চুবু : আদালতে? আপনি আদালতে যান না, স্যার, আর-যা-সব-কী-সব। যান না, যান। আমি আপনাকে বিলক্ষণ চিনি–এতদিন ধরে শুধু অপেক্ষা করেছিলেন আদালতে যাবার জন্য, একটা মোকা পাওয়ার আর-যা-সব-কী-সব। তুচ্ছ জিনিস নিয়ে মাতামাতি করা– ওই তো তোমাদের স্বভাব। তোমাদের পরিবারের সব ক-জনাই মামলাবাজিতে ওস্তাদ! সব কটা।
লমফ : দয়া করে আমার পরিবারের লোককে অপমান করবেন না। লমগুষ্টির সবাই সন্তান। আপনার কাকার মতো তহবিল তছরুপের দায়ে কাউকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি।
চুবু : লমফ পরিবারের সব কটা বদ্ধ পাগল!
নাতালিয়া : সব কটা সাকুল্যে!
চুবু : তোমার ঠাকুরদা ছিলেন পাঁড় মাতাল, আর তোমার ছোট মাসি নাতাসিয়া মিহাইলভনা–-হ্যাঁ, হ্যাঁ, একদম খাঁটি কথা… এক রাজ-মিস্ত্রির সঙ্গে পালিয়ে যায়, আর-যা-সব-কী-সব।
লমফ : আর আপনার মা ছিলেন কুঁজো। হাত দিয়ে বুক চেপে ধরে আমার বুকের সেই বেদনাটা চিলিক মারছে… সব রক্ত আমার মাথায় উঠে গেছে… হে ভগবান, জল, জল!
চুবু : তোমার বাবা ছিলেন জুয়াড়ি আর পেটুকের হদ্দ!
নাতালিয়া : তোমার পিসি ছিলেন একটি সাক্ষাৎ নারদ গাঁ উজাড় করলে ওঁর জুড়ি মেলা ছিল ভার!
লমফ : আমার বাঁ পা-টা অবশ হয়ে গিয়েছে… আর আপনার পেটে জিলিপির প্যাঁচ… ওঃ, আমার বুকটা গেল… আর সবাই জানে, নির্বাচনের আগে আপনি.. আমার চোখের সামনে বিজলি খেলে যাচ্ছে.. আমার টুপিটা গেল কোথায়?
নাতালিয়া : এসব ছোটলোকমি! ধাপ্পাবাজি। নোংরামির চূড়ান্ত।
চুবু : আর তুমি কুচুটে, ভণ্ড, ছোটলোক। হ্যাঁ, তা-ই।
লমফ : হ্যাটটা পেয়েছি…ও আমার বুকের ভিতরটা… কোন দিক দিয়ে বেরুব? দরজাটা কোথায়? ওহ্, আমি আর বাঁচব না… আমার পা যে আর নড়ছে না। (দরজা পর্যন্ত গমন)।
চুবু : লেমকে পিছন থেকে চেঁচিয়ে আমার বাড়িতে আর কখনও পা ফেলবে না।
নাতালিয়া : আদালতে যান। আমরাও দেখে নেব!
[টেলতে টলতে লমফের প্রস্থান]
চুবু : জাহান্নামে যাক। উত্তেজনার সঙ্গে পায়চারি)।
নাতালিয়া : এ রকম একটা ছোটলোক দেখেছ কখনও? এর পরও লোকে বলে প্রতিবেশীর ওপর ভরসা রাখতে!
চুবু : আস্ত একটা সঙ! বদমাইশ!
নাতালিয়া : পিচেশ! অন্যের জমি বেদখল করে উল্টো দেয় গালাগাল?
চুবু: সৃষ্টিছাড়া ব্যাটা চক্ষুশূল জানো, ব্যাটার বেয়াদপি কতখানি? এখানে এসেছিল প্রস্তাব পাড়তে, আর-যা-সব-কী-সব! বিশ্বাস হয় তোমার প্রস্তাব করতে?
নাতালিয়া : কিসের প্রস্তাব?
চুবু : হ্যাঁ, ভাবো দিকিনি, এসেছিল তোমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব নিয়ে।
নাতালিয়া : বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আমাকে বিয়ে করতে? আমাকে আগে বললে না কেন?
চুবু : তাই তো ধড়াচুড়ো পরে এসেছিল! বাঁদর! খাটাশ!
নাতালিয়া : আমাকে বিয়ে করতে? বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে? ও! [চেয়ারে পতন শুঙরে শুঙরে] ওকে ডেকে নিয়ে এস। ওকে ডেকে নিয়ে এস। ও!–ডেকে নিয়ে এস।
চুবু : কাকে ডেকে নিয়ে আসব?
নাতালিয়া : শিগগির করো, জলদি যাও। আমি যে ভিরমি যাব। ওকে ডেকে নিয়ে এস। [ছন্নের মতো আর্তরব]
চুবু : কী বলছ! কী চাও তুমি? দু হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে] এ কী অভিসম্পাত! আমি বন্দুকের গুলিতে মরব। আমি নিজের হাতে ফাঁস পরব। সবাই মিলে আমার সর্বনাশ করেছে।
নাতালিয়া : আমি মরে যাচ্ছি। ওকে ডেকে নিয়ে এস।
চুবু : বাপস! যাচ্ছি, যাচ্ছি। ওরকম হাউমাউ করো না। [ধাবমান]
নাতালিয়া : [একা, গুঙরে গুঙরে] আমরা কী করে বসেছি! ওগো, ওকে ডেকে নিয়ে এস, ফিরিয়ে নিয়ে এস।
চুবু : (দ্রুতপদে প্রত্যাবর্তন) এখুনি আসছে ও আর-যা-সব-কী-সব। জাহান্নামে যাক ব্যাটা। আখ! তুমি ওর সঙ্গে নিজে কথা বল; আমার দ্বারা হবে না, পষ্ট বলে দিলুম।
নাতালিয়া : (গুঙরে গুঙরে] ওকে ডেকে নিয়ে এস!
চুবু : [চিৎকার করে] ও আসছে, আসছে, তোমায় বলছি তো। হে ভগবান, আইবুড়ো মেয়ের বাপ হওয়া কী গব্বযন্তনা! আমি আমার গলায় দা বসাব। হ্যাঁ, আলবৎ। আমি আমার গলাটা কেটে ফেলব। আমরা লোকটাকে গালাগাল দিয়েছি, অপমান করেছি, লাথি মেরে বাড়ি থেকে খেদিয়ে দিয়েছি– আর এসবের মূলে তুমি– তুমিই করেছ এসব।
নাতালিয়া : না, তুমি।
চুবু : ও! এখন সব দোষ আমার! আর কী শুনতে হবে তার পর? [চুবুকফের প্রস্থান
[লমফের প্রবেশ]
লমফ : [অবসন্না] আমার বুক ভীষণ ধড়ফড় করছে… আমার পা অবশ হয়ে গিয়েছে… বাঁ পাশটায় অসহ্য যন্ত্রণা…
নাতালিয়া : আমাদের মাফ করুন, ইভান ভাসিলিয়েভিচ, আমরা ঝোঁকের মাথায়,.. আমার এখন মনে পড়ছে, ভলোভি মাঠ সত্যিই আপনার।
লমফ : আমার বুকটায় যেন হাতুড়ি পিটোচ্ছে.. মাঠটা আমার… আমার দুটো চোখ করকর করছে…
নাতালিয়া : হ্যাঁ, মাঠটা আপনার, আপনারই… বসুন (উভয়েরই উপবেশন] আমাদেরই ভুল হয়েছিল।
লমফ : আমার কাছে এটা ন্যায়-অন্যায়ের কথা… জমিটার আমি কোনও মূল্য দিইনে, কিন্তু ন্যায়ের মূল্য আমি দিই…
নাতালিয়া : সত্যিই তো ন্যায়-অন্যায় বোধের কথা… ওসব বাদ দিন… অন্য কথা পাড়ুন।
লমফ : বিশেষত আমার কাছে যখন প্রমাণ রয়েছে। আমার পিসিমার ঠাকুরমা আপনার বাবার ঠাকুরদার চাষাদের…।
নাতালিয়া : হয়েছে, হয়েছে, ওসব কথা তো হয়ে গিয়েছে… (স্বগত) কী করে আরম্ভ করব, বুঝতে পারছিনে… লেমফকে) আপনি কি শিগগিরই শিকারে বেরুচ্ছেন?