সরি, বললো কিশোর। ডাক্তার সাহেবকে ছাড়া আর কাউকে বলা যাবে না। কাল আবার আসবো আমরা।
না না, দরকার কি? এসে হয়তো পেলে না, খামোকা কষ্ট করবে। তারচে এক কাজ করো, ঠিকানা রেখে যাও। সাহেব এলেই তোমাদেরকে খবর দেবো।
আবার বোকামি করে বসলো টকার। বলে ফেললো, লিয়ারি কটেজ, চেনেন নিশ্চয়?
চিনি, চিনি, হেসে বললো লোকটা। ওদিক দিয়েই তো রোজ বাজারে যাই। ঠিক আছে, মিস্টার ওয়াল্টার এলে একটা নোট ফেলে যাবোখন তোমাদের লেটার বক্সে।
লোকটার হাসি মোটেও পছন্দ হলো না মুসার। ফেরার পথে বললো, শয়তান লোক। দেখলে, গুপ্তধনের নাম শুনেই কেমন বদলে গেল?
তা না-ও হতে পারে। মিস্টার পারকারের নাম শুনেও বদলাতে পারে, রবিন বললো। আর চেহারা দেখে মানুষ বিচার করা যায় না। মুখে কড়া, মনটা হয়তো নরম।
তুমি নিজে নরম তো, তাই সবাইকে ওরকম ভাবো, বললো জিনা। আমি মুসার সঙ্গে একমত। আস্ত শয়তান লোক। হারামী নাম্বার ওয়ান। এই কিশোর, তুমি কি বলো?
আমারও ভালো লাগেনি।
আমারও না, টকার বললো। গুপ্তধনের কথা বলে বোকামি করিনি তো?
বোকামিই করেছে। আর ঠিকানা দিয়ে করেছো গাধামি। আগ বাড়িয়ে আর কথা বলতে যাবে না কক্ষণো। তোমাকে বলেছি না, আমরা গোয়েন্দা। গোয়েন্দাগিরিতে সব সময় ভেবেচিন্তে কথা বলতে হয়…
কিন্তু অসুবিধে কি হবে?
গুপ্তধনের লোভে আমাদের পেছনে লাগতে পারে। ঠিকানাও বলে দিয়ে এসেছো…
তাই তো! ভুলই হয়ে গেছে…
যা হবার হয়ে গেছে। এখন আর ভেবে লাভ নেই। দেখা যাক কি হয়। হয়তো লোকটা বিশ্বাসই করেনি আমাদের কথা।
লিয়ারি জানালো ওদেরকে, লোকটার নাম ডেনার। ডাক্তার ওয়ালটারের বাড়িতে মালীর কাজ থেকে শুরু করে কেয়ারটেকারের কাজ, সবই সে করে। ডেনার ভালো কি মন্দ, বলতে পারলো না। কারণ, বোঝার উপায় নেই। মোটেই নাকি মিশুক না লোকটা।
পরদিন সকালে ডেনার কখন এলো লিয়ারি কটেজে কেউই জানলো না। কিন্তু নাস্তার টেবিলেই পাওয়া গেল তার নোট। একটা খামে ভরে চিঠির বাক্সে ফেলে গেছে। লিয়ারি এনে দিলো ছেলেদের।
নোটে লেখাঃ জরুরী কাজে আটকে পড়েছেন ডাক্তার ওয়ালটার। তোমাদের সঙ্গে দেখা করতে পারছে না বলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আজ দুপুরের দিকে তোমাদের সঙ্গে দেখা করবে তার ভাইপো ড্যানি ওয়ালটার। জিনিসগুলো তার। হাতে দিয়ে দেয়ার জন্যে অনুরোধ করেছেন ডাক্তার ওয়ালটার।
নিচে ডেনারের সই।
রেগে গিয়ে জিনা বললো, নিজে একটা নোট পর্যন্ত লিখতে পারলো না, এতোই জরুরী কাজে ব্যস্ত? ওই ডেনার ব্যাটা তাকে কি বলেছে, কে জানে! আসলে আমাদের কথা বিশ্বাস করেনি ওরা।
ওদেরই বা দোষ কি? কিশোর বললো। আমাকে বললে আমিও বিশ্বাস করতাম না। নিজের চোখে দেখেছি, বলেই না..তবে ওরকম ভাবে হঠাৎ গুপ্তধন পেয়ে যাওয়ার অনেক কাহিনী জানি আমি।
আমিও জানি, রবিন বললো। বইয়ে পড়েছি। রেফারেন্স বইতেও আছে কিছু কিছু ঘটনার উল্লেখ।
বিশ্বাস করেনি, মুখ ভর্তি খাবার চিবাতে চিবাতে বললো মুসা, তো কি হয়েছে? করবে। যখন বাক্সটা নিয়ে গিয়ে তার সামনে ফেলবে তার ভাতিজা।
ড্যানি আসবে দুপুর নাগাদ। ততোক্ষণ আর কটেজের কাছ থেকে দূরে যেতে, পারছে না ছেলেমেয়েরা। রোদ উঠেছে। বাগানে আর পেছনের জঙ্গলে ঘোরাঘুরি করেই কাটালো ওরা।
দুপুরের আগেই এলো ড্যানি। ছাউনিতে বসে গল্প করছিলো তখন ওরা। মোটর সাইকেলের আওয়াজ শুনে ছুটে গেল।
০৯.
গেটের বাইরে মোটর সাইকেল থেকে নামলো ছেলেটা। লম্বা, হালকা, কালো চুল। বয়েস আঠারো মতো হবে। বেল বাজালো।
গেট খোলার জন্যে একসাথে এগোলো পাঁচজনে।
তোমরাই গিয়েছিলে, না? বললো আগন্তুক। আমি ড্যানি ওয়ালটার। ডেনার বললো, কয়েকটা বাচ্চা দেখা করতে এসেছিলো জরুরী কথা বলতে
ছেলেটার ওপর বিতৃষ্ণা জাগলো কিশোরের। এমন ভঙ্গিতে বাচ্চা কথাটা বললো, যেন সে নিজে একজন বুড়ো মানুষ। তাছাড়া তার তীক্ষ্ণ উঁচু পর্দার কণ্ঠস্বরও পছন্দ করার মতো নয়। .,
হ্যাঁ, আমরাই গিয়েছিলাম, নিষেধ মনে থাকলো না টকারের। আগ বাড়িয়ে কথা বলতে গেল আবার। আপনাদের পারিবারিক গুপ্তধন পেয়েছি।
চমৎকার। চাচা দেখলে খুশি হবে। চলো তো দেখি, কি পেয়েছো?
লিভিংরুমে নিয়ে আসা হলো ড্যানিকে। নিজের ঘরের খাটের নিচ থেকে বড় একটা সুটকেস বের করে আনলো কিশোর, তাকে সাহায্য করলো মুসা। টেবিলের ওপর রেখে বাক্সের ডালা তুললো।
দেখে বিস্ময়ে শিস দিয়ে উঠলো ড্যানি। দারুণ তো! সত্যি সত্যি পেয়েছে। দেখা যাচ্ছে!
চিন্তিত ভঙ্গিতে তার দিকে চেয়ে রয়েছে কিশোর। লিয়ারি বলেছে, ডাক্তার ওয়ালটার নাকি খুব ভদ্রলোক। তাহলে তার ভাইপো এরকম কেন? কেমন যেন গোয়ার, দুর্বিনীত। ব্যবহারও ভালো না। জলদস্যু হামফ্রের স্বভাব পেয়েছে নাকি?
ঠিক আছে, নিয়ে যাচ্ছি, বলতে বলতে বাক্সের ডালা নামালো ড্যানি। সুটকেস বন্ধ করলো। তারপর হাতল ধরে তুলে নিলো। সুটকেসটা যে অন্যের, এ কথাটাও যেন ভুলে গেল।
এক মিনিট, ড্যানির পথরোধ করলো কিশোর। নোট লিখেছে ডেনার, সইও তার। মিস্টার ওয়ালটার লেখেননি। না লিখুন, ডেনারের কথাই নাহয় বিশ্বাস করলাম। কিন্তু আপনি যে ড্যানি ওয়ালটার, তার প্রমাণ কি? কিভাবে বুঝবো?
হ্যাঁ, ঠিক, এগিয়ে এলো জিনা। প্রমাণ করুন, যে আপনি ড্যানি ওয়ালটার। মোটর সাইকেল এনেছেন। নিশ্চয় ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে। দেখান।