তখনই লাইভ টেলিকাস্টে জানা গেল, জনস্রোতের বন্যা সব প্রতিরোধ ভেঙে গেম সিটিতে ঢুকে পড়েছে।
জিশান বুঝতে পারছিল, জনতার রোষে পড়লে শ্রীধর পাট্টা একেবারে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবেন—ওঁকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর সেই মৃত্যুটা জিশানের চোখে মোটেই ন্যায়বিচার নয়।
সুতরাং, ও শ্রীধরকে লক্ষ্য করে দৌড়ল। ওঁকে আপাতত আগলে রাখা দরকার। পরে ওঁর অন্যায়ের বিচার করা যাবে।
শ্রীধর পাট্টা গায়ের সাদা কোট খুলে ফেলেছিলেন, যাতে কেউ ওঁকে সহজে চিনে ফেলতে না পারে। কিন্তু জিশান ওঁকে চিনতে পারল। রাস্তার পাশের একটা গাছের আড়ালে বসে থরথর করে কাঁপছেন।
একটা শুটারকে কোনওরকমে দখল করল জিশান। ক্ষিপ্ত জনগণ শুটারটাকে ঘিরে ছিল। কিন্তু জিশানকে দেখে ওরা পথ ছেড়ে দিল।
সেই শুটারটায় শ্রীধরকে টেনে তুলল জিশান। সঙ্গে উঠল আরও দুজন মানুষ। তা ছাড়া শুটারের পাইলট তো আছেই!
শ্রীধর কাঁপা-কাঁপা গলায় জিগ্যেস করলেন, ‘আমাকে…আমাকে কো-কোথায় নিয়ে যাচ্ছ, জিশান?’
শুটারে উঠতে-উঠতে জিশান বলল, ‘এখানে থাকলে আপনি খতম হয়ে যাবেন…।’
শুটার শিস দিয়ে আকাশে উঠল। আদিগন্ত নতুন ভোরের আলো। কিল গেমের চব্বিশ ঘণ্টা শেষ।
শ্রীধর তখনও থরথর করে কাঁপছিলেন। অর্থহীন শব্দ করে গুঙিয়ে উঠছিলেন। ওঁকে দেখিয়ে একজন যাত্রী জিগ্যেস করল, ‘জিশান, এই…এই জানোয়ারটাকে আপনি… আপনি ছেড়ে দেবেন?’
জিশান তার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, ‘হ্যাঁ, ছেড়ে দেব—মানুষের মধ্যে ছেড়ে দেব। যাতে মানুষের মধ্যে থেকে, মানুষের সঙ্গে মিশে, এই জানোয়ারটা আবার মানুষ হওয়ার চেষ্টা শুরু করতে পারে।’
নীচ থেকে আবছাভাবে জনতার স্লোগান শোনা যাচ্ছিল, ‘নিউ সিটি জিন্দাবাদ! ওল্ড সিটি জিন্দাবাদ!’
সামনের ভোরের দিকে চোখ মেলে দিয়ে জিশান আপনমনেই বলল, ‘আর নিউ সিটি, ওল্ড সিটি নয়—দুটো শহর মিলেমিশে এখন থেকে একটাই নাম হবে ও আওয়ার সিটি—আমাদের শহর।’
জিশান চোখ মেলে নতুন সূর্য ওঠা দেখতে লাগল।