চুবু : কাউন্টের শিকারি তাকে চাবুক মেরেছিল বলে সে পিছিয়ে পড়ে।
লমফ : সেইটেই তার প্রাপ্য। আর সবকটা কুকুর খেঁকশিয়ালকে তাড়া লাগাচ্ছিল আর ট্রাইয়ার জ্বালাতন করতে লাগল ভেড়াগুলোকে।
চুবু : বাজে কথা। শোনো বাছা, আমি বড় সহজে চটে যাই, তাই তোমায় অনুরোধ করছি, এ আলোচনাটা থাক। লোকটা ফ্লাইয়ারকে চাবুক মেরেছিল, কারণ মানুষের স্বভাব অন্যের কুকুরের প্রতি হিংসুটে হওয়া… হ্যাঁ, পরের কুকুরকে কেউ দু চক্ষে দেখতে পারে না। আর আপনিও, স্যার, ওর ব্যত্যয় নন। হ্যাঁ, যেই দেখলে আর কারও কুকুর তোমার ট্রাইয়ারের চেয়ে সরেস, ব্যস, অমনি জুড়ে দিলে কিছু একটা… আর-যা-সব-কী-সব… দেখলে, আমার সব মনে থাকে।
লমফ : আমারও।
চুবু : [ভেংচিয়ে] আমারও!
লমফ : বুক ধড়ফড় করছে… আমার পা অবশ হয়ে গিয়েছে… আমি কিছুই…
নাতালিয়া : [ভেংচিয়ে বুক ধড়ফড় করছে! কী রকম শিকারি মশাই, আপনি? আপনার উচিত শিকারে না গিয়ে আগুনের পাশে শুয়ে শুয়ে আরশুলা মারা। বুক ধড়ফড় করছে, হুঁঃ।
চুবু : হ্যাঁ, হক কথা বলতে কী, শিকার-টিকারে বেরোনো আসলেই তোমার কম নয়। বুকের ধড়ফড়ানি আর-যা-সব-কী-সব দিয়ে ঘোড়ার পিঠে ঝাঁকুনি খাওয়ার চেয়ে তোমার পক্ষে বাড়িতে বসে থাকাই ভালো। অবশ্য তুমি যদি সত্যিই শিকার করতে যেতে তা হলে কোনও কথা ছিল না, কিন্তু তুমি তো যাও নিছক তর্কাতর্কি করার জন্য, আর অন্য পাঁচজনের কুকুরগুলোর সামনে পড়ে তাদের বাধা দেবার জন্য আর-যা-সব-কী-সব… আমি বড্ড সহজেই চটে যাই, কাজেই এ আলোচনা বন্ধ করাই ভালো। তুমি আদপেই শিকারি নও, ব্যস।
লমফ : আর আপনি আপনি বুঝি শিকারি? আপনি তো যান কাউন্টকে নিছক তেল মালিশ করার জন্য, আর পাঁচজনের বিরুদ্ধে ঘোটালা পাকাবার জন্য… ওহ! আমার বুকের ব্যথাটা! আসলে আপনি কুচুটে।
চুবু : কী? আমি–কুচুটে? [চিৎকার করে চুপ করো।
লমফ : কুচুটে।
চুবু : ভেড়ে, বখা ছোকরা!
লমফ : বুড়ো-হাবড়া! ভণ্ড!
চুবু : চুপ করো, না হলে আমি একটা নোংরা বন্দুক দিয়ে তোমাকে তিতির মারার মতো গুলি করে মারব। ফকিকার কোথাকার!
লমফ : দুনিয়াসুদ্ধ জানে– ওহ, ফের আমার হার্টটা! আপনাকে আপনার স্ত্রী ঠ্যাঙাতো! … আমার পা-টা… আমার মাথাটা!…চোখের সামনে বিদ্যুৎ খেলছে… আমি পড়ে যাব… আমি পড়ে যাচ্ছি ..
চুবু : আর যে মাগী তোমার বাড়ি চালায় সে তোমাকে চেপে রেখেছে বুড়ো আঙুলের তলায়।
লমফ। : ও, ও, ও! আমার হার্টটা ফেটে গিয়েছে। আমার কাঁধটা যে আর নেই… আমার কাঁধটা কোথায়?… আমি মরলুম। আিরাম-চেয়ারে পতন) ডাক্তার! (মূৰ্ছা।)
চুবু : ভেড়ে! বকা! ফক্কিকার! আমি জোর পাচ্ছিনে। (জলপান) ভিরমি যাচ্ছি নাকি।
নাতালিয়া : শিকারি, হুঁ! ঘোড়ার উপর কী রকম বসতে হয়, তাই জানেন না আপনি! [পিতাকে] বাবা, কী হল ওর? বাবা! দেখ বাবা, (চিৎকার করে) ইভান ভাসিলিয়েভি! ইনি মরে গেছেন।
চুবু : আমি মূৰ্ছা যাচ্ছি … আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে! বাতাস, আমাকে বাতাস দাও!
নাতালিয়া : ইনি মারা গেছেন। লিমফের আস্তিন ধরে টানাটানি] ইভান ভাসিলিয়েভিচ! ইভান ভাসিলিয়েভিচ! আমরা কী করে বসলুম! ইনি মারা গেছেন। (আর্ম চেয়ারে পতন ডাক্তার! ডাক্তার! [ছন্নের মতো কখনও ফোঁপানো, কখনও হাসি]
চুবু : ব্যাপার কী? কী হয়েছে? তুমি কী চাও?
নাতালিয়া : [গোঙরাতে গোঙরাতে মারা গেছেন… উনি মারা গেছেন।
চুবু : কে মারা গেছে? লিমফের দিকে তাকিয়ে সত্যি ও মারা গেছে। হে ভগবান, জল, জল! ডাক্তার! লিমফের ঠোঁটের কাছে একগ্লাস জল ধরে] জল খাও! না, ও জল খাচ্ছে না… তা হলে মারাই গেছে, আর-যা-সব-কী-সব… হায়, হায়, আমার কী পোড়া কপাল! আমি আমার মগজের ভিতর দিয়ে গুলি চালিয়ে দিলুম না কেন? এর অনেক আগেই আমার গলাটা কেটে ফেললুম না কেন? আমি কিসের জন্য অপেক্ষা করছি। আমাকে একখানা ছোরা দাও। বন্দুক দাও। (লমফ একটু নড়ল মনে হচ্ছে, সেরে উঠছে… একটু জল খাও তো, বাছা! হ্যাঁ, ঠিক…।
লমফ : আমার চোখের সামনে বিদ্যুৎ খেলছে… কুয়াশা না কি… আমি কোথায়!
চুবু : তুমি যত শিগগির পার বিয়ে করে ফেল আর জাহান্নামে যাও… ও রাজি আছে দু জনের হাত মিলিয়ে দিয়ে] ও রাজি আছে, আর-যা-সব-কী-সব, আমি তোমাদের আশীর্বাদ– আর-যা-সব– করছি। শুধু আমাকে শান্তিতে থাকতে দাও।
লমফ : এ্যা? কী? [দাঁড়িয়ে উঠে] কে?
চুবু : ও রাজি আছে। আবার কী হল? চুমো খাও… আর জাহান্নামে যাও।
নাতালিয়া : [গোঙরাতে গোঙরাতে] উনি বেঁচে আছেন… হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমি রাজি…
চুবু : এসো, চুমো খাও, একজন আরেকজনকে। লমফ : এ্যা, কাকে? নাতালিয়াকে চুম্বন] আমার কী আনন্দ! মাফ করবেন, ব্যাপারটা কী? ওহ্! হ্যাঁ, বুঝতে পেরেছি… আমার হার্ট… বিদ্যুৎ.. আমি কী সুখী, নাতালিয়া স্তেপানভনা… নাতালিয়ার হস্তচুম্বন আমার পা-টা যে অবশ হয়ে গেল…।
নাতালিয়া : আমি… আমিও বড় সুখী…।
চুবু : ওহ! পিঠের থেকে কী বোঝাটাই না নামল! আহ!
নাতালিয়া : কিন্তু… যাই বল, তোমাকে এখন স্বীকার করতেই হবে, ট্রাইয়ার ফ্লাইয়ারের মতো অত ভালো না।
লমফ : সে ভালো।
নাতালিয়া : সে খারাপ।
চুবু : এই লাও! পারিবারিক সুখ আরম্ভ হয়ে গিয়েছে। শ্যাম্পেন নিয়ে আয়।