নাতালিয়া : ঠাকুদ্দা, ঠাকুমা, পিসি… আমার মাথায় ওসব কিছুই ঢুকছে না। মাঠটা আমাদের, ব্যস!
লমফ : ওটা আমার।
নাতালিয়া : ওটা আমাদের। আপনি ঝাড়া দু দিন ধরে তর্ক করুন, যদি সাধ যায় পনেরোটা ধড়াচুড়ো সর্বাঙ্গে চড়ান, কিন্তু তবু ওটা আমাদেরই, আমাদেরই, আমাদেরই।… আপনার জিনিস আমি চাইনে, কিন্তু যে জিনিস আমার সেটা আমি হারাতে চাইনে… আপনার যা ইচ্ছে তাই ভাবতে পারেন।
লমফ : ও মাঠ আমি চাইনে, নাতালিয়া স্তেপানভুনা, কিন্তু এটা হচ্ছে ন্যায়-অন্যায়ের কথা। আপনি যদি চান তবে এটা আমি আপনাকে উপহার দিতে পারি।
নাতালিয়া : কিন্তু ওটা যদি বিলিয়ে দিতে হয় তো সে হক্ক তো আমার কারণ ওটা তো আমার জিনিস। আপনাকে খোলাখুলি বলছি, ইভান ভাসিলিয়েভিচ, আমার কাছে সব-কিছু বড়ই আজগুবি মনে হচ্ছে। এতদিন অবধি আমরা আপনাকে ভালো প্রতিবেশী বলেই মনে করেছি, আমাদের বন্ধুরূপেই আপনাকে গণ্য করেছি। গেল বছরে আমরা আপনাকে আমাদের গম-মাড়াইয়ের কলটা দিলুম; ফলে আমাদের আপন গম তুলতে তুলতে নভেম্বর হয়ে গেল। আর এখন আপনি আমাদের সঙ্গে এমন ব্যবহার আরম্ভ করলেন যেন আমরা রাস্তার বেদে। আমাকে উপহার দিচ্ছেন আমার নিজের জমি। কিছু মনে করবেন না, কিন্তু এটা কি প্রতিবেশীর আচরণ? আমি বলব, এটা রীতিমতো বেয়াদবি যদি শুনতেই চান…।
লফম : আপনি বলতে চান, আমি তছরুপ করি! আমি কখনও অন্যের জিনিস চুরি করিনি, ম্যাডাম, আর কেউ এ কথা বললে আমি কিছুতেই সেটা বরদাস্ত করব না… দ্রুতগতিতে জগের কাছে গমন ও জলপান] ভলোভি মাঠ আমার!
নাতালিয়া : কচু। ওটা আমাদের।
লমফ : ওটা আমার।
নাতালিয়া : ডাহা মিথ্যে। আপনাকে আমি প্রমাণ করে দিচ্ছি। আজই আমি আমার লোকজনকে ওই মাঠে ঘাস কাটতে পাঠাচ্ছি।
লমফ : কী বললেন?
নাতালিয়া : আমার লোকজন আজই ওখানে কাজ করবে।
লমফ : আমি ওদের লাথি মেরে খেদিয়ে দেব।
নাতালিয়া : আপনার সে মুরোদ নেই।
লমফ : [বুক আঁকড়ে ধরে] ভলোভি মাঠ আমার! এই সামান্য কথাটা বুঝতে পারছেন না? আমার!
নাতালিয়া : দয়া করে চাঁচাবেন না। আপন বাড়িতে বসে চাঁচাতে চাঁচাতে আপনার দম বন্ধ হয়ে যাক, কিন্তু এখানে বাড়াবাড়ি করবেন না।
লমফ : আমার বুকের ভিতর যদি ওরকম মারাত্মক ব্যথা আর ধড়ফড়ানি না থাকত, ম্যাডাম, আমার রগদুটো যদি দপদপ না করত, আমি তা হলে আপনার সঙ্গে অন্যভাবে কথা বলতুম। [চিৎকার করে) ভলোভি মাঠ আমার!
নাতালিয়া : আমাদের।
লমফ : আমার!
নাতালিয়া : আমাদের!
লমফ : আমার!
[চুবুকফের প্রবেশ]
চুবুকফ : ব্যাপার কী? তোমরা চ্যাঁচাচ্ছ কেন?
নাতালিয়া : বাবা, তুমি এই ভদ্রলোককে একটু বুঝিয়ে বল না, ভলোভি মাঠটা কার ওঁর, না আমাদের!
চুবু: [লমফকে] মাঠটা আমাদের, বাবা।
লমফ : মাফ করবেন, স্যার; ওটা আপনাদের হল কী করে? আপনি অন্তত হক্কের বিচার করবেন। আমার পিসির ঠাকুরমা আপনার ঠাকুরদার চাষাদের জমিটা কিছুদিনের জন্য লাখেরাজ ভোগ করতে দেন। চাষারা প্রায় চল্লিশ বছর ধরে সেটা ভোগ করে। ফলে আস্তে আস্তে ওদের বিশ্বাস হয়ে যায় ওটা ওদেরই। কিন্তু পরে যখন নতুন বন্দোবস্ত হল…। কিছু মনে করো না, বাবা… তুমি ভুলে যাচ্ছ যে, ওই জমিটার স্বত্ব আর-যা-সব-কী-সব নিয়ে ঝামেলা ছিল বলেই চাষারা তোমার ঠাকুরমাকে কোনও খাজনা দেয়নি, আর-যা-সব-কী-সব… আর এখন গাঁয়ের কুকুরটা পর্যন্ত জানে যে ওটা আমাদের হ্যাঁ, হ্যাঁ, তাই। তুমি নিশ্চয়ই জরিপের ম্যাপগুলো দেখনি।
লমফ : কিন্তু আমি আপনাকে প্রমাণ করে দেখাব, জমিটা আমার।
চুবু : সে, বাছা, তুমি পারবে না।
লমফ : নিশ্চয় পারব।
চুবু : কিন্তু চ্যাঁচাচ্ছ কেন, লক্ষ্মীটি। চাঁচালেই কি কোনও জিনিস প্রমাণ হয়? তোমার যা হক্কের মাল তা আমি চাইনে, কিন্তু যে জিনিস আমার সেটা ছাড়বার বাসনা আমার কণামাত্র নেই। ছাড়ব কেন? অবশ্য আখেরে যদি তাই দাঁড়ায়, অর্থাৎ তুমি যদি ওই জমি নিয়ে ঝগড়া-কাজিয়া আরম্ভ করতে চাও, আর যা-সব-কী-সব, তা হলে আমি বরঞ্চ আমার চাষাদের ওই জমিটা বিলিয়ে দেব, কিন্তু তোমাকে না। এই হল পাকা কথা। লমফ : আমি তো বুঝতে পারলুম না। পরের সম্পত্তি বিলিয়ে দেবার কী হক্ক আপনার?
চুবু : আমার কী হক আছে, না আছে সেটা স্থির করার ভার দয়া করে আমার হাতে ছেড়ে দাও। আর শোনো, ছোকরা, আমি এরকম ধরনের কথা বলা আর–সব-কী-সব শুনতে অভ্যস্ত নই… আমার বয়স তোমার ডবল, তবু তোমায় অনুরোধ করছি ওরকম মাথা গরম করে, আর-যা-সব-কী-সব ওরকম ধারা আমার সঙ্গে কথা কয়ো না…।
লমফ : না। আপনারা ভেবেছেন আমি একটা আস্ত গাড়ল আর আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছেন। আমার জমি বলছেন আপনাদের আর তার পর আশা করছেন আমি সুবোধ ছেলেটির মতো শান্ত কণ্ঠে আর পাঁচজনের মতো কথাবার্তা বলব। ভালো প্রতিবেশী এ-রকম কথা বলে না, স্তেপান স্তেপানভিচ মশাই! আপনি প্রতিবেশী নন, আপনি পরের জমির বেদখলকারী।
চুবু : মানে? কী বললে?
নাতালিয়া : বাবা, এখখুনি মজুরদের মাঠে ঘাস কাটতে পাঠাও।
চুবু : (লমফকে] আপনি আমাকে কী বলছিলেন, স্যার?
নাতালিয়া : ভলোভি মাঠ আমাদের আর ওটা আমি ছাড়ব না, ছাড়ব না, ছাড়ব না।
লমফ : সে আমরা দেখে নেব। আমি আদালতে সপ্রমাণ করে ছাড়ব ও মাঠ আমার।