খুব খারাপ এটা, বিশেষ করে ছোট ছোট প্রাণীর জন্যে। ভ্যাম্পায়ারের কামড়ে। মরে না প্রাণীগুলো। বাদুড় রক্তও খায় খুব সামান্য, ওটুকু রক্ত শরীর থেকে গেলে। কিছুই হওয়ার কথা নয়। মরে অন্য কারণে। রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না, ক্ষত দিয়ে অনবরত বেরোতে থাকে বলে। রক্তক্ষরণে মারা যায় তার শিকার।
জোরে ডানা ঝাপটে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল বাদুড়টা। কিন্তু শক্ত জাল। একটা সুতোও ছিঁড়তে পারল না, পারবেও না।
ফলখেকো বিশাল বাদুড়ের তুলনায় এটা অনেক ছোট। ওগুলোর ডানা ছড়ালে হয় তিন ফুট, এটা বারো ইঞ্চি হবে কিনা সন্দেহ। আর শরীরটা এত্তটুকুন, এই ইঞ্চি চারেক। শয়তানীর বেলায়ও এর সঙ্গে ফলখেকো বাদুড়ের কোন তুলনা হয় না।
নিয়ে যেতে পারলে পুরো পাঁচ হাজার ডলার, হাতের পাঁচ আঙুল দেখাল। কিশোর। যে কোন চিড়িয়াখানাই দেবে। কিন্তু বাঁচিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই হবে মুশকিল।
হ্যাঁ, মুশকিলটা হবে খাওয়া নিয়ে, বলল রবিন। খাওয়াবে কি?
হেসে মুসার দিকে তাকাল কিশোর।
দুই হাত নাড়তে নাড়তে পিছিয়ে গেল মুসা, খবরদার, আমার দিকে চেয়ে! আমি রক্ত দিতে পারব না।
হেসে ফেলল সবাই।
সে পরে দেখা যাবে। জালটা মুসার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল কিশোর, ধরো এটা। রক্ত বন্ধ করি আগে। থামে তো না আর। রবিন, আয়োডিন…
বোতল আনার জন্যে রওনা হয়ে গেল রবিন।
ভ্যাম্পায়ার তো ধরা পড়ল, সমস্যা হলো খাওয়াবে কি সেটা নিয়ে।
মিস্টার আমান পরামর্শ দিলেন, উষ্ণ রক্তের কোন প্রাণী শিকার করে আনার জন্যে।
সকালে নাস্তা সেরে শিকারে চলল তাই কিশোর আর মুসা। মিস্টার আমান। দূর্বল, হ্যামকে শুয়ে রইলেন। ক্যাম্প পাহারায় রইল রবিন।
কিশোর শটগান নিয়েছে।
মুসা নিয়েছে তার বাবার পয়েন্ট টু-টু মসবার্গ রাইফেল। টেলিস্কোপ। লাগানো। পনেরো গুলির ম্যাগাজিন। হাইস্পিড লং-রেঞ্জ রাইফেল বুলেট ভরা আছে তাতে। হালকা, কিন্তু বেশ শক্তিশালী অস্ত্র। এটা দিয়ে কলোরাডোতে পুমার মত জানোয়ার মেরেছেন মিস্টার আমান।
পুমা যখন মরেছে, মুসার আশা টিগ্রেও মরবে।
আধ ঘণ্টা ঘোরাঘুরির পর পছন্দসই একটা জানোয়ারের দেখা পাওয়া গেল। কিশোর জানাল, ওটা ইঁদুর-গোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় প্রাণী ক্যাপিবারা। বড়গুলো। আকারে ভেড়ার সমান হয়। তবে এটা অনেক ছোট, বোধহয় বাচ্চা।
একটা ঝোপে লুকিয়ে নিশানা করল মুসা। টিপে দিল ট্রিগার।
বাজ পড়ল যেন। রাইফেলের আওয়াজ সামান্যই, এত জোরে হয় না। তাহলে কে করল ওই শব্দ? মুসার ধারণা হলো ক্যাপিবারাটাই গর্জন করেছে। লুটিয়ে পড়ল ওটা।
দু-জনকেই চমকে দিয়ে ঝড় উঠল যেন ক্যাপিবারার পেছনের একটা ঝোপে। লাফিয়ে বেরিয়ে এল একটা হলদে জানোয়ার, গায়ে কালো কালো গোল ছাপ। টিগ্নে! ওটাই গর্জন করেছে। ঝোঁপের আড়ালে থেকে নিশানা করছিল। ক্যাপিবারাটাকে। গোলমাল হয়ে গেছে দেখে গর্জন করে বেরিয়ে এক লাফে গিয়ে ঢুকল আরেকটা ঝোপে।
আরিব্বাবা, কতবড় দানব! ক্ষিপ্রতা কি! শক্তিও নিশ্চয় তেমনি। পয়েন্ট টু-টু দিয়ে টিগ্রে মারার চিন্তা বাদ দিল মুসা। ক্যাপিবারাটাকে মারার আগে যে জাগুয়ারটাকে দেখেনি, গুলি করে বিপদে পড়েনি সে জন্যে বার বার ধন্যবাদ দিল। ভাগ্যকে। এই খেলনা দিয়ে ওই দানব ঠেকাতে পারত না।
টিগ্রে চলে যাওয়ার পরও অনেকক্ষণ নড়ল না দুজনে। তারপর কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে সাবধানে বেরোল। পা টিপে টিপে চলল শিকারের দিকে।
ঘাসের ওপর পড়ে রয়েছে ক্যাপিবারা। অনড়।
এদিক ওদিক চেয়ে জানোয়ারটাকে তুলল মুসা। শটগানে এল জি ভরে পাহারা দিচ্ছে কিশোর।
ক্যাপিবারা নিয়ে দু-জনে দিল ছুট। এক দৌড়ে চলে এল ক্যাম্পে।
তারের জাল, খুব সরু লোহার শিক, আর খাঁচা বানানোর অন্যান্য যন্ত্রপাতি নিয়ে আসা হয়েছে। ইতিমধ্যে একটা খচা প্রায় বানিয়ে ফেলেছে রবিন।
মুসা আর কিশোরও হাত লাগাল।
খাঁচা তৈরি করে তার ভেতরে ভ্যাম্পায়ারকে রাখা হলো।
এর একটা নাম রাখা দরকার, প্রস্তাব দিল রবিন।
ইবলিস, বলে উঠল মুসা।
শুনতে ভাল্লাগে না, কিশোর বলল।
তাহলে কি? ভুরু নাচাল রবিন।
রক্তচোষা?
হ্যাঁ হ্যাঁ, খুব ভাল। ইংরেজি ব্লড সাকারের চেয়ে ভাল।
ক্যাপিবারাটাকে ভরে দেয়া হলো রক্তচোষার খাঁচায়। ঘিরে এল তিন। গোয়েন্দা। কৌতূহলী চোখে দেখছে।
নড়লও, না রক্তচোষা। খাঁচার কোণে উল্টো হয়ে চুপচাপ ঝুলে রইল।
নিচের ঠোঁটে বার দুই চিমটি কাটল কিশোর। বড় বেশি আলো খাঁচার ভেতর। একটা কম্বল দিয়ে ওপরটা ঢেকে দিল সে। ছায়া তৈরি করল ভেতরে।
আগের মতই ঝুলে রইল রক্তচোষা। তারপর নড়তে শুরু করল। খাঁচার জালে নখ আটকে ঝুলে ঝুলে এগোল। খুব সতর্ক। ক্যাপিবারাটার ওপরে এসে ঝুলে রইল এক মুহূর্ত। তারপর আলগোছে ছেড়ে দিল নখ। হালকা পালকের মত পড়ল ওটার ওপর। গুলির ক্ষতের কাছে রক্ত জমে আছে। আস্তে করে ওটার কাছে গিয়ে অনেকটা মাকড়সার মত জাপটে ধরল চামড়া, চেটে চেটে খেতে শুরু করল রক্ত।
হাসি ফুটল কিশোরের মুখে। ব্যাপারটা তাহলে সত্যি। বেশির ভাগ লোকের ধারণা, ভ্যাম্পায়ার চুষে রক্ত খায়। কেউ কেউ অন্য কথা বলে, চেটে খায়। তাই তো করছে দেখা যাচ্ছে। কুৎসিত মুখ থেকে ফুলিঙ্গের মত ছিটকে বেরোচ্ছে যেন। নীলচে-লাল জীবটা। ঢুকছে-বেরোচ্ছে, ঢুকছে-বেরোচ্ছে, সেকেণ্ডে চারবারের কম না, অনুমান করল কিশোর। বেড়াল আর কুকুর যেমন করে তরল খাবার খায়। তেমনি করে খাচ্ছে ওটা, তবে অনেক দ্রুত।