আমার কোনও পাঁড় নাৎসি বন্ধু ছিল না, একজন মোলায়েম নাৎসির সঙ্গে বেশ কিছুটা হৃদ্যতা হয়েছিল। তার সন্ধান পেলুম না। তার-আমার দুজনার অন্য এক বন্ধু বলল– খুব সম্ভব মারা গিয়েছে।
তবু আমি প্রাচীন পরিচয়ের একাধিক জর্মন মিলিত হলে কথার মোড় ওইদিকে ঘোরাতুম। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হত না। পাঁচ মিনিটের ভেতর সবাই যুদ্ধ বাবদে আপন আপন অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে শুরু করত। তাতে আর যা হোক, হিটলার-দর্শনের ওপর নতুন কোনও আলোকপাত হত না।
একদা যারা কট্টর নাৎসি ছিল তাদের বৃহৎ অংশ নিশ্চয়ই নাৎসিবাদ ত্যাগ করেছে। কিন্তু বেশকিছু নাৎসি এখনও গোপনে ঘাপটি মেরে বসে আছে চিন্তার জগতে; বাইরে অবশ্য আর পাঁচজনের মতো তারাও দরকার হলে হিটলারের নিন্দা করে, কারণ নাৎসি-উইচ-হান্টিং, অর্থাৎ ডি-নাৎসিফিকেশন এখনও শেষ হয়নি (এই তো মাস তিনেক পূর্বে ইয়োরোপ-বিখ্যাত এক শহর-প্ল্যানার জর্মনকে ধরা হয়েছে সে নাকি ১৯৪৫ সালে প্রায় ত্রিশজন ইটালিয়ান মজুরকে গুলি করে মারার আদেশ দেয়)*। [*১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে জর্মনিতে একটি কেন্দ্রীয় বিশেষ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। এর একমাত্র কাজ পাড় নাৎসিদের ধরে সাজা দেওয়া। এর পূর্বে জর্মনির ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশে সেখানকার সাধারণ বিচারালয়ে এদের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা চলত। এদের প্রধান অসুবিধা : যুদ্ধ শেষ হওয়ার কয়েক মাস পূর্ব থেকে ঘড়েল নাৎসিরা খাঁটি, অকৃত্রিম সরকারি পাসপোর্ট জাল নামে তৈরি করিয়ে নেয়। এবং এখন আপন বাসভূমি থেকে– জর্মনিতেই গা-ঢাকা দিয়ে বসবাস করছে। দ্বিতীয় অসুবিধা : একাধিক পরদেশি রাষ্ট্র তাদের দেশে আশ্রয়প্রাপ্ত নাৎসিদের ধরে ধরে জর্মনিতে ফেরত দেয় না। হালে জর্মনির বেতার কেন্দ্রের প্রশ্নে এই কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানের চিফ জাস্টিস বলেন, এই প্রতিষ্ঠান কবে গুটনো হবে তার স্থিরতা নেই।] এরা পুনরায় এক নতুন হিটলারের পিছনে জড়ো হবে সে সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আমার মনে হয়, গুরুবাদ জিনিসটা একবার শিকড় গাড়লে সমূলে সম্পূর্ণ বিনাশ পায় না– হিটলারকে জর্মনি যেভাবে পূজা করেছে আমাদের চরম কর্তাভজারাও এতখানি করেনি।
উপস্থিত এদের কথাও কেউ শুনবে না– অবশ্য সাহস তাদের এখনও হয়নি, হতে হতে বেশ কিছুদিন লাগবে। কারণ জর্মনি এখনও অবসন্ন। রাজনৈতিক উত্তেজনা তার যথেষ্ট হয়ে গিয়েছে।