- বইয়ের নামঃ গথ
- লেখকের নামঃ অৎসুইশি
- প্রকাশনাঃ বাতিঘর প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, ভূতের গল্প
গথ
১. মোরিনার সাথে শেষ দেখা
গথ – অৎসুইশি / অনুবাদ: কৌশিক জামান / প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০১৮
অনুবাদকের বক্তব্য :
‘অৎসুইশি’ নামটাতেই কেমন জানি অশুভ অশুভ একটা ভাব আছে। সেরা
জাপানি গৃলার লেখকদের তালিকায় অদ্ভুত নামটা তাই আলাদাভাবে আমার মনোযোগ কেড়েছিল। ইন্টারনেটে দেখলাম লেখকের সবকয়টি বইয়েরই রিভিউ ভালো কিন্তু বইগুলো সম্পর্কে সেভাবে বিস্তারিত কিছু পাওয়া গেল না। তারপর নানা কারনে এই লেখকের প্রতি আমার কৌতূহল বাড়তেই লাগল। মনে হচ্ছিল যেন ব্ল্যাকহোলের মত টানছে। পরিচিত সবখানে খুঁজলাম, কোথাও কোন বইও পেলাম না। ই-বুক পর্যন্ত পাচ্ছিলাম না! বাইরে থেকে বই আনাতে গিয়েও নানা রকমের কুফা লাগল। সেসব কাহিনী আর না বলি। সোজা কথা হলো, আমার জিদ চেপে গেল-যেভাবেই হোক এই লেখকের বই আমাকে পেতেই হবে। কী এত রহস্য তা জানতে হবে। অবশেষে অনেক ঝামেলা পর ‘গথ’-এর একটা ই-বুক পাওয়া গেল। কষ্ট কাজে দিল, খুবই ভালো লাগল বইটা পড়ে। হাতের অন্য কাজ ফেলে আগে ‘গথ’ অনুবাদ করলাম। আশা করি পাঠকদেরও ভাল লাগবে।
আর প্রেমপুকে ধন্যবাদ বইটি সম্পাদনা করার জন্য। খালামনিকে বলেছিলাম একটা বই শুধু তার জন্য লেখা হবে, এই সেই বই (জানি না আদৌ পড়বে কিনা!)। সেঁজুতি কিছুদিন আগে মালয়শিয়া থেকে অৎসুইশির ‘জু’ বইটাও এনে দিলেন। শপ টু বিডি গ্রুপের ফয়সাল ভাই কানাডা থেকে এনে দিলেন ‘সামার, ফায়ারওয়ার্কস অ্যান্ড মাই কর। তাদের দুজনকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
অবশেষে প্রকাশককে ধন্যবাদ সবসময় হাসিমুখে সব যন্ত্রণা সহ্য করার জন্য।
কৌশিক জামান
ঢাকা, ২০১৮
১
তিন সপ্তাহ আগে মোরিনার সাথে আমার শেষ দেখা হয়। গরমের ছুটি চললেও সেদিন আমাদেরকে স্কুলে যেতে হয়েছিল।
হোমরুম শুরু হওয়ার আগেই ক্লাসে ঢুকে সাথে সাথেই আমার ডেস্কের সামনে এসে দাঁড়াল।
আমরা কখনোই হাই-হ্যালোর ধার ধারি না। মোরিনো পকেট থেকে একটা নোটবুক বের করে আমার ডেস্কের উপর রাখল। নোটবুকটা আমি আগে কখনো দেখিনি।
জিনিসটা বেশ ছোট, হাতের তালুতে ভরে ফেলা যায়। বাদামি রঙের সিন্থেটিক লেদারে মোড়ানো-স্টেশনারির দোকানে এরকম নোটবুক সবসময়ই দেখা যায়।
“দেখ কি খুঁজে পেয়েছি,” সে বলল। “এটা আমার না।”
“জানি।” কথা শুনে মনে হলো ও মজা পাচ্ছিল।
নোটবুকটা হাতে নিয়ে এর নকল চামড়ার মসৃণ কাভারের স্পর্শ অনুভব করলাম আমি। খুলে দেখতে লাগলাম ভেতরে কী আছে। নোটবুকের অর্ধেকটার মত ক্ষুদে অক্ষরে লেখা দিয়ে ভর্তি। শেষের অর্ধেকটা খালি।
“গুরু থেকে পড়।”
ওর কথা অনুসারে আমি পড়া শুরু করলাম। অপরিচিত হাতের লেখা। অনেকগুলো প্যারাগ্রাফ, দেখে মনে হচ্ছিল লিস্ট ধরে সাজানো।
***
মে ১০
স্টেশনের সামনে কুসুদা মিতসুই নামের একটা মেয়ের সাথে দেখা হলো। বয়স ষোল। ওর সাথে কথা বললাম। কিছুক্ষণ পরে ও আমার গাড়িতে চড়ে বসল।
ওকে নিয়ে ট****উন্টেনে গেলাম।
ও জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আমাকে বলল ওর মা নাকি খবরের কাগজের এডিটর কলামের চিঠিগুলোর জন্য পাগল।
ট****ম্মাউন্টেনের একদম উপরে নিয়ে গাড়ি থামিয়ে ট্রাঙ্কের ভেতর থেকে ছুরি, পেরেক ভর্তি ব্যাগটা বের করলাম। ও হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করল ব্যাগে কী আছে।
***
এভাবে ডায়েরির শুরু।
কুসুদা মিতসুই নামটা আমি আগে দেখেছি…তিন মাস আগে, একটা পরিবার, স্বামী-স্ত্রী আর তাদের ছেলে, ট****ম্মাউন্টেনে হাইকিং করতে গিয়েছিল। ছেলেটার বাবা অনেকদিন পর ছুটি পাওয়ায় চূড়ায় পৌঁছেই চিৎপটাং হয়ে বিশ্রাম নিতে থাকে। ছেলেটা অনেক চেষ্টা করল বাবাকে তার সাথে খেলার জন্য কিন্তু লোকটা নড়লই না। সুতরাং লাঞ্চের পর ছেলেটা একা একাই বনের দিকটা ঘুরে দেখতে গেল।
ছেলেটার মা প্রথম খেয়াল করলেন, সে আশেপাশে নেই। তারপর বন থেকে ভেসে আসা ভয়ার্ত চিৎকার শুনতে পেলেন।
স্বামী-স্ত্রী দু-জনে ছুটে গেলেন বনের দিকে ছুটে গেলে ছেলেকে খুঁজে পেলেন সেখানে। সেখানে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিল সে, দৃষ্টি সামনে, একটু উপরে কিছু একটার দিকে নিবদ্ধ।
ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে স্বামী-স্ত্রী দেখতে পেলেন একটা গাছের গায়ে লালচে কালো রঙের নোংরা কিছু লেগে আছে। ছোটখাট কিন্তু অশুভ ধরনের কিছু, পেরেক দিয়ে গাছে লাগিয়ে রাখা হয়েছে। তারপর চারপাশে তাকিয়ে
তারা দেখলেন আশেপাশের প্রায় সব গাছেই কিছু না কিছু ৫ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে…
কুসুদা মিতসুইর শরীরের বিভিন্ন অংশ। কেউ তাকে বনে এনে টুকরো টুকরো করেছে। তারপর তার চোখ, জিহ্বা, কান দুটো, আঙুল, কাকি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ একটা একটা করে গাছগুলোতে পেরেক ঠুকে লাগিয়ে দিয়েছে।
একটা গাছের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত মেয়েটার বাম-পায়ের বুড়ো আঙুল, উপরের ঠোঁট, নাক আর পাকস্থলি লাগানো। আরেকটা, ক্রিসমাস ট্রি’র মত করে সাজানো ছিল।
সাথে সাথেই এই বিভৎস খুনের ঘটনা সারা দেশের মূল আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়াল।
মোরিনোর পাওয়া নোটবুকে বিস্তারিত লেখা ছিল-কিভাবে কুসুদা মিতসুইকে খুন করা হয়েছিল, কোন অঙ্গ কোন গাছে পেরেক মেরে লাগানো হয়েছিল, কী ধরনের পেরেক ব্যবহার করা হয়েছিল ইত্যাদি। কিন্তু লেখার মধ্যে লেখকের মানবিক অনুভুতির কোন বহিঃপ্রকাশ ছিল না।