একজন যুবক ওর পেছন দিয়ে তাকে ঠেলে বের হয়ে গেল। সে রড ধরে আছে। ঠিক যেখানে হাতে ছুঁয়ে দেখা দরকার দেখে গেছে। সে শত চেষ্টা করেও কোমর বাঁকিয়েও রক্ষা পায়নি।
সে খুবই গম্ভীর হয়ে গেল। এ কী অসভ্যতা। তখন কেন জানি সমগ্র পুরুষজাতিটাকেই ঘৃণা করতে শুরু করে। তার রাগ হয়, ক্রোধ বাড়ে–চুলের ঝুঁটি ধরে ঝাঁকিয়ে দিতে ইচ্ছে করে।
ঘাড়ে উষ্ণ নিশ্বাস পড়তেই বুঝল, আবার কেউ পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। তার কাধের উপর দিয়ে হাত বাড়াবার চেষ্টা করছে। তা ভিড়ের বাস, ঝাঁকুনিতে পড়েটড়ে গেলে হাত পা ভাঙতেই পারে।
মেয়েদের সিটের পাশে সে দাঁড়িয়ে আছে—একটা সিটও খালি নেই।
তার পেছনে যে আবার একজন কোনো পুরুষ—পুরুষ কি নারী, সে শরীরের ঘ্রাণ থেকেই তা টের পায়। তা দাঁড়িয়ে থাকুক, অসভ্যতা করলেই মাথা খারাপ হয়ে যায়। রড না ধরে থাকলে টুম্পার আরও বেশি বিপদের সম্ভাবনা।
অবশ্য পেছনে দাঁড়ানো পুরুষটি তার যে চুলের ঘ্রাণ নিচ্ছে এটা সে ভালোই বোঝে।
এতে টুম্পার অবশ্য আপত্তি নেই।
তবে ভিড়ের চাপে একেবারে পেছন থেকে ঠেসে ধরলে সে খুবই বেকায়দায় পড়ে যেতে পারে। সুযোগ বুঝে কিছু করে ফেললেই তার মাথায় রক্ত উঠে যাবে। পুরুষজাতটাকেই বেহায়া নির্লজ্জ মনে হবে।
মাথা গরম করেও লাভ হয় না। হাসিঠাট্টা বিদ্রুপ তখন সারা বাসে। পুরুষ নারী তখন সব সমান—কেউ প্রতিবাদ করে না। বরং যেন মজা পায়।
এ-সব কারণে বাসে উঠলেই ধরে নিতে হয়, সুযোগ বুঝে যাত্রীদের রুচিমতো সে ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠবে।
তবে সে দেখেছে সবাই সমান হয় না।
সে এখনও বুঝতে পারছে না, লোকটার সত্যিই আর কোথাও রড ধরায় জায়গা আছে কি নেই। ঘুরে দাঁড়াবারও তার ক্ষমতা নেই। সে ঘামছে। তার সব অবয়বে ঘাম চ্যাটচ্যাট করছে। এবং শরীরের কোনা-খামচিতেও ঘাম জমে বিশ্রী গন্ধ উঠেছে কি না কে জানে!
কাজেই পেছনের লোকটা মধ্যবয়সী না যুবা, না প্রৌঢ় সে কিছুই বুঝতে পারছে। ঘাড় ঘোড়াবারও জায়গা নেই। বাসটা বাদুড়ঝোলা হয়ে ছুটছে।
সে দেখেছে, মধ্যবয়সীরাই বেশি ইতর হয় এবং যুবকরা যতটা পারে গা বাঁচিয়ে চলে। তবে সবাই না।
টুম্পা বুঝতে পারে বয়সটারই দোষ। শরীর যেন ক-বছরে বাতাসে ফুলেফেঁপে উঠেছে।
সে বাসায় ফিরে বাথরুমে ঢুকলে এটা বেসি টের পায়। বাথরুমে নিজেকে খোলামেলা দেখার সময় টের পায় শরীরের স্পর্শকাতর জায়গাগুলো আর বাঁধ মানতে চাইছে না। কাগজে বিনোদিনী রাধার ছবিটা কী কোনো উষ্ণতার ছবি হালকা ফিনফিনে কোনো কুয়াশায় জড়ানো। সবই অস্পষ্ট দেখা যায়, স্তন, গ্রীবা এবং নাভিমূল। নাভিমূলের দিকটাই শিল্পী আবছা রহস্যময়তায় ঢেকে দিয়েছে। ছবিটায় যে যথেষ্ট যৌনতা বিদ্যমান—এবং সে ছবিটা ইচ্ছা করলে বাড়িতেও দেখতে পারত, কারণ বাড়িতেও সেই কাগজই রাখা হয়, তবে বাবাই প্রথম কাগজটা পড়েন বলে, শেষ পর্যন্ত কাগজটা আর খুঁজেই পাওয়া যায় না—তিনি বোধ হয় চান না, টুম্পার নগ্ন ছবি দেখে মতিভ্রম হোক—কাগজগুলো যে কী করছে। পরিবারে সব বয়সের মানুষই থাকে, সবার চোখে এমন একটা উলঙ্গ ছবি খুবই দৃষ্টিকটু—অথচ সবাই চুপিচুপি ছবিটা দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। রুবির বাড়িতে অবশ্য এতটা নজরদারি নেই—রুবি বড়ো হয়েছে, সে সবই বোঝে। কেবল তার বাবা-মাই মনে করে টুম্পা কিছুই বোঝে না। ভিড়ের বাসেও তার খিলখিল করে হেসে উঠতে ইচ্ছে হল।
তার বাবাটা যে কী! ন্যাকা ভাবতে পারত, শত হলেও তার বাবা, বাবাকে আর যাই ভাবা যাক ন্যাকা ভাবতে পারে না। ন্যাকা ভাবলে বাবাকে খাটো করা হয়। লুকিয়ে শেষ পর্যন্ত কাগজের সেই নির্দিষ্ট পাতাটি সে দেখেছে। বাবা পাতাটা লুকিয়ে রেখেও রেহাই পায়নি। তবে সে বিনোদিনী রাধার ছবিতে নিজেকেই আবিষ্কার করেছে। কী এমন রহস্য থেকে গেল যে রুবি ফোন করে তাকে যেতে বলেছে। দু-জনে দরজা বন্ধ করে ছবিটা দেখার এত প্রলোভনই বা কেন রুবির। বাথরুমের বড়ো আয়নায় বলতে গেলে রোজই সে নিজেকে দেখতে পায়—কেবল শরীরে তখন থাকে না কোনো মসলিনের ওড়াউড়ি। এমন নরম হালকা মসলিন শরীরে উড়িয়ে দিয়েই ছবিটায় মধ্যে শিল্পী ঝিনুকের তলপেটের মতো উষ্ণতা সৃষ্টি করেছে।
সে তো যতটা রুচিসম্মত পোশাক পরা দরকার তাই পরে। এজন্য সে পাতলা ব্লাউজ পরে না। ব্লাউজের নীচে তার অন্তর্বাস ফুটে বের হলে লজ্জা পায়—কখনো তার নিজের বৈভব হাটেঘাটে ফিরি করার স্বভাব নয়। তবু কেন যে মনের মধ্যে কোনো প্রিয় যুবকের মুখ ভেসে উঠলেই বড়ো বেশি কাতর হয়ে পড়ে।
পেছনের লোকটার চাপ ক্রমশ ভারী হচ্ছে। রড ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। মুখ না ঘুরিয়েই সে বলল, একটু সরে দাঁড়ান।
সে তার পাছা সরিয়ে নেবারও চেষ্টা করছে। লোকটা কী উজবুক!
আর একটু সরে দাঁড়াতে বলায় মহিলাদের মধ্যে মুখ চাওয়াচায়ি চলছে। টুম্পা মহিলাদেরও তখন কেন জানি নষ্ট চরিত্রের মনে না করে পারে না। এই সামান্য কথায় মুখ টিপে হাসার কি যে হল—সিটে বসে যেতে পারলে পরের সুবিধে
অসুবিধার কথা কেউ আর ভাবে না। তারপর কেন যে মনে হল সরে দাঁড়ানোর কথা তার উচ্চারণ করা ঠিক হয়নি। সরে দাঁড়াবেটা কোথায়! বাসে একটা সুচ রাখার পর্যন্ত বুঝি জায়গা নেই।