সুতরাং পরের দিন রিয়া যখন শুভময়কে ফোন করে দিদির রিএ্যাকসানটা জানতে চাইলো, শুভময় বললো,-রিয়া সুন্দরী, তোমার চালাকি এক্ষেত্রে ব্যর্থ। তোমার দিদির বিশ্বাস তুমি টলাতে পার নি।
–বটে! বটে! রিয়া টেলিফোনের ওপার থেকে হেসেছে, জামাইবাবু, আপনাদের মতো পুরুষদের সাধ্য নেই মেয়েদের মন এত সহজে বোঝে।
–তার মানে তুমি কি বলেত চাও রিয়া?
-বলছি মশাই, রিয়া ও রফ থেকে হাসতে হাসতে বলে, আপনারা পুরুষরা যখন কোন মেয়েকে ভালবাসেন তখন তার সম্পর্কে একেবারে অন্ধ হয়ে যান। আর এ সুযোগ মেয়েরা কড়ায় গণ্ডায় উসুল করে নেয়।
—তোমার কথা আমি কিছু বুঝতে পারছি না। শুভময় জিভ দিয়ে ঠোঁটটা একবার চেটে নিয়ে বলে।
–তার মানে আপনার বিশ্বাসটাও মাঝে মাঝে যাচাই করে নেয়া উচিত মশাই।
—তুমি কি বলতে চাও?
—আমি বলতে চাই এই যে আপনি প্রতিদিন অফিস ফেরত রাত নটার পর বাড়ি ফেরেন আর দিদি ব্যাপারটা নিয়ে টু শব্দ করে না, এটা কখনও আপনার অস্বাভাবিক মনে হয়নি।
—আমি তো তোমাকে আগেই বলেছি, আমাদের দুজনের মধ্যে বোঝাপড়া…
কিন্তু এ বার আর কথা শেষ করতে পারে না শুভময়, তার কণ্ঠস্বর রিয়ার বাঁধ ভাঙা হাসির ঢেউ এ ঢাকা পড়ে। হাসি থামিয়ে রিয়া বলে, ওই সময়টা সত্যি সত্যি আপনার স্ত্রী, মানে আমার দিদির কেমন কাটে জানতে চেয়েছেন? এর মধ্যে যদি আপনাদের একটি সন্তান থাকত, তা হলে না হয়….
তা অবশ্য ঠিক। তাদের স্বামী স্ত্রীর দুজনের সংসার। এই পাঁচ বছরেও ওদের সংসারে কোন সন্তান আসেনি, নিতলার সাড়ে ছশ স্কোয়ার ফুট ফ্ল্যাটে শুধু ওরা দুজন। একটি ঠিকে ঝি সকাল সন্ধে কাজ করে চলে যায়। শুভময় অফিস যাবার পর। রনিতা সম্পূর্ণ একা। যতক্ষণ না শুভময় ঘরে ফেরে।
ভাবতে ভাবতে অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল শুভময়, ও রফ থেকে রিয়ার কণ্ঠস্বরে চমক ভাঙলো,—কি জামাইবাবু, কি ভাবছেন?
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুভময় বলে,—ঠিকই বলেছ রিয়া, তোমার দিদির সারাদিন বড় নিঃসঙ্গ কাটে। এবার অফিস ফেরত ক্লাবের আড়াটা ধীরে ধীরে ছাড়তে হবে।
—তা অফিস ফেরত সরাসরি বাড়ি ফিরছেন কবে? ও তরফে রিয়ার কণ্ঠে কৌতুকের সুর।
–আজ…না, আজ হবে না, আগামীকালই যাব। রনিতার কথাটাও ভাবা উচিত। সে নিজে অবশ্য কোনদিন আমার ফেরা নিয়ে কোন অভিযোগ জানায়নি, তবু…
—তাহলে আগামীকাল থেকেই আপনি অফিস ফেরত সরাসরি বাড়ি ফিরছেন, তাই তো।
আর দু একটা কথার পর রিয়া লাইন ছাড়ে।
রিয়া টেলিফোনটা ছাড়ার পরও শুভময় রিয়ার কথাগুলো অনেকক্ষণ বসে ভাবে। তার এই শ্যালিকাটি অবশ্য বরাবরই ফাজিল, ওর সব কথা ধরা যায় না, তবে এটা ঠিক, স্ত্রী রনিতাকে তার কিছু সময় দেয়া দরকার।
.
পরদিন অফিস ফেরত আর ক্লাব ঘরে গিয়ে ঢুকলে না শুভময়, বন্ধুদের হাঁক ডাক উপেক্ষা করেই বাড়ির পথ ধরলো। বিয়ের পাঁচ বছর বাদে এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটলো শুভময়ের জীবনে।
সন্ধ্যে ছটার মধ্যেই ফ্ল্যাটের দরজা পৌঁছে গেল শুভময়।
বদ্ধ দরজার ডোর বেল বাজালো-একবার…… দুবার…..ফ্ল্যাটের দরজা খুলে দাঁড়ালো রনিতা। সামনে শুভময়কে দেখে রনিতার চক্ষু চড়কগাছ,একি গো, আজ যে এত তাড়াতাড়ি। শরীরটরীর খারাপ হয়নি তো! রনিতার আর একথা ভাবায় দোষ কি? সত্যিই তো, গত পাঁচ বছরে এমনি সে কোনদিনই দেখে নি। অফিস ফেরত তাসের নেশা ছেড়ে ঘরে ফেরা যে দুঃসাধ্য সে কথা নিজেই কবুল করেছে শুভময়।
রনিতা যখন স্বামীকে দেখে এসব কথা ভাবছে, শুভময় তখন দেখছে পাশেই জুতোর জায়গায় একজোড়া অপরিচিত জুতো। এসময়ে বাড়িতে কি কেউ এসেছে? কোন পুরুষ?
—এস। ভেতরে এস।
—হ্যাঁ…ইয়ে, কেউ কি এসেছে? কথাটা প্রথমেই জিগ্যেস না করে পারলো না শুভময়।
—হ্যাঁ গো। আমাদের রিয়ার হবু বর বঙ্কিমের এক বন্ধু তারক। বললো, এই পথ দিয়ে যাচ্ছিল, হঠাৎ আমাদের কথা মনে হওয়ায় দেখা করতে এসেছে।
বলতে বলতে ওরা সামনের ঘরটায় পৌঁছে গেছে। সেখানে সোফায় বসে রয়েছে বস্ত্র ৩০ বয়সি এক সুদর্শন যুবক। ওকে আগে কোনদিন দেখেছে বলে তো মন পড়ছে না শুভময়ের।
শুভময়কে দেখে যুবকটি উঠে দাঁড়িয়ে নমস্কার জানাল, এখানে এসে দিদির কাছে যখন শুনলাম আপনি রাত নটার আগে বাড়ি ফেরেন না সত্যি বলতে কি খুব হতাশ লাগছিল। আপনি এসে পড়েছেন খুব ভাল হলো।
ওর মুখে ওই আদিখ্যেতার মতো কথাগুলো শুনে অজান্তেই শুভময়ের গাটা যেন জ্বলে গেল। দিদি না ছাই! এমন ধান্দাবাজি কথা অনেক শুনেছে শুভময়।
শুভময় সারাক্ষণ কোন কথা বললো না। তারকও বোধকরি শুভময়ের মনোভাব কিছুটা আঁচ করতে পারলো তাই আর বেশিক্ষণ বসলো না। কোন রকমে এক কাপ চা আর দুটো বিস্কুট খেয়ে বিদায় নিল।
রনিতাও তার ভাবভঙ্গি দেখে চুপ মেরে গেছে। রাত দশটা পর্যন্ত স্বামী স্ত্রী কেউ কোন কথা বললো না। তারপর খাওয়ার টেবিলে বসে মুখোমুখি খেতে খেতে রনিতা বললো, সত্যি কথাটা বলতো, তারক আসায় তুমি কি খুশি হও নি?
শুভময় রুটির টুকরো মুখে দিয়ে বললো—ওকি এখানে প্রায়ই আসে?
–তার মানে! রনিতা থমকে গিয়ে বললো, তুমি আমায় সন্দেহ করছ?
—সন্দেহের কোন কারণ আছে কিনা সেটা তুমি নিজেই জান।
সে রাত্রে আর দুজনের মধ্যে কোন কথা হলো না। খাওয়া দাওয়া সেরে দুজনেই বিছানায় শুয়ে পড়লো দুজনের বিপরীত দিকে মুখ করে। গত পাঁচ বছরে এ দৃশ্য এই প্রথম।