মিছে কথা বলেছে, আবার গিয়ে আগের জায়গায় বসল কিশোর। মিসেস চ্যানেলের বেড়াল চুরি করে তার পায়ে রঙ করে তোমার ঘরে চালান দিয়েছিল। বিশ্বাস করাতে চেয়েছিল, রা-অরকনের আত্মার সাক্ষাৎ পেয়েছ।
কিন্তু কেন? চেঁচিয়ে উঠল জামান।
হ্যাঁ, কেন? প্রতিধ্বনি করল যেন মুসা।
জামানের বাবা আর ম্যানেজার জলিলকে বিশ্বাস করানর জন্যে। তাহলে প্রফেসর বেনজামিনের কাছ থেকে মমিটা ফেরত নেয়ার চেষ্টা করবেন তারা, জামানের দিকে তাকাল কিশোর। আমি শিওর, রা-অরকন তোমাদের পূর্বপুরুষ। নন।
রা-অরকন আমাদের পূর্বপুরুষ! কালো চোখের তারা জ্বলে উঠল জামানের। অনেক কষ্টে কান্না ঠেকিয়ে রেখেছে।
প্রসঙ্গ পরিবর্তন করল কিশোর। ঠিক আছে, আগে মমিটা পেয়ে নিই। তারপর বোঝা যাবে সবই। আগে আমাদের জানা দরকার, কে চুরি করেছে রা-অরকনকে, এবং কেন? জামানের দিকে তাকাল। জামান, গতরাতে মুসাকে যা যা বলেছ, আবার বল। মানে, জ্যোতিষ তোমাদের বাড়িতে যাওয়ার পর যা ঘটেছে। রবিন নোট লিখে রাখুক।
বলতে শুরু করল জামান।
সেরেছে! মালীর কথা আসতেই চেঁচিয়ে উঠল রবিন। সারাক্ষণই জলিল থাকত প্রফেসরের বাড়ির আশপাশে। সেই তোমাকে ধরেছিল! তাই তো বলি, এত সহজে ছাড়া পেলে কি করে!
আমাকে তার হাত কামড়ে দিতে বলেছিল জলিল, দিয়েছি, গর্বিত কণ্ঠে বলল জামান। আমাদের ম্যানেজার খুবই চালাক লোক!
জামান, জিজ্ঞেস করল কিশোর। সমাধিকক্ষে অভিশাপ লেখা ছিল, জান তোমরা?
নিশ্চয়, জবাব দিল লিবিয়ান ছেলেটা। জ্যোতিষ সবই বলেছে। ও বলেছে, দেশে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত শান্তি পাবে না রা-অরকনের আত্মা।
রহস্যজনক কয়েকটা ঘটনা ঘটেছিল প্রফেসরের বাড়িতে, বলল কিশোর। আনুবিসের মূর্তি উপুড় হয়ে পড়েছিল। দেয়াল থেকে খসে পড়েছিল একটা মুখোেশ। জলিলের কীর্তি, তাই না?
হ্যাঁ, হাসিতে ঝকঝকে দাঁত বেরিয়ে পড়ল জামানের। জানালার ঠিক বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল সে, হাতে একটা লম্বা শিক নিয়ে। দেয়ালে আর জানালার চৌকাঠের মাঝে আগেই একটা ছিদ্র করে রেখেছিল। সুযোগ বুঝে শিক ঢুকিয়ে ঠেলে ফেলে। দিয়েছে মূর্তিটা। শিক দিয়ে খোঁচা মেরে মুখোশও ফেলেছে। গেটের থামের খাঁজও সেই নষ্ট করেছে। এক সুযোগে জোরে বলটাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলেই সরে গেছে চোখের আড়ালে। প্রফেসরকে আতঙ্কিত করে ফেলতে চেয়েছে সে, তাহলে মমিটা দিয়ে দেবে, এজন্যে।
যা ভেবেছি, বলল কিশোর। তাহলে দেখা যাচ্ছে, প্রাচীন মমির অভিশাপ বাস্তবে কার্যকর করা মোটেই কঠিন কিছু না। ওভারঅল পরা মালী রোজই বাগানে কাজ করে, বিশ্বাসী প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছে, তাকে সন্দেহ করবে কে?
সবই বুঝলাম, বলল মুসা। কিন্তু শেষতক মমিটা চুরি করল কে? জামান কসম খাচ্ছে, ওরা চুরি করেনি। তাহলে? মিসেস চ্যানেলের বেড়ালটাই বা চুরি করল কে? কে রেখে দিয়ে এসেছিল ওটাকে জামানের ঘরে? এগুলো খুব রহস্যজনক ব্যাপার। তাই মনে হচ্ছে আমার কাছে।
হ্যাঁ, মুসার কথায় সায় দিল রবিন। আমার কাছেও তাই মনে হচ্ছে। তাছাড়া, মমিটা কথা বলে কি করে? ও সম্পর্কে জামান কিছু জানে না। কোন ব্যাখ্যা দিতে পারবে?
এবারে একটা প্রশ্ন, প্রফেসরি ভঙ্গি কিশোরের জামান, চোর দুটোকে সত্যিই দেখেছিলে? যারা রা-অরকনকে চুরি করেছে?
হ্যাঁ, মাথা নাড়ল জামান। গত সন্ধ্যায় জলিল বলল তার হাত ব্যথা করছে। আমাকে গিয়ে চোখ রাখতে বলল প্রফেসরের বাড়ির ওপর। একটা ঝোপে লুকিয়ে। বসে আছি। বেড়ালটাও সঙ্গে আছে। ইচ্ছে করেই নিয়েছিলাম, তাতে সাহস পাচ্ছিলাম। একটা ট্রাক তখন দাঁড়িয়ে আছে চত্বরে। খানিক পরেই দুটো লোককে জাদুঘর থেকে বেরোতে দেখলাম। চাদরে পেঁচানো কি একটা ধরাধরি করে নিয়ে গিয়ে তুলল ট্রাকে। তখন বুঝতে পারিনি, মমিটা নিয়ে যাচ্ছে ওরা। ওরা চলে যাওয়ার পর জাদুঘরে ঢুকে দেখলাম, কফিনে নেই রা-অরকন।
আমরা প্রফেসর উইলসনের বাড়িতে যাওয়ার পর ঘটেছিল ব্যাপারটা, মন্তব্য করল রবিন।
অপেক্ষা করতে থাকলাম, বলে গেল জামান। ট্রাক নিয়ে চলে গেল চোর দুটো। খানিক পরেই হাজির হল মুসা। বেড়ালটা আমার পাশে নেই, খেয়াল করিনি প্রথমে। তারপর দেখলাম, ওটা মুসার হাতে তাকেও চোরদের একজন বলেই ধরে নিয়েছিলাম। রাগ দমন করতে পারিনি।—দুঃখিত, মুসা। না বুঝেই কাণ্ডটা করে ফেলেছিলাম।
তাতে বরং ভালই হয়েছে, বলল মুসা। তোমার সঙ্গে পরিচয় হল। রহস্যটা সমাধান করা অনেকখানি সহজ হবে।
হুম! নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর। পুরো ব্যাপারটা জটিল, তবে স্পষ্ট।
জটিল তো বটেই, একেবারে অস্পষ্ট ঘোষণা করল মুসা। ওই বৃহস্য শুধু মাথা খারাপ করতে বাকি রেখেছে আমার!
বেশ কিছু তথ্য পেয়ে গেছি, বাস্তবে ফিরে এসেছে যেন কিশোর। এবার ওগুলো খাপে খাপে বসাতে পারলেই ব্যস! রহস্য আর রহস্য থাকবে না।
নোট পড়ায় মন দিল রবিন। তথ্যগুলো খাপে খাপে বসানর চেষ্টা করছে। যতই চেষ্টা করল, আরও বেশি জট পাকিয়ে গেল সবকিছু। সমাধান করতে পারল না। অসহায় ভঙ্গিতে মুখ তুলে তাকাল কিশোরের দিকে।
প্রথমে, বলল কিশোর। কফিনটা খুঁজে বের করতে হবে আমাদের। রহস্য সমাধানের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাব তাহলে। স্টোর-হাউসটা খুঁজে বের করে ওটার কাছে পিঠে লুকিয়ে থাকব। সন্ধ্যার পর এক সময় আসবে ওয়েব আর মেথু। কফিনটা ডেলিভারি দিতে নিয়ে যাবে। ওদেরকে অনুসরণ করব আমরা। কার কাছে নিয়ে যায়, দেখব। আসলে অপরাধীকে ধরে ফেলা কঠিন হবে না তখন। সমর্থনের আশায় তিনজনের দিকেই একবার করে তাকাল সে। ওরা নীরব। কিশোব্রের কথা। শেষ হয়নি বুঝে অপেক্ষা করছে। আবার বলল গোয়েন্দাপ্রধান, অপরাধীকে ধরতে পারলে মমি আর কফিনটা তো পেয়ে যাবই, সব রহস্যের সমাধান হয়ে যাবে।