- বইয়ের নামঃ তেইশ ঘণ্টা ষাট মিনিট
- লেখকের নামঃ অনীশ দেব
- বিভাগসমূহঃ রোমাঞ্চকর গল্প, অ্যাডভেঞ্চার
তেইশ ঘণ্টা ষাট মিনিট
০. এক মিনিট – আপনাকে বলছি
বইটা পড়া শুরু করার আগে যদি কয়েকটা কথা জেনে নেন তা হলে আমার খুব ভালো লাগবে।
ফিউচারিস্টিক থ্রিলার ‘তেইশ ঘণ্টা ষাট মিনিট’ ‘কিশোর ভারতী’ পত্রিকায় শুরু হয়েছিল ২০০৪ সালের পুজো সংখ্যায়। লিখতে বোধহয় অনেক সময় নিচ্ছিলাম, তাই লেখা শেষ হওয়ার আগেই পুজো সংখ্যা বেরিয়ে গেল। কিন্তু সেখানে আমার লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে দেখে আশ্চর্য হলাম, লজ্জাও পেলাম। কারণ, লেখার শেষে ছাপা রয়েছে ‘প্রথম পর্ব’ সমাপ্ত। বন্ধু এবং সম্পাদক ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় পুজো সংখ্যায় আমাকে জায়গা দিতে চেয়েছেন, তাই ব্যাকরণ না মেনে ‘অসমাপ্ত’ উপন্যাস প্রকাশ করেছেন। এই ভালোবাসা আমাকে অভিভূত করেছে।
কিন্তু তারপরই কীরকম যেন একটা আলোড়ন টের পেলাম। অনেক পাঠকই দপ্তরে ফোন করে প্রশ্ন করছেন, উপন্যাসটির পরবর্তী অংশ কবে বেরোবে। যেহেতু এ-প্রশ্নের সঠিক উত্তর একমাত্র লেখকই দিতে পারেন তাই দপ্তর থেকে আমার সেল ফোন নম্বর বহু পাঠককেই দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা আমাকে প্রশ্নবাণে প্লাবিত করেছেন, কিন্তু আমি কাউকে সঠিক উত্তর দিতে পারিনি। কোনওরকমে বলেছি ২০০৫ সালের পুজো সংখ্যায় লেখাটি শেষ হবে। একজন পাঠিকা, যতদূর মনে পড়ে তিনি নিজের নাম বলেছিলেন ঝুলন গাঙ্গুলি, আমাকে একাধিকবার ফোন করে অনুরোধ করেছিলেন, ‘ফোনে আমাকে শেষটা বলে দিন না!’ তখনও অসহায়ভাবে বলেছি, ‘কী করে আপনাকে বলব? শেষটা তো আমি নিজেই জানি না!’
২০০৫ সাল এল। ‘কিশোর ভারতী’ পুজো সংখ্যাও বেরোল। কিন্তু প্রাণপণে চেষ্টা করেও লেখাটা শেষ করতে পারলাম না। লেখাটা ক্রমেই যেন দৈর্ঘ্যে বেড়ে যাচ্ছিল। তাই প্রকাশিত হল ‘দ্বিতীয় পর্ব’। লেখার শেষে ছাপার অক্ষরে পাঠক এবং সম্পাদকের কাছে মার্জনা চাইলাম, উপন্যাসটা শেষ করতে পারিনি বলে। কারণ, পুজো সংখ্যায় ‘ধারাবাহিক’ উপন্যাস ব্যাপারটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। সুতরাং আমার লজ্জা অনেক বেড়ে গেল।
কিন্তু উপন্যাসটা ‘নির্লজ্জভাবে’ দৈর্ঘ্যে বেড়েই চলল। ২০০৬, ২০০৭ এবং ২০০৮-এর পুজো সংখ্যায় প্রকাশিত হল আরও তিনটি পর্ব। কিন্তু তা সত্বেও লেখাটা শেষ হল না। আমার তখন যে কী মর্মান্তিক অবস্থা, সে একমাত্র আমিই জানি! আমার তৈরি চরিত্রগুলো তখন আমাকে নিয়ে স্রেফ লোফালুফি খেলছে, যা খুশি তাই করছে। আমি প্রাণপণে লিখে চলেছি, কিন্তু কাহিনি কিছুতেই ‘শেষ’ পৃষ্ঠায় পৌঁছচ্ছে না। তখন আমার লেখার জন্য বেশি জায়গা বরাদ্দ করতে এবং আমাকে মানসিক ‘যন্ত্রণা’ থেকে বাঁচাতে অনেক আলোচনা ইত্যাদির পর সম্পাদক উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের বন্দোবস্ত করলেন। তাই ২০০৯-এর জানুয়ারি থেকে ‘তেইশ ঘণ্টা ষাট মিনিট’ ‘কিশোর ভারতী’ পত্রিকার পাতায় ধারাবাহিকভাবে বেরোতে শুরু করল। সেপ্টেম্বর সংখ্যায় উপন্যাসের প্রথম খণ্ডে ইতি টানলাম। সেই লেখাটিই এখন বই হয়ে আপনার হাতে।
বিগত পাঁচ বছরে বহু পাঠক-পাঠিকা এই উপন্যাসটি সম্পর্কে দপ্তরে খোঁজ নিয়েছেন। ‘কবে শেষ হবে?’ এই প্রশ্নও করেছেন বারবার। ‘কলকাতা বইমেলা’-য় আমাকেও বহুবার এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু কখনও সঠিক উত্তর দিতে পারিনি। তাই আজ প্রথম খণ্ড আপনার হাতে তুলে দিতে পেরে অনেকটা হালকা লাগছে। এর পরবর্তী পর্যায় ‘কিশোর ভারতী’-র পাতায় ‘ষাট মিনিট তেইশ ঘণ্টা’ নামে ২০১০-এর জানুয়ারি থেকে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।
এই উপন্যাস যখন লিখতে শুরু করি তখন আমাদের এখানে টিভিতে রিয়েলিটি শো শুরু হয়নি। তবে ‘রোজগেরে গিন্নি’ গোছের নিরীহ গেম-শোগুলো টিভিতে দেখার সময় আমার মনে হত যে, প্রাইজ মানি যথেষ্ট পরিমাণে বাড়িয়ে দিয়ে অভাবী—অথবা, লোভী মানুষকে দিয়ে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো যেতে পারে—হয়তো প্রাণ নিয়ে খেলা করতেও তারা রাজি হয়ে যাবে। এই ভাবনা থেকেই এই উপন্যাসের শুরু।
সবশেষে আগ্রহী পাঠক হিসেবে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। আপনি—বা আপনারা—আগ্রহ এবং কৌতূহল না দেখালে এই লেখা যে-পথ ধরে এগিয়েছে সেই পথ ধরে চলতে পারত কি না কে জানে! আপনাদের নিয়মিত উৎসাহ আমাকে উৎসাহ জুগিয়েছে। তাই এই ফিউচারিস্টিক থ্রিলার আপনার জন্য। এই বইটা শেষ করার পর যাতে আপনাকে দ্বিতীয় খণ্ডের জন্য বেশিদিন অপেক্ষা করতে না হয় তার জন্য আমি অন্তত আন্তরিকভাবে চেষ্টা করব। নমস্কার—
অনীশ দেব
জানুয়ারি ২০১০
.
এক মিনিট—আপনাকে বলছি!
ষাট মিনিট তেইশ
২০০৪ সালে ‘কিশোর ভারতী’ পত্রিকার পুজো সংখ্যার পাতায় শুরু হয়েছিল ‘তেইশ ঘণ্টা ষাট মিনিট’। প্রথম পর্ব প্রকাশের পর যা-যা হয়েছিল সে সবই আপনারা জানেন। ‘তেইশ ঘণ্টা ষাট মিনিট’ বইয়ের শুরুতে তার ফিরিস্তি দিয়েছি। তথ্যের জন্য শুধু এটুকু আবার জানাই যে, ‘কিশোর ভারতী’-র পরপর চারটি পুজো সংখ্যায় উপন্যাসটির আরও চারটি পর্ব প্রকাশিত হয়—তারপর পত্রিকার সম্পাদক ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তে লেখাটি ২০০৯-এর জানুয়ারি থেকে পত্রিকার পাতায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে থাকে। ২০০৯-এর সেপ্টেম্বরে প্রথম খণ্ডে ইতি টানি। এবং সম্পাদকের পরিকল্পনা মতো ২০১০-এর জানুয়ারি থেকে ধারাবাহিকভাবে পরবর্তী পর্যায়ের প্রকাশ শুরু হয়। তখন লেখাটির নাম দিই ‘ষাট মিনিট তেইশ ঘণ্টা’। ঊনচল্লিশ কিস্তিতে সেই লেখাটি শেষ হয়ে এখন বইয়ের চেহারায় আপনার হাতে। নায়ক জিশানকে নিয়ে লেখা আমার ‘তেইশ ঘণ্টা ষাট মিনিট’ ফিউচারিস্টিক থ্রিলারের এইখানেই ইতি।