হুয়া এসে জানাল, দুজন গার্ড এসেছে।।
ডঃ ভাস্কো উঠে দাঁড়ালেন, তা হলে চলি কর্নেল করকার! আমি গার্ডদের নির্দেশ দিয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর গাড়ির সঙ্গে ফিরে যাব। শুকনো হাসি হাসলেন প্রকৃতিবিজ্ঞানী। সত্যি বলতে
কী, আমি নার্ভাস হয়ে পড়েছি।
কর্নেল বললেন, চিয়ার আপ ডঃ ভাস্কো! ঘোড়া-মানুষের চেয়ে স্বাভাবিক মানুষ কম বিপজ্জনক। তাকে এঁটে ওঠা সহজ। মিঃ হালদার তাকে প্রায় ধরেই ফেলেছিলেন! বোঝা যাচ্ছে, তার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র বা ছুরিও ছিল না। কাজেই তাকে পাত্তা দেওয়ার মানে হয় না।
হালদারমশাই বললেন, চোর! চোর! ছিচকে চোরের ইংরেজি কী জয়ন্তবাবু?
বললাম, ডিকশনারি দেখতে হবে।
পেটি থিফ! গোয়েন্দাপ্রবর সহাস্যে বললেন, কী কন কর্নেল সার?
কর্নেলসার ডঃ ভাস্কোকে বিদায় দিতে গেলেন। হালদারমশাই প্যান্টের পকেট হাতড়াচ্ছিলেন। নস্যির কৌটা গেল কই? বলে শার্টের বুক পকেটে হাত গুঁজলেন। এই তো, আরে! এটা আবার
কী?
উনি একটা দলাপাকানো কাগজ বের করে ফেলে দিলেন। কাগজটা আমি তুলে নিলাম কার্পেট থেকে। কাগজটার ভঁজ সিধে করে দেখি ইংরেজিতে লেখা একটা অদ্ভুত চিঠি।
মাননীয় কর্নেল সরকার, আপনারা কোথায় যাবেন, আমি জানি। তাই আপনার সাহায্যপ্রার্থী। যদি আজ রাত ১০টা নাগাদ একা বিচে যান, মুখোমুখি সব কথা খুলে বলব। আমি সামান্য মানুষ। আমাকে ভয়ের কারণ নেই।
পি. জি.
হালদারমশাই নস্যি নিয়ে নাক মুছছিলেন। বললেন, ও জয়ন্তবাবু, আমার পকেটে ওটা আইল ক্যামনে?
বললাম, মনে হচ্ছে, চোর বেগতিক দেখে এটা আপনার পকেটে খুঁজে দিয়ে পালিয়েছে।
সে কী! বলে হালদারমশাই হাত বাড়ালেন। দেখি, দেখি!
চিঠিটা কর্নেলকে লেখা। চুপিচুপি বিচ দিয়ে এসে ওই বাংলোয় পৌঁছে দিতে চেয়েছিল। আপনার পাল্লায় পড়ে সেটা হয়নি। অগত্যা আপনার পকেটে গুঁজে দিয়ে পালিয়েছে। কিন্তু আজ রাতে কর্নেল বিচে গার্ড মোতায়েনের ব্যবস্থা করে ফেললেন। আহা রে! বেচারা! বলে হালদারমশাইকে চিঠিটা দিলাম।
এই সময় কর্নেল ফিরে গেলেন। হালদারমশাইয়ের হাত থেকে নিয়ে ওঁকে চিঠিটা দিলাম। উনি গম্ভীরমুখে পড়ার পর বুক-পকেটে ঢোকালেন। তারপর অন্য বুকপকেট থেকে একটা টাইপকরা লিস্ট বের করে বললেন, প্যান অ্যামে আজ যারা তাহিতি এসেছে, তাদের নাম-ঠিকানা। ডঃ
ভাস্কো এয়ারপোর্ট থেকে জোগাড় করেছেন একটা কপি। পি জি—
হালদারমশাই বলে উঠলেন, আমাগো নাম নাই?
কর্নেল কান দিলেন না। বললেন, পদ্রো গার্সিয়া। পর্তুগিজ নাম মনে হচ্ছে। আজকাল সন্ত্রাসবাদীদের রুখতে প্লেনযাত্রীদের নাম, ঠিকানা, পরিচয়, গন্তব্য ইত্যাদি সব তথ্য পাসপোর্ট থেকে নিয়ে এয়ারপোর্ট টু এয়ারপোর্ট কম্পিউটার-ব্যবস্থার মাধ্যমে পাঠানো হয়। পেদ্রো গার্সিয়া ভারতীয় নাগরিক। ঠিকানা, রিপন লেন, কলকাতা। বয়স, ৩৫ বছর। পেশায় শিক্ষক। বিশেষ শনাক্তকরণ চিহ্ন, নাকের ডান পাশে জড়ুল। উদ্দেশ্য, পর্যটন কর্নেল চুরুট ধরালেন ব্যস্তভাবে। চোখ বুজে বললেন ফের, হ্যাঁ। এরই হাতে হয়গ্রীবের উল্কি দেখেছিলাম। অথচ সে শিক্ষক। পথে সে আমার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছে। বলেনি কেন? এদিকে ডঃ ভাস্কো এর নামের পাশে লিখে রেখেছেন, মা-আ-উ-আ-ইন। রুম নম্বর ৩১। বাহুতে উল্কি দেখতে পায়নি সরকারি গোয়েন্দরা, আশ্চর্য তো!
হালদারমশাই বলেন, একটা কথা বুঝি না। সরকারি বাংলোয় এরা গার্ড রেখেছে কেন? কর্নেলসার বলেছিলেন স্বর্গদ্বীপ। স্বর্গদ্বীপে গার্ড কেন?
কর্নেল চোখ বুজে আছেন। আমি বললাম, নরকের পাপী-তাপীরা যাতে স্বর্গে হানা দিতে না পারে।
ঠিক। ঠিক। সায় দিলেন প্রাইভেট ডিটেকটিভ।
কর্নেল চোখ খুলে সোজা হয়ে বসলেন। আচ্ছা হালদারমশাই, আপনি যেদিন পাসপোর্ট অফিসে ফর্ম আনতে গিয়েছিলেন, সেদিন কোনও লোকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল?
চমকে উঠলেন গোয়েন্দা ভদ্রলোক। হ্যাঁ। লম্বা লাইন ছিল। আমার পেছনে এক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ভদ্রলোক ছিলেন। লাইন নড়ে না দেখে উনি বললেন-
তার সঙ্গে আপনার আলাপ-পরিচয় হয়েছিল কি?
হাঃ। আমিই জিজ্ঞেস করেছিলাম, কোথায় যাওয়া হবে বললেন, তাহিতি। তখন আমিও বললাম, আরে, আমিও তাহিতি যাব। এই করে আলাপ হয়ে গেল। তাহিতিতে একটা জাহাজ কোম্পানিতে চাকরি করেন ওঁর দাদা। উনি জানতে চাইলেন আমি কেন যাচ্ছি। তখন বললাম, গভর্নমেন্ট ইনভিটেশন। আমি একজন অর্নিথোলজিস্ট। উনি বললেন, সেটা আবার কী? তখন— . কর্নেল চোখ কটমটিয়ে ফের ওঁর কথার ওপর বললেন, তখন সব কথা ফাঁস করে দিলেন আপনি?
বিব্রত মুখে হালদারমশাই বললেন, না, না। ঘোড়া-মানুষের কথা বলিনি। পাচা-প্রজাপতির কথা বলেছিলাম।
মানে-লাইনে দাঁড়িয়ে সময় কাটছিল না। করুণ মুখে নস্যি নিলেন হালদারমশাই, আমি আপনার প্রশংসা করেছিলাম কর্নেলসার। মা-কালীর দিব্যি, খারাপ কিছু বলিনি। তাই শুনেই না উনি বললেন, আপনারা কবে, কোন ফ্লাইটে যাচ্ছেন, আমিও আপনাদের সঙ্গে যাব।
কর্নেল অনিচ্ছার ভঙ্গিতে হাসলেন। সব বোঝা গেল। কিন্তু শুধু এটাই বোঝা গেল না, কেন পেদ্রো গার্সিয়া আমাকে এড়িয়ে চলল সারা পথ? কেন সে এভাবে গোপনে দেখা করতে চাইল? কী সাহায্য সে চায় আমার কাছে?
কর্নেল টেলিফোনের কাছে গিয়ে ফোন গাইড বইয়ের পাতা ওলটাতে লাগলেন, তারপর ডায়াল করলেন। মা-আ-উ-আ-ইন? আমাকে রুম নম্বর একত্রিশে মিঃ পেদ্রো গার্সিয়াকে দিন। কিছুক্ষণ পরে ফোন রেখে কনেল বললেন, ঘরে রিং হয়ে যাচ্ছে। কেউ ধরছে না।