রনিতা এভাবে চলে যাওয়ায় শুভময় অবশ্য প্রথমে ক্রুদ্ধই হয়েছিল। তারপর ধীরে ধীরে তার ক্রোধ অভিমানে রূপান্তরিত হয়েছে রনিতা কেন তাকে এভাবে ভুল বুঝলল! সেও তো অনেক কথা শোনাতে পারতো রনিতাকে। বিশেষত তার দুদিন আগে সেই বিকেলে বাড়ি ফিরে একজন অন্য পুরুষকে তার ফ্ল্যাটে দেখার পর।
কথাটা মনে পড়তেই বুকের মধ্যে আবার একাট উথাল পাথাল শুরু হয় শুভময়ের। তার মনে হয় তাহলে কি রনিতার এই চলে যাওয়াটা একটা অজুহাত? আসলে বারে বাড়ি গিয়ে……
ঠিক সেই মুহূর্তে ফোনটা বেজে ওঠে। ওরফে রিয়া।
–জামাইবাবু, কি করছেন?
–এ্যাই…..মানে…….
নিশ্চয়ই কারুর ধ্যান করছে, হয় দিদির, না হয় আমার?
–তুমি থামো তো রিয়া, তোমার জন্যেই আজ……
শুভময় তার কথা শেষ করার আগেই রিয়া বাঁধ ভাঙা হাসিতে ফেটে পড়ে, তারপর হাসতে হাসতে বলে, তাহলে স্বীকার করছেন তো আপনার হার হয়েছে?
–তার মানে?
তার মানে বুঝতে পারছে তো মশাই। আপনি চ্যালেঞ্জ করেছিলেন আপনার আর দিদির বোঝাপড়া কেউ ভাঙতে পারবে না। গত পাঁচবছর আপনাদের মধ্যে কোন দাম্পত্য কলহ হয় নি। আপনার সে গুমোর ভাঙতে পেরেছিলো। জামাইবাবু মাত্র সাতদিনের মধ্যে!
—রিয়া! তুমি…..
—খুব হয়েছে। এবার বাকি কাজটা আমায় করতে দিন। আগামীকাল রবিবার ছুটির দিন আপনার শ্বশুরবাড়িতে একবার আসুন।
-আমি…..মানে…….
–আপনার কোন প্রেসটিজ যাবে না মশাই। দিদিকে আমি সব বলেছি। আগামীকাল আপনি আমাদের বাড়িতে এলে আপনাদের ভাঙা বোঝাপড়া জোড়া লাগাবার দায়িত্ব আমার। ভাল কথা, তারকাকেও আসতে বলেছি।
—তারক! নামটা শুনেই শুভময়ের মেজাজটা কটাং করে উঠলো।
ফোনের ওধার থেকে তা ঠিক বুঝতে পারলো রিয়া। সঙ্গে সঙ্গে আর এক ঝলক হেসে বললো—তারকাকে সেদিন বিকেলে আপনার ফ্ল্যাটে আমিই পাঠিয়ে ছিলাম। কারণ সন্দেহের ধোঁয়াটা দু তরফে না দিলে দাম্পত্য কলহের খেলাটা জমতে না।
—এ্যাঁ! রিয়া…তুমি……তুমি…..
প্রচণ্ড বিস্ময়ে শুভময়ের কথা আটকে যায়। রিয়া হাসতে হাসতে ফোনের রিসিভার রাখে।
.
বোধহয়? এ গল্পের শেষটুকু আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
তবে একটা তথ্য দিতে পারি। পরদিনই শুভময় শ্বশুরবাড়ি গিয়ে রনিতাকে নিয়ে নিজের ফ্ল্যাটে ফিরেছিল এবং আসার আগে পরের সপ্তাহে তাদের শুভ বিবাহ বার্ষিকীতে রিয়া, বঙ্কিম এবং তারককে আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছিল।
অতঃপর শুভময় রনিতার ষষ্ঠ বিবাহ বার্ষিকীর পার্টিটা যা জমেছিল না— দারুণ!