- বইয়ের নামঃ ভীষণ অরণ্য ১
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, অ্যাডভেঞ্চার, কল্পকাহিনী
ভীষণ অরণ্য ১
০১.
হ্যাঁ, পৃথিবীর সব চেয়ে বড় নদী দেখবে, গল্প করছে। কুইটো হোটেলের মালিক ডেবিটো ফেরিও। দেখবে, পৃথিবীর সব চেয়ে বড় জঙ্গল। বেশির ভাগ জায়গাতেই এখনও সভ্য মানুষের পায়ের ছাপ। পড়েনি। খাবারের গুদাম বলা চলে ওটাকে। একদিন সারা দুনিয়াকে খাওয়াবে ওই আমাজন…
লোকটার বকবক ভাল লাগছে না কিশোর পাশার। তাকে থামানোর জন্যে স্টাফ করা মস্ত এক কুমির দেখিয়ে বলল, এত বড় কুমির সত্যি আছে আমাজানে? আমি তো জানতাম…
এর চেয়ে বড়ও আছে। জানোয়ার চাও তো? পাবে। এত আছে ওখানে, নিয়ে কল করতে পারবে না। পৃথিবীর অন্য সব জানোয়ার এক করলেও এত রকমের হবে না। ভুল বললাম, মিস্টার আমান? মুসার বাবাকে সাক্ষি মানল ফেরিও।
জন্তু-জানোয়ার সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান মিস্টার আমানের। ভাল শিকারী। হলিউডে এক সিনেমা কোম্পানিতে খুব উঁচু দরের টেকনিশিয়ানের কাজ করেন। কিন্তু সুযোগ পেলেই অ্যাডভেঞ্চারে বেরিয়ে পড়েন–চলে যান শিকারে, কিংবা সাগর, হ্রদে মাছ ধরতে। কি শিকার করেননি তিনি? মেকসিকোর কলোরাডোতে পার্বত্য সিংহ, আলাসকায় গ্রিজলী ভালুক, এমনকি একবার তিমি শিকারীদের সঙ্গে গিয়ে তিমিও ধরেছেন। আফ্রিকার হাতি-মোষ আর চিতা-সিংহ তো মেরেছেনই।
কেউ জানে না, ঘুরিয়ে বললেন তিনি, কত রকমের জানোয়ার আছে। ওখানে। ওই যে বললেন, বেশির ভাগ জায়গাতে এখনও যেতে পারেনি সভ্য মানুষ। তাই ঠিক করেছি, নতুন জায়গায় যাব আমরা। যেখানে আগে কেউ যায়নি। প্যাসটাজা নদীর কথাই ধরুন।
প্যাসটাজা! আঁতকে উঠল ফেরিও। বলেন কি, সাহেব? মারা পড়বেন, মারা পড়বেন। অ্যানডোয়াজের ওধারেই যেতে পারেনি কেউ। গত বছর দু-জন। শ্বেতাঙ্গ চেষ্টা করেছিল। পারেনি। ইণ্ডিয়ানরা ধরতে পারলে, হাত তুলে একটা। জিনিস দেখাল সে। ও-রকম করে ছেড়ে দেবে।
হোটেলের লবিতে বসে কথা হচ্ছে। ফায়ারপ্লেসের ওপরে তাকে রাখা আছে অদ্ভুত জিনিসটা। মানুষের একটা সঙ্কুচিত মাথা, কমলার সমান।
কাছে গিয়ে জিনিসটা ভালমত দেখল মুসা আমান। ছোঁয়ার সাহস হলো না। জিভারো ইণ্ডিয়ানদের কাজ?
হ্যাঁ, মাথা নোয়াল ফেরিও। তবে তোমরা যেখানে গিয়েছিলে, ওখানকার জিভারো নয়, ওরা অনেক ভদ্র। ফাঁকিফুঁকি দিয়ে ছুটে এসেছ। এখন যেখানে যেতে চাইছ, ওরা ধরতে পারলে…
ছাড়বে না বলছেন? একটা রেফারেন্স বই পড়ছিল রবিন মিলফোর্ড, মুখ তুলল। কিন্তু আমি যদ্দর জানি, আজকাল আর বিদেশীদের মাথা কেটে ট্রফি বানায় না ওরা। শুধুশত্রু আর আত্মীয় যারা মারা যায়:
জোরে জোরে মাথা নাড়ল ফেরিও। জিভারো ব্যাটাদের আমি বিশ্বাস করি। তোমাদেরকেই যদি শত্রু ভেবে বসে?
অকাট্য যুক্তি। চুপ হয়ে গেল রবিন।
কিশোর তাকিয়ে আছে মাথাটার দিকে। জিভারোরা ধরতে পারলে কি করবে, আপাতত সে-সব নিয়ে তার মাথাব্যথা নেই, সে ভাবছে অন্য কথা। রকি বীচ মিউজিয়ামে ওই জিনিস নেই। ওরা পেলে ভাল দাম, দেবে ওরা। ব্যবসা করতে যখন নেমেছে, সব কিছুকেই ব্যবসায়ীর চোখে দেখা উচিত। জন্তু-জানোয়ার ধরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করবে চিড়িয়াখানা, সার্কাস পার্টি আর জানোয়ার পোষে এমন সব সংগঠনে। সেই সঙ্গে দু-চারটে অন্য জিনিস যেগুলোতে টাকা আসবে–নিতে ক্ষতি কি? ওটা বিক্রি করবেন?
দ্বিধায় পড়ে গেল ফেরিও।
তাড়াতাড়ি বললেন মিস্টার আমান, যা বলেছ বলেছ, আর মুখেও এনো না। ওরকম একটা অফার দিয়েছ শুনলেই ধরে নিয়ে গিয়ে জেলে ভরবে পুলিশ। মাথা বেচাকেনার ব্যাপারে আইনের খুব কড়াকড়ি চলছে এখানে। যারা আগে নিয়ে ফেলেছে, ফেলেছে। তবে ছাগল কিংবা ঘোড়ার চামড়ায় তৈরি নকল জিনিস নিতে পারো।
রহস্যময় হাসি হাসল ফেরিও। আমি কিন্তু বলে দিতে পারি, আসল মাথা কোথায় পাবে।
কোথায়? সামনে ঝুঁকল কিশোর।
জিভাবরা ইনডিয়ানদের কাছে।
ওদের কাছ থেকে আনলে আইন কিছু বলবে না?
না। যদি মাথাটা ইনডিয়ানদের কারও হয়।
হুঁ, অনেক আইনেই গলদ থাকে, বিড়বিড় করল কিশোর। যাকগে, মাথা পাওয়া দিয়ে কথা আমার, পলেই হলো, যেখান থেকেই হোক।
ওখানে না গেলেই কি নয়? হাত নাড়ল মুসা, অস্বস্তি বোধ করছে। বাবা, আমাদের তো যাওয়ার কথা ছিল আমাজনে। প্যাসটাজায় কেন আবার?
জবাবটা দিল রবিন, প্যাসটাজা নদী আমাজনের প্রধান পানির উৎসগুলোর একটা। আমাজন কোন মূল নদী নয়, অনেকগুলো জলধারার মিশ্রণ। ওগুলোর জন্ম হয়েছে আবার অ্যাণ্ডিজ পর্বতমালার বরফগলা পানি থেকে। প্যাসটাজা তারই একটা। এবং এটার ব্যাপারে ভৌগোলিকদের আগ্রহও খুব। কারণ এর বেশির ভাগ অঞ্চলই ম্যাপে নেই, চার্ট করা যায়নি।
কাজেই এমন একটা জায়গা দেখার লোভ ছাড়ি কি করে? যোগ করলেন মিস্টার আমান। কেন, তোমার ভয় করছে? ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন।
ভয়? ট্রফিটার দিকে আরেকবার তাকাল মুসা। তা-তো করবেই। মাথাটা আলাদা করে দিলে তো গেলাম।
দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল হোটেলের একজন কর্মচারী। হাতে একটা খাম। বাড়িয়ে দিল।
খামটা নিয়ে ছিড়লেন মিস্টার আমান। ভাজ করা ছোট এক টুকরো কাগজ বের করলেন। টেলিগ্রাম। পড়তে পড়তে ভুরু কুঁচকে গেল। বিশ্বাস করতে পারছেন না যেন। দু-বার, তিনবার পড়লেন লেখাটা।