থাম তো রুবি। বাড়িতে টিভি দেখিস না?
কি রে কথা বলছিস না কেন। ফোনটা এত ঘ্যাস ঘ্যাস করছে কেন?
টিভিতে দেখা আর শোতে দেখা এক কথা বল—রবিবারের পাতাটা খুলে দ্যাখ, বিনোদিনী রাধা উলঙ্গ হয়ে শুয়ে আছে। মাথা খারাপ করে দেয়। আমি একটা অ্যাড আঁকছি। পুরুষ মানুষের।
আমি কি বিনোদিনী রাধার চেয়ে দেখতে খারাপ।
কে বলেছে খারাপ। তুই আরও সুন্দর টুম্পা। ভেসে যাওয়া হালকা মসলিনে তোকে জড়িয়ে দিলে তোর নগ্ন শরীরও আশ্চর্য এক শিল্পির আঁকা ছবি হয়ে যাবে।
তুই অসম্ভব নগ্ন থাকতে ভালোবাসিস রুবি। অলকদাকে বল না এঁকে দেবে তোর ন্যুড। বিনোদিনী রাধার চেয়েও তোকে সুন্দর দেখাবে। সকাল বেলায় তোর এত খারাপ খারাপ কথা বলতে ভালো লাগে।
মারব টুম্পা। একদম বাজে কথা বলবে না। অলকদা তোমার আমার মতো বসে নেই। রেবাদির সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করছে।
তাতে কি হল। অলকদাকে তো তুই ভালোবাসিস। অলকদার ছবির এগজিবিশানে কী ন্যাকামিটাই না করলি।
কী মিছে কথা। তুই কী রে! অলকদা রেবাদি উটিতে বেড়াতে গেছে। অলকদাকে রেবাদি ছাড়া ভাবাই যায় না। অলকদাকে দিয়ে নুড আঁকাতে যাব কেন! ও কি আমাকে আর ভালোবাসে। ভালো না বাসলে নগ্ন হওয়া যায় বল।
রাখ তো বাজে কথা, স কালবেলায় তোর মাথায় কি ঢুকেছে বল তো রুবি। এত আজেবাজে বকছিস। আমার জেরক্সগুলি করিয়েছিস?
তুই কবে আসবি? আজই আয় না। কগজে বিনোদিনী রাধা, আমি তুই, ওফ যা জমবে না! জানিস আমার ছোটোকাকা এসেছেন। তুই তো চিনিস।
আমি কাউকে চিনি না—চেনার দরকারও নেই। টি কে-র নোটগুলো তোর কাছে আছে?
সব আছে টুম্পা। তোকে কতদিন দেখি না রে। আয় না, দু-জনে দুপুরে খেয়ে জড়াজড়ি করে ঘুমাব। আসবি। হালকা মসলিনে আমরা বিনোদিনী রাধা হয়ে যাব। কুয়াশায় ভেসে যাব।
আসলে রুবি এবং টুম্পার এখন উড়ে বেড়াবার বয়স বলা যেতে পারে, আবার উড়ে বেড়াবার বয়স নাও বলা যেতে পারে। নিজেরা নিজেদের নিয়ে অদ্ভুত মজা করতে তারা ভালোবাসে। কিছুটা উচ্চবিত্ত পরিবারের বলা যায়, তবে মধ্যবিত্ত মূল্যবোধও তাদের কম না। দুজনের মধ্যে নিবিড় বন্ধুত্ব এবং অদ্ভুত সব ইচ্ছের কথা অনায়াসে তারা একজন আর একজনকে বলতে পারে।
এমনকী স্বপ্ন দেখলেও এবং স্বপ্নটা যদি শরীর নিয়ে হয় এই যেমন, টুম্পা প্রায়ই স্বপ্ন দেখে সমুদ্রে ভেসে যাচ্ছে। একজন পুরুষ সঙ্গীও সমুদ্রে ভেসে যাচ্ছে। জ্যোৎস্না রাত এবং বড়ো বড়ো ঢেউ-শরীর হালকা, সায়া শাড়ি ব্লাউজ গায়ে না থাকলে শরীর তো হালকা হবেই এবং সে দেখতে পায় একটা দ্বীপ, দ্বীপে পুরুষটি তাকে পাঁজাকোলে করে হেঁটে যাচ্ছে, তারপর বালিয়াড়ি সে এবং পুরুষটির মধ্যে যদি কোনো রমণের ছবি থাকে তাও রুবিকে টুম্পা অকপটে বলে যাবে–টুম্পার একটাই কষ্ট, পুরুষটির মুখ সে চিনতে পায় না। এই আত্মপ্রকাশের মধ্যে কোনো অশিষ্টতা আছে তারা মনে করে না।
সক্কাল বেলায় এত ফাজিল কথা বলতে পারিস! তুই কী রে রুবি। হালকা মসলিন পাব কোথায়। সুতরাং এ-সব ফাজিল কথা ছেড়ে আসল কথায় আসা যাক।–আসলে মেয়েরা যেমন হয় আয় কি।
গল্পটা বর্ষাকাল দিয়ে শুরু করলেই বোধ হয় ভালো হয়। এই আকাশ ঝকঝকে তকতকে, এই মেঘ বৃষ্টি, বর্ষার আকাশের মতোই দুই বন্ধুর প্রীতি এবং সৌন্দর্য, কেমন এক অমায়িক রূপও অনুধাবন করা যায়— ওদের কোনো অলকাও নেই রেবাদিও নেই। সব বানানো, রুবি নূডও আঁকে না, আসলে সে ছবিই আঁকে না তবু তারা দুজনেই সুযোগ পেলে একসঙ্গে বের হয়, রবিঠাকুরের জন্মদিনে শুচিশুদ্ধ হয়ে জোড়াসাঁকো যায়, কিংবা বাংলা আকাদেমিতে কবিতা পাঠের আসরেও শ্রোতার ভূমিকা পালন করে, কোনো কবি সুপুরুষ হলে দুই বন্ধুতে ঠাট্টাতামাসা করতেও ভালোবাসে—দারুণ কবিতা, গালে রেশমের মতো দাড়ি–আজকে কবিকে আমি রেহাই দিচ্ছি না। সঙ্গে সঙ্গে রুবিও বলবে, আমিও না। যা হয় হবে।
এ মা, তুই কী রে! আমার পছন্দের জিনিস তুই চুরি করবি। আমি তাকে রেহাই দিলে তোর কি সুবিধা হয়! ঠিক আছে আমি দেখি আর কাউকে পাই কি না। একমাত্র বিনোদিনী রাধার আশ্চর্য সুন্দর চিত্রশিল্পটি ছাড়া এ-গল্পের আয় কোনো সারবত্তা নেই।
আসলে রুবির এ-সবও ফাজিল কথা—অথবা বলা যায় কথার কথা, মেট্রোতে ভালো বই থাকলে তারা একসঙ্গে দেখে, এমনকী বেড়াতে যদি যায় কেউ কারও বাড়িতে নিজের নিজের ঘরে টিভি চালিয়ে ইংরেজি অর্ধ-উলঙ্গ বই তারা দেখে, তবে কেউ দরজায় নক করলেই উঠে যায় এবং চ্যানেল পাল্টে ডিসকভারিতে এসে যায়, আসলে পড়াশোনার চাপ যথেষ্ট, তাই একটু সময় নিয়ে খেলা—আসলে গল্পটা কেন যে শুরুই করতে পারছি না-বুঝছি না, এমন দু-জন অকপট মেয়েকে যদি কোনোদিন কোনো পাহাড়ে কিংবা সমুদ্রতটে দেখে ফেলা যায়—তবে তাদের কথা কীভাবে যে প্রকাশ করা যায়, এই সব ভেবেই যখন কলমের ডগায় দুই সুন্দরী ভেসে যায় তখন তাদের খারাপ ভাবতে আমার একদমই ভালো লাগে না—গল্পটা যদি এ-ভাবে শুরু করি–
আহা কী বৃষ্টি!
বর্ষার বৃষ্টি এই আসে এই যায়। রুবি এমন সুন্দর একটি চিত্রশিল্প নিয়ে অপেক্ষা করছে সে একা বাড়িতে থাকে কী করে! বের হবার সময় টুম্পার মনেই হয়নি শেষে সারাদিনই তাকে বৃষ্টি তাড়া করবে।