লমফ : ভাবছি, নবান্নের পরই বন-মোরগ শিকারে বেরুব… মনে পড়ল; আপনি কি শুনেছেন, আমার কী মন্দ কপাল…আমার ট্রাইয়ার বেচারি– আপনি তো ওকে চেনেন– ওর পা খোঁড়া হয়ে গিয়েছে।
নাতালিয়া : আহা বেচারা! কী করে হল?
লমফ : আমি ঠিক জানিনে… বোধহয় পায়ের থাবা মচকে গিয়েছে, কিংবা হয়তো অন্য কুকুর তাকে কামড়ে দিয়েছে… দীর্ঘনিশ্বাস] আমার সবচেয়ে ভালো কুকুর, টাকার কথা না হয় বাদই দিলুম। জানেন, মিরনফকে একশো পঁচিশ রুবল দিয়ে ওকে কিনি।
নাতালিয়া : বড্ড বেশি দিয়েছিলেন, ইভান ভাসিলিয়েভিচ।
লমফ : আমার তো মনে হয়, সস্তাতেই পেয়েছি। ওর মতো কুকুর হয় না।
নাতালিয়া : বাবা তার ফ্লাইয়ারের জন্য পঁচাশি রুবল দিয়েছিলেন। আর ফ্লাইয়ার আপনার ট্রাইয়ারের চেয়ে ঢের ঢের ভালো।
লমফ : ফ্লাইয়ার ট্রাইয়ারের চেয়ে ভালো? কী যে বলছেন! (হাস্য] ফ্লাইয়ার ট্রাইয়ারের চেয়ে ভালো! নাতালিয়া : নিশ্চয়ই ভালো। অবশ্য স্বীকার করছি, ফ্লাইয়ার বাচ্চা এখনও পুরো বয়েস হয়নি কিন্তু যেমন বুদ্ধি তেমনি আর সবদিক দিয়ে। ভলচানিয়েৎস্কিরও এমন একটা কুকুর নেই।
লমফ : মাফ করতে হল, নাতালিয়া স্তেপানভুনা, কিন্তু আপনি ভুলে যাচ্ছেন, ও থ্যাবড়া-মুখো, আর থ্যাবড়া-মুখো কুকুর কখনও ভালো করে কামড়ে ধরতে পারে না।
নাতালিয়া : থ্যাবড়া-মুখো? এই প্রথম শুনলুম।
লমফ : আপনাকে পাকা কথা বলছি, ওর নিচের চোয়াল উপরের চোয়ালের চেয়ে ছোট।
নাতালিয়া : বটে? আপনি মেপে দেখেছেন নাকি?
লমফ : হ্যাঁ। শিকার তাড়া করতে অবশ্য সে ভালো, কিন্তু কামড়ে ধরার বেলা ওটাকে দিয়ে বিশেষ কিছু হবে না।
নাতালিয়া : প্রথমত, আমাদের ফ্লাইয়ার খানদানি কুকুর। হার্নেস আর চিজল ওর বাপ-মা। আর আপনার ট্রাইয়ারের গায়ে এমনই পাঁচ-মেশালি রঙ যে বলাই যায় না, ওটা কোন জাতের কুকুর। বিশ্রী চেহারা, বুড়ো-হাবড়া হয়ে গিয়েছে…।
লমফ : ও বুড়ো হয়েছে বটে, কিন্তু ওর বদলে আমি আপনাদের পাঁচটা ফ্লাইয়ারও নেব না… স্বপ্নেও না। ট্রাইয়ার যাকে বলে সত্যিকার কুকুর, আর ফ্লাইয়ার… কিন্তু এ নিয়ে তর্ক করাটাই বেকুবি… আপনাদের ফ্লাইয়ারের মতো কুকুর প্রত্যেক শিকারিরই গণ্ডায় গণ্ডায় আছে। ওর জন্য পঁচিশ রুবল দিলেও বড্ড বেশি দেওয়া হয়।
নাতালিয়া : সব কথার প্রতিবাদ করার শয়তান আজ আপনার ঘাড়ে চেপেছে, ইভান ভাসিলিয়েভিচ। প্রথম আরম্ভ করলেন ভলোভি মাঠের ওপর খামকা হক বসিয়ে, আর এখন বলছেন, ট্রাইয়ার ফ্লাইয়ারের চেয়ে সরেস। কেউ কিছু বিশ্বাস করে না বললে আমার ভারি বিরক্তি বোধ হয়। যা বলেন, যা কন, আপনি খুব ভালো করেই জানেন, ফ্লাইয়ার আপনার কী যে ওর নাম ওই বোকা ট্রাইয়ারের চেয়ে শতগুণে ভালো। তা হলে খামকা উল্টোটা বলছেন কেন?
লমফ : আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি, নাতালিয়া স্তেপানা, আপনি ভাবছেন আমি কানা কিংবা আহাম্মুখ। আপনি কি কিছুতেই বুঝবেন না যে আপনাদের ফ্লাইয়ার থ্যাবড়া-মুখো?
নাতালিয়া : মিথ্যে কথা।
লমফ : ওটা থ্যাবড়া-মুখো।
নাতালিয়া : [চিৎকার করে] মিথ্যে কথা!…
লমফ : আপনি চ্যাঁচাচ্ছেন কেন, ম্যাডাম?
নাতালিয়া : আপনি আবোল-তাবোল বকছেন কেন? পিত্তি একেবারে চটে যায়। ট্রাইয়ারকে গুলি করে মারার সময় হয়ে গিয়েছে আর আপনি ওটাকে ফ্লাইয়ারের সঙ্গে তুলনা করছেন!
লমফ : মাফ করবেন, আমি আর এ আলোচনা করতে পারব না। আমার বুক ধড়ফড় করছে।
নাতালিয়া : আমি লক্ষ করেছি, যে শিকার সম্বন্ধে যত কম বোঝে সে-ই শিকার নিয়ে তর্কাতর্কি করে বেশি।
লমফ : মাদাম, দয়া করে চুপ করুন… আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।… [চিৎকার করে) চুপ করুন।
নাতালিয়া : আমি চুপ করব না, যতক্ষণ না আপনি স্বীকার করছেন, ফ্লাইয়ার ট্রাইয়ারের চেয়ে শতগুণে সরেস।
লমফ : শতগুণে নিরেস। ওর এতদিনে মরে যাওয়া উচিত ছিল– ওই আপনাদের ফ্লাইয়ারের কথা বলছি। ওহ, আমার মাথাটা… আমার চোখ দুটো… আমার কাঁধটা…
নাতালিয়া : আর আপনাদের ওই হাবা ট্রাইয়ারটা আমাকে তার মৃত্যু-কামনা করতে হবে না; ওটা তো আধমরা হয়েই আছে।
লমফ : (কেঁদে কেঁদে] চুপ করুন। আমার বুকটা যে ফেটে যাচ্ছে। নাতালিয়া; আমি চুপ করব না।
[ চুবুকফের প্রবেশ]
চুবু : এখন আবার কী?
নাতালিয়া : আচ্ছা বাবা, তুমি খোলাখুলি বল তো, ধর্ম সাক্ষী করে বল তো কোনটা সরেস আমাদের ফ্লাইয়ার, না ওঁর ট্রাইয়ার?
লমফ : স্তেপান স্তেপানভি, স্যার, আপনার পায়ে পড়ছি, মাত্র একটি কথা আমাদের বলুন, ফ্লাইয়ার থ্যাবড়া-মুখো, কিংবা থ্যাবড়া-মুখো নয়? হ্যাঁ কি না?
চুবু : হলেই-বা? যেন তাতে কিছু এসে-যায়! যাই বল, যাই কও, ওর মতো কুকুর তামাম জেলাতেও একটা নেই, আর-যা-সব-কী-সব।
লমফ : কিন্তু আমার ট্রাইয়ার ওর চেয়ে সরেস। নয় কি? ধর্ম সাক্ষী করে বলুন।
চুবু : ওরকম মাথা গরম করো না, বাছা আমার… বুঝিয়ে বলছি আমি… তোমার ট্রাইয়ারের বিস্তর সদগুণ আছে, কেউ অস্বীকার করবে না– জাতে ভালো, পাগুলো জোরদার, গড়ন চমৎকার আর-যা-সব-কী-সব। কিন্তু হক্ কথা যদি শুনতে চাও, বাছা, তবে বলি ওর দুটো মারাত্মক খুঁত আছে– সে বুড়ো হয়ে গিয়েছে আর তার প্যাঁচা-নাক।
লমফ : মাফ করবেন, আমার বুক ধড়ফড় করছে … কিন্তু আসলে ব্যাপারটা কী সেইটে দেখা যাক… আপনার হয়তো স্মরণ থাকতে পারে, আমরা যখন মারুসৃকিনের মাঠে শিকার করতে গিয়েছিলুম, আমার ট্রাইয়ার কাউন্টের স্পটারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমানে সমানে ছুটেছিল, আর আপনাদের ফ্লাইয়ার নিদেনপক্ষে পাকি আধটি মাইল পিছনে পড়ে ছিল।