়ে চড়লো মোটর সাইকেলে। এঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে শাঁ করে চলে গেল।
হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়লো ছেলেমেয়েরা।
মুসা তো একেবারে বাগানে চিত হয়ে শুয়ে পড়েছে। পেট চেপে ধরে হাসছে। হাসি কিছুটা কমলে বললো, আক্কেল থাকলে…হাহ হা…আর আসবে না…রাফি ওর পাছার চামড়া…! আবার হেসে উঠলো হো-হো করে।
হাসাহাসি চললো আরও কিছুক্ষণ।
অবশেষে হাসি থামিয়ে কিশোর বললো, স্রেফ ধাপ্পা দিয়ে নিয়ে যেতে এসেছিলো…
সে-তো বোঝাই গেল, বললো রবিন। নিশ্চয় ডেনারের কাজ।
তাতে কোনো সন্দেহ আছে কি? আমরা যে গুপ্তধন পেয়েছি, একমাত্র সে-ই জানে…
আর লিয়ারি, মনে করিয়ে দিলো জিনা।
আরে না, প্রতিবাদ করলো মুসা। গলা কেটে ফেললেও লিয়ারি কিছু করবে। না। ভালো রান্না খেয়ে খেয়ে মহিলার ভক্ত হয়ে গেছে সে। সব শয়তানী ডেনারের।
এখন তাহলে আমরা কি করব? জিজ্ঞেস করলো রবিন। আবার যাবো ওয়ালটার লজে? দেখবো ডাক্তার ওয়ালটার এসেছেন কিনা?
তা-ই বোধহয় করতে হবে, কিশোর বললো। লিয়ারি বাজার থেকে আসুক। তাকে সব বলি। দেখি কি রিঅ্যাকশন হয়? তারপর খেয়েদেয়ে বেরোবো।
লিয়ারির অকৃত্রিম বিস্ময় দেখে বোঝা গেল, সে এই ধাপ্পাবাজিতে জড়িত নেই।
লাঞ্চের পর সাইকেল নিয়ে আবার ওয়ালটার লজে চললো ওরা।
আগের দিনের মতোই গেট বন্ধ। তবে আজ বাগানে কাউকে দেখা গেল না, ডেনারকেও না। বাংলোর দরজা-জানালাও সব বন্ধ। বেল বাজালো কিশোর। কয়েকবার। কিন্তু সাড়া পাওয়া গেল না। মনে হচ্ছে, কেউ নেই বাড়িতে।
আরও কয়েক মিনিট গেটের কাছে দাঁড়িয়ে দুইলো ওরা। বেল বাজালো। জবাব মিললো না।
নেই কেউ বাড়িতে, মুসা বললো।
হুঁ, রবিন একমত হলো তার সঙ্গে। ডাক্তার ওয়ালটারও ফেরেননি। কিন্তু, ডেনার গেল কোথায়?
কিশোরের দিকে তাকালো জিনা। কিশোর, এখন কি বরবো?
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছিলো কিশোর। আঁ? ফিরে তাকালো। এখন? শেরিফকে জানাতে হবে। তবে আগে গিয়ে গুপ্তধনগুলো নিরাপদ কোথাও লুকিয়ে ফেলতে হবে। চলো, জলদি চলো।
কিশোরের এই তাড়াতাড়ি করার কারণ বুঝতে পারলো না অন্যেরা। তবে কোনো প্রশ্নও করলো না। ফিরে চললো লিয়ারি কটেজে।
.
১০.
কটেজে ফিরে গুপ্তধনগুলো দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো কিশোর। যেন আশা করেছিলৈ, ফিরে এসে আর দেখতে পাবে না, তার আগেই ডাকাতি হয়ে যাবে।
লিয়ারিও ভীষণ উদ্বিগ্ন। ছেলেদের দেখেই বলে উঠলো, ডাক্তার এসেছেন?
না, জানালো কিশোর।
তাহলে তো মুশকিল হয়ে গেল। এতো টাকার জিনিস ঘরে রাখতে আর সাহস হচ্ছে না। কিছু একটা করা দরকার।
আমিও তাই ভাবছি। শেরিফকে খবর দেয়া দরকার।