উপন্যাসটির প্রথম খণ্ড যখন পত্রিকার পাতায় পর্বে-পর্বে প্রকাশিত হচ্ছিল তখন আমি পাঠক ও সম্পাদকের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম যে, এই একটি লেখা আমি মনের মতো করে শেষ করতে চাই। আমার আবেদনে দু-পক্ষই আন্তরিক সাড়া দিয়েছেন। এ ছাড়া ‘কিশোর ভারতী’-তে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের সময় বহু পাঠক উৎসাহ দিয়ে চিঠি দিয়েছেন। অনেকে ফোন করেছেন, কেউ-বা ই-মেলে মতামত জানিয়েছেন। তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। বছর দেড়েক আগে জনৈক বয়স্ক প্রাজ্ঞ পাঠক সাক্ষাতে আমাকে উপন্যাসটি শেষ করে দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। সম্পাদকের দপ্তরে বসে মোটামুটি যে-কথাগুলো তিনি বলেছিলেন সেগুলো এইরকম : ‘এবারে ওটা শেষ করে দিন। আর টানার দরকার নেই।’ সেই সময়ে হাসি পেলেও সৌজন্যের খাতিরে হাসি চেপে রেখেছিলাম। লেখা যে ঘুড়ি নয়, ইচ্ছেমতো ‘টানা’ বা ‘ছাড়া’ যায় না, সে-কথা ওই অ-লেখক প্রাজ্ঞ মানুষটিকে শেখাতে আমার সৌজন্যে বেধেছিল। সুতরাং, এই কথাটাই বলতে চাই যে, দু-খণ্ডের এই উপন্যাসটি আমি স্বাধীনভাবে লিখেছি—সবসময় সরস্বতীর ‘চাকর’ হয়ে থেকেছি। তাই এর সমস্ত ভুল-ত্রুটি-ব্যর্থতার দায় পুরোপুরি আমার।
আর একজন উৎসাহী পাঠকের কথা খুব বলতে ইচ্ছে করছে। তিনি সোনারপুরের দেবসেনা নন্দী। উপন্যাসটির ধারাবাহিক প্রকাশের সময় তিনি নিয়মিত ফোন কিংবা এস.এম.এস. করে ওঁর কৌতূহল এবং ভালো লাগা প্রকাশ করেছেন। দেবসেনা এবং আরও অন্যান্য পাঠকের উৎসাহ আমাকে প্রতি মুহূর্তে ভেতর থেকে ভালো, এবং আরও ভালো, লিখতে চাওয়ার শক্তি জুগিয়েছে।
গত মে মাসে শারীরিক অসুস্থতার জন্য আমাকে নার্সিং হোমে ভরতি হতে হয়, দুরূহ অপারেশনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তখন শরীর আর মন খুবই ভেঙে পড়েছিল। দু-মাস লেখালিখি পুরোপুরি বন্ধ রাখতে হয়েছিল। উপন্যাসটা কীভাবে শেষ করব সেই দুশ্চিন্তায় আর শরীরের যন্ত্রণায় রাতের ঘুম উবে গিয়েছিল। কিন্তু তখনও পাঠকদের পাশে পেয়েছি। আর পেয়েছি একইসঙ্গে বন্ধু এবং ‘কিশোর ভারতী’-র সম্পাদক ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়কে। সেই কারণেই উপন্যাসটি শেষ পর্যন্ত শেষ হয়েছে এবং বই হয়ে বেরোচ্ছে। এটা যে আমার পক্ষে কী তৃপ্তির আর আনন্দের সেটা বলে বোঝাতে পারব না।
সব শেষে বলি একজনের কথা—আমার স্ত্রী শর্মিলা। একজন মৃতপ্রায় ভেঙে পড়া মানুষকে ডানা দিয়ে আগলে প্রতিটি মুহূর্তে যত্ন নিয়ে কীভাবে তিলতিল করে ‘বাঁচিয়ে’ তুলতে হয় সেটা ও দেখিয়েছে। ওকে ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা জানানোর কোনও মানে হয় না। ইতি—
ডিসেম্বর ২০১৩
.
এক মিনিট—আপনাকে বলছি!
তেইশ ঘণ্টা ষাট মিনিট সম্পূর্ণ
২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয়েছিল ফিউচারিস্টিক থ্রিলার ‘তেইশ ঘণ্টা ষাট মিনিট’-এর প্রথম খণ্ড। উপন্যাসটির বাকি অংশ ‘ষাট মিনিট তেইশ ঘণ্টা’ নামে ধারাবাহিকভাবে উনচল্লিশ কিস্তিতে ‘কিশোর ভারতী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, এবং বই হয়ে বেরোয় ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে। দু-খণ্ডে প্রকাশিত এই উপন্যাসটি আমার খুব প্রিয়—হয়তো প্রিয়তম। আমার খুব সাধ ছিল, উপন্যাসটির দুটি খণ্ড একসঙ্গে দু-মলাটের মধ্যে প্রকাশিত হোক। বন্ধু এবং প্রকাশক ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় সেই সাধ পূরণ করলেন—উপন্যাসটির অখণ্ড সংস্করণ ‘তেইশ ঘণ্টা ষাট মিনিট সম্পূর্ণ’ প্রকাশিত হল।
উপন্যাসটি যখন ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় তখন থেকেই নানান আলোচনা-সমালোচনা, তর্ক-বিতর্ক, প্রশংসা-নিন্দা ইত্যাদি এর সবসময়ের সঙ্গী। তবে তার সঙ্গে জড়িয়ে ছিল পাঠকের কৌতূহল আর নিয়মিত উৎসাহ। উপন্যাসটা লিখে চলার কাজে পাঠকের উৎসাহই ছিল আমার অন্যতম মোটিভেশান।
অতএব আমার প্রিয়তম সম্পূর্ণ উপন্যাসটি এখন আপনার হাতে। দেখা যাক, এই উপন্যাস আপনারও প্রিয়তম উপন্যাস হয়ে উঠতে পারে কি না। নমস্কার—